করোনা মহামারির প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতি মোকাবিলায় কমনওয়েলথভুক্ত দেশসমূহের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির পথ খোঁজার তাগিদ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
সোমবার কমনওয়েলথ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিটে ভার্চুয়ালি দেয়া বক্তব্যে এই তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
এবারের সামিটের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘কমনওয়েলথ ট্রেড: দ্য লেভেল ফর ফিউচার প্রসপারিটি’।
অর্থমন্ত্রী বলেন, মহামারিজনিত কারণে গত বছর বৈশ্বিক অর্থনীতি যেখানে ৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে, সেখানে কমনওয়েলথভুক্ত অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ।
জাতিসংঘের বাণিজ্যবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে বিশ্বে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৪২ শতাংশ। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কমনওয়েলথ অর্থনীতি ৫০ শতাংশের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
করোনা মহামারির প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশের পদক্ষেপ তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে জিডিপির ৬.২৩ শতাংশের সমান ২২ দশমিক ০৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশ এর সুফল ভোগ করে চলেছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০২০ সালের আইএমএফের অক্টোবরের রিপোর্ট অনুযায়ী, মহামারির মধ্যে অল্প কয়েকটি ইতিবাচক অর্থনীতির মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের জরিপ অনুযায়ী, মহামারি প্রতিকূলতার মধ্যেও বাংলাদেশ শীর্ষ পাঁচটি সহনশীল অর্থনীতির মধ্যে রয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ হওয়া সত্ত্বেও বিশ্ব অর্থনীতিতে কমনওয়েলথ দেশগুলোর অবদান মাত্র ১৩ শতাংশ, বৈশ্বিক সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের মাত্র ২০ শতাংশ এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যের ১৪ শতাংশ।
আন্তকমনওয়েলথ বাণিজ্যে ৫৪টি দেশের মোট বাণিজ্যে মাত্র ১৮ শতাংশ। আবার যুক্তরাজ্যের মোট বাণিজ্যের মাত্র ৯.১ শতাংশ রয়েছে কমনওয়েলথ দেশগুলোর।
তিনি বলেন, ‘এই পরিসংখ্যানগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, বাণিজ্য সম্পর্কিত কমনওয়েলথের বিদ্যমান নীতি এবং কৌশলগুলো কমনওয়েলথ দেশগুলোর জন্য সন্তোষজনক নয়।’
সপ্তদশ শতাব্দীতে ভারত উপমহাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ ছিল উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আন্তকমনওয়েলথ বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ বাড়িয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের উপায় এবং পথ খুঁজে বের করার পাশাপাশি আমরা কমনওয়েলথের গৌরবময় অতীত ফিরে পেতে পারি।’
সভায় কমনওয়েলথ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কাউন্সিলের চেয়ারম্যান লর্ড মারল্যান্ড, যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যবিষয়ক মন্ত্রী ও বাণিজ্য বোর্ডের সভাপতি এলিজাবেথ ট্রাসসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বক্তব্য রাখেন।
তাদের সবাই কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের উপায় এবং পথ খুঁজে বের করতে একসঙ্গে কাজ করার আশা করেন।