ফোনালাপে আড়ি পাতা বন্ধের নিশ্চয়তা ও ফাঁস হওয়া ঘটনাগুলোর তদন্ত চেয়ে দায়ের করা রিটের শুনানি নিয়ে আগামী রোববার আদেশের জন্য রেখেছে হাইকোর্ট।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মুস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার আদেশের জন্য ১৯ সেপ্টেম্বর দিন ঠিক করে দেয়।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। আর বিটিআরসিটির পক্ষে ছিলেন খন্দকার রেজা-ই রাকিব।
ফোনালাপে আড়ি পাতা বন্ধ চেয়ে গত ১০ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী এ রিট করেন। ওই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত আদেশের জন্য দিন ঠিক করেন। রিটে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সচিব, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যানকে বিবাদী করা হয়ে।
এর আগে গত ২২ জুন এ বিষয়ে আইনি নোটিশ দেয়া হয়েছিল। নোটিশের কোনো জবাব না পাওয়ায় রিট করা হয়েছে।
রিটকারীদের আইনজীবী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার সংলাপ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ফোনালাপ, প্রয়াত সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ও রাজশাহী মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার, ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরীসহ ২০১৩ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সংঘটিত ২০টি আড়ি পাতার ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে রিট আবেদনে।’আড়ি পাতার এসব ঘটনা বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে বহুল প্রচারিত এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। অথচ সর্বজনীন মানবাধিকার সনদপত্র, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী পৃথিবীর সব আধুনিক ব্যবস্থায় ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার স্বীকৃত ও সংরক্ষিত।
এমনকি বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদে চিঠিপত্র ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের গোপনীয়তা সংরক্ষণ নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এ অধিকার সংবিধানের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে।
আইনজীবী শিশির মনির বলেন, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের ধারা ৩০(চ) অনুযায়ী, টেলিযোগাযোগের গোপনীয়তা রক্ষার দায়িত্ব এই কমিশনের। কিন্তু খেয়াল করা যাচ্ছে যে, এ ধরনের ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনা অহরহ ঘটছে।
২০১৯ সালের ২৮ আগস্ট বিচারপতি মো. শওকত হোসাইন, বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ এস এম আবদুল মবিনের বৃহত্তর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে একটি রায় দেয়।
ওই রায়ে বলা হয়, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন ও টেলিফোন সেবা প্রদানকারী কোম্পানিগুলোর দায়িত্ব সর্বাধিক। সংবিধান ও আইন অনুযায়ী ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সংরক্ষণ তাদের দায়িত্ব। তারা আইনের বিধান ব্যতিরেকে গ্রাহকদের ব্যক্তিগত যোগাযোগের তথ্য প্রদান করতে পারে না।
রিটকারী ১০ আইনজীবী হলেন- মুস্তাফিজুর রহমান, রেজওয়ানা ফেরদৌস, উত্তম কুমার বনিক, শাহ নাবিলা কাশফী, ফরহাদ আহমেদ সিদ্দীকী, মোহাম্মদ নওয়াব আলী, মোহাম্মদ ইবরাহিম খলিল, জি এম মুজাহিদুর রহমান (মুন্না), ইমরুল কায়েস ও একরামুল কবির।