উড়তে থাকা পুঁজিবাজারে হঠাৎ ধাক্কা। স্বল্প মূলধনি লোকসানি কোম্পানির শেয়ারদরে ব্যাপক পতনের পর দিন বেশ কিছু কোম্পানি হারিয়ে ফেলা শেয়ারদর কিছুটা ফিরে পেয়েছে। তবে বাজার নিয়ে বিভ্রান্তির প্রভাব গিয়ে পড়েছে লেনদেনে।
১০ কর্মদিবসের মধ্যে সবচেয়ে কম লেনদেন দেখল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। এক পর্যায়ে লেনদেন দুই হাজার কোটি টাকার নিচে নেমে যাওয়ার নমুনা দেখা গেলেও শেষ আধা ঘণ্টায় ক্রয়চাপে শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।
গত ৩১ আগস্টের পর সর্বনিম্ন লেনদেন হলো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে। আগের দিনের তুলনায় লেনদেন কমেছে ৭০০ কোটি টাকার মতো।
আগের দিন ৫৬ পয়েন্ট সূচকের পতনের দিন লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৭০৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। পরের দিন সূচক ১৬ পয়েন্ট যোগ হওয়ার দিন লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৪০ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। লেনদেন কমেছে ৬৬৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
গত কয়েক মাস ধরে স্বল্প মূলধনী কোম্পানির শেয়ারগুলোর অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির মধ্যে রোববার ঢালাও পতনে তৈরি হয় উদ্বেগ। ৫৪টি কোম্পানির শেয়ারদর কমপক্ষে ৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমে, যার মধ্যে ১০টির শেয়ারদর কমে প্রায় ১০ শতাংশ।
একদিনেই এরকম ঢালাও পতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তৈরি হয় উদ্বেগ। কারণ, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে শুরু করে বাজার সংশ্লিষ্ট নানা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে শক্তিশালী মৌলভিত্তির কোম্পানিতে লেনদেনের পরামর্শ আসছিল। এর মধ্যে এমন পতন এসব কোম্পানির শেয়ারে আরও পতন আনে কি না, তা নিয়ে ছড়িয়ে যায় উদ্বেগ।
সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবস সোমবার সকালে লেনদেন শুরু হতেই সূচক টানা দ্বিতীয় দিনের মতো পড়ে যায়। সকাল ১০টা ৭ মিনিটে ৩০ পয়েন্ট এবং ১০টা ৪৭ মিনিটে আগের দিনের তুলনায় ৩১ পয়েন্ট সূচক পড়ে যাওয়ায় উৎকণ্ঠা তৈরি হয়।
তবে শেষ পর্যন্ত আগের দিন দর হারিয়ে ফেলা কোম্পানিগুলো দর কিছুটা ফিরে পেতে শুরু করে এরপর থেকে।
রোববার লোকসানি কোম্পানির বড় দরপতনের কারণে সোমবারের লেনদেন নিয়ে বিশেষ আগ্রহ ছিল বিনিয়োগকারীদের মধ্যে
বেলা পৌনে ১১টা থেকে ৪০ মিনিট আবার সূচক বাড়লেও সাড়ে ১১টা থেকে সূচক আবার কমতে থাকে। তবে বেলা ১২টার কিছু সময় আগে থেকে টানা বাড়তে বাড়তে এক পর্যায়ে আগের দিন হারিয়ে ফেলা সূচকের প্রায় পুরোটাই উদ্ধার হয়ে বেলা ১টা ৭ মিনিটের দিকে।
কিন্তু পরের সোয়া এক ঘণ্টায় সূচক কেবল পড়েছে। তবে শেষ চার মিনিটে হঠাৎ করেই ১৩ পয়েন্ট বেড়ে যাওয়ার পর আগের দিনের তুলনায় ২৬ পয়েন্ট যোগ হয় সূচকে।
একদিনের ব্যবধানে দুর্বল হলো সবল
রোববার লোকসানি, স্বল্প মূলধনী কোম্পানির শেয়ারদর যেভাবে ঢালাওভাবে পড়েছিল, পরদিন সেভাবেই হলো উত্থান। বেশ কয়েকটি কোম্পানি আগের দিন যতটা দর হারিয়েছিল, ফিরে পেয়েছে ততটাই।
দিনের সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধি পাওয়া ১০টি কোম্পানির মধ্যে ৫টি ছিল লোকসানি, স্বল্প মূলধনি কোম্পানি।
ওটিসি থেকে ফেরা মুন্নু ফেবিক্সের শেয়ার দর ৯.৯২ শতাংশ বেড়ে ২৭ টাকা ২০ পয়সা থেকে হয়েছে ২৯ টাকা ৯০ পয়সায়।
মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের শেয়ার দর ৯.৯০ শতাংশ বেড়ে ২১ টাকা ২০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ২৩ টাকা ৩০ পয়সা।
বিচ হ্যাচারির দর ৯.৮৪ শতাংশ বেড়ে ২৪ টাকা ৪০ পয়সা থেকে হয়েছে ২৬ টাকা ৮০ পয়সা।
তাল্লু স্পিনিংয়ের দর ৯.১৫ শতাংশ বেড়ে ১৩ টাকা ১০ পয়সা থেকে হয়েছে ১৪ টাকা ৩০ পয়সা।
শীর্ষ ১০ কোম্পানির বাইরেও ৭.৫৭ শতাংশ বেড়েছে মিথুন নিটিংয়ের। আগের দিন ১০ শতাংশ পড়েছিল দর।
রোববার দর পতনের শীর্ষে থাকা শ্যামপুর সুগার মিলসের শেয়ার দর বেড়েছে ৬.৬৯ শতাংশ।
অলটেক্সের দর বেড়েছে ৬.৬৫ শতাংশ, ইমামবাটনের বেড়েছে ৫.৩৩ শতাংশ।
ব্যাংকে পরিবর্তনের আভাস
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ আগের তুলনায় বেড়েছে। লেনদেনও কিছুটা বেড়েছে।
ব্যাংক খাতে মোট লেনদেন হয়েছে ১৯৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১৮৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।
লেনদেনে ২টি ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে, ৫টির পাল্টায়নি। বাকি ২৭টির দর বেড়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে ঘুমিয়ে থাকা ব্যাংক খাত চাঙা হওয়ার আভাস দেখা গেল কি?
আর্থিক খাতের ২২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সাতটির দর কমেছে, ছয়টির পাল্টায়নি। বাকি ১০টির দর বেড়েছে।
এই খাতে লেনদেন হয়েছে ১৯০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
ব্যাংক খাতে প্রায় সব কটি কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধির পাশাপাশি দর বৃদ্ধির হারও তুলনামূলক বেশি। গত কয়েক মাস ধরেই দেখা যাচ্ছে, এই খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ১০ থেকে ৩০ পয়সা করে উঠানামা করে।
সোমবার সাউথবাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকের দর ৯.৮৪ শতাংশ বেড়ে ২০ টাকা ৩০ পয়সা থেকে হয়েছে ২২ টাকা ৩০ পয়সা।
এনআরবিসি ব্যাংকের দর ৫.৫১ শতাংশ বেড়ে ২৯ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩০ টাকা ৬০ পয়সা।
ইস্টার্ন ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ৪.০৬ শতাংশ। শেয়ার প্রতি দর ৩৯ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪০ টাকা ৯০ পয়সা।
উত্তরা ব্যাংকের শেয়ার দর ২৫ টাকা ২০ পয়সা থেকে ২.৩৮ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২৫ টাকা ৮০ পয়সা।
১ থেকে ২ শতাংশ পর্যন্ত ব্যাংক খাতের নয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর বেড়েছে। এগুলোর মধ্যে রূপালী ব্যাংকের ১.৫৪ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটিজ ইসলামী ব্যাংকের ১.৫৩ শতাংশ, ব্যাংক এশিয়ার ১.৪৮ শতাংশ, ওয়ান ব্যাংকের ১.৪৪ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে।
আর্থিক খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শেয়ার দর বেড়েছে ন্যাশনাল হাইজিং ফাইনান্সের দর। ৫.৮৯ শতাংশ বেড়ে শেয়ার দর ৭৪ টাকা ৬০ পয়সা থেকে হয়েছে ৭৯ টাকা।
আগের দিন প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়া উত্তরা ফাইন্যান্সের দর ৫.০৫ শতাংশ বেড়ে ৫১ টাকা ৪০ পয়সা থেকে হয়েছে ৫৪ টাকা।
ফারইস্ট ফাইনান্সের দর ৩.৩২ শতাংশ আর ফাস ফাইনান্সের দর বেড়েছে ২.৭৮ শতাংশ।
বিমায় সংশোধন, কাটিয়ে উঠেছে বস্ত্র
রোববার বিমা খাতের উচ্ছাস থাকলেও সোমবার সংশোধন এই খাতের শেয়ারদর। আগের দিন বস্ত্র খাত ব্যাপকভাবে দর হারারেও প্রায় সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। যেখানে রোববার দর পতন হয়েছিল প্রায় সব কোম্পানির।
বিমা খাতের মোট লেনদেন হয়েছে ২২০ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩৮০ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
বস্ত্র খাতের মোট লেনদেন হয়েছে ১৯৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২৭৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
আগের দিন সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া বিমা খাতের শেয়ারধারীরা সবচেয়ে বেশি হতাশ হয়েছে সোমবার
বিমা খাতে পদ্মা লাইফের শেয়ার দর বেড়েছে ৩. ৪৫ শতাংশ। সাধারণ বিমা খাতের কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে ৩.২২ শতাংশ।
সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের ২.৪৩ শতাংশ, প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের ১.২৯ শতাংশ, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে দশমিক ৯৮ শতাংশ।
বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে মেট্টোস্পিনিংয়ের ৯.৯২ শতাংশ।
এরপরই আছে বস্ত্র খাতের মুন্নু ও তাল্লু স্পিনিং। আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার দর বেড়েছে ৮.৫৭ শতাংশ।
অন্যান্য খাতের লেনদেন
ওষুধ ও রসায়ন খাতের ৩১টি কোম্পানির মধ্যে দর হারিয়েছে ১৮টির, বেড়েছে ১২টির দর।
হাতবদল হয়েছে ২২৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩২১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
প্রকৌশল খাতের ৪২টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ২৯টির, কমেছে ১২টির। লেনদেন হয়েছে ২০৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২৯৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ২৪টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৯টির, কমেছে ১০টির। লেনদেন হয়েছে ১৬৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন ছিল ২২৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের ২০টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১২টির, কমেছে ৭টির।
এই খাতে লেনদেন হয়েছে ১১০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১৪৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
বিবিধ খাতের ১৪টি কোম্পানির মধ্যে দাম কমেছে ৬টির, বেড়েছে ৮টির। হাতবদল হয়েছে ২০৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১৫৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
তথ্য প্রযুক্তি খাতের ১১টি কোম্পানিটির মধ্যে দর বেড়েছে ৭টির। একটিরও দর না কমেনি। বেড়েছে ৭টির দর। লেনদেন হয়েছে ৩৬ টাকা ১৭ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৪১ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
সূচক ও লেনদেন
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৫ দশমিক ৯৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ২১৮ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ২ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৭৮ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ২ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৩৫ পয়েন্টে।
লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা।
চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৪৪ দশমিক ৭২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ২৯ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে ৬৭ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১১৪ কোটি টাকা।