বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ট্রেনের ধাক্কায় বাবা ও দুই ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা

  •    
  • ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১২:০১

আখাউড়া রেলওয়ে থানার ওসি মাজহারুল করিম জানান, মামলার আসামি অটোরিকশাচালক শিরু মিয়া ওই দুর্ঘটনায় আহত হলে প্রথমে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে রেলক্রসিংয়ে অটোরিকশায় ট্রেনের ধাক্কায় বাবাসহ দুই ভাই নিহতের ঘটনায় অটোরিকশাচালকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

রেলওয়ের টিম্যান দ্বীন মোহাম্মদ রোবাবার রাতে মামলা করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন আখাউড়া রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল করিম।

মামলার আসামি অটোরিকশাচালক শিরু মিয়া ওই দুর্ঘটনায় আহত হলে প্রথমে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।

৫৫ বছর বয়সী অটোরিকশাচালক শিরু মিয়ার বাড়ি সদর উপজেলার নাটাই এলাকায়।

এর আগে রোববার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে তালশহর রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মেইল ট্রেনের সঙ্গে অটোরিকশার সংঘর্ষ হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) সালাউদ্দিন খান নোমান জানান, রোববার ভোরে একটি অটোরিকশা জেলা শহর থেকে আশুগঞ্জের দিকে যাচ্ছিল। তালশহর রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকা-চট্টগ্রাম মেইল ট্রেন অটোরিকশাটিকে ধাক্কা দেয়। এতে অটোরিকশায় থাকা দুই ভাই রুবেল ও পাবেল ঘটনাস্থলেই মারা যান।

গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের বাবা সাদেক মিয়া ও অটোরিকশার চালককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা ১১টার দিকে মারা যান সাদেক মিয়া।

পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় অটোরিকশার চালক শিরু মিয়াকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের নাটাই উত্তর ইউনিয়নের রাজঘর গ্রামে সাদেক মিয়ার বাড়িতে কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে পরিবেশ। দুর্ঘটনায় দুই ছেলেসহ সাদেক নিহত হওয়ায় পুরো এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তিনজনকে হারিয়ে নিঃস্ব পুরো পরিবার। এই পরিবারের ভবিষ্যত নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

৮০ বছর বয়সী সাদেক মিয়ার পরিবারে ছিলেন স্ত্রী, চার ছেলে ও চার মেয়ে। তাদের মধ্যে নিহত রুবেল ও পাবেল জুতার কারখানায় কাজ করতেন। অন্য দুই ছেলে হলেন সোহেল মিয়া ও জুয়েল মিয়া।

সোহেল মিয়া নিউজবাংলাকে জানান, রুবেল ও পাবেল তাদের বাবা সাদেক মিয়াকে নিয়ে বাড়ি থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। আশুগঞ্জ রেল স্টেশন থেকে ভোর পৌনে ৫টায় তিতাস ট্রেনে ঢাকা যাওয়ার কথা। বাড়ি থেকে ভোর ৪টায় স্টেশনের উদ্দেশে রওনা দেন তারা। পথে তালশহর রেলগেটে ঢাকা মেইল ট্রেনটি অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয়। রেলক্রসিংয়ে গেটম্যান ঘুমিয়ে থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেন সোহেল।

কী হবে রুবেলের দুই সন্তানের

৩৫ বছর বয়সী রুবেল পরিবারের চার ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। আর ২৩ বছরের পাবেল সম্প্রতি বিদেশে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট করেছিলেন।

বাবার সঙ্গে সংসারের হাল ধরেন বড় ছেলে রুবেল। ৬ বছর আগে রুবেল বিয়ে করেন হাকিমাকে। এহসান ও মরিয়ম নামের দুই সন্তান আছে এ দম্পতির। স্বামীকে হারিয়ে দিশেহারা হাকিমা বার বার বলছিলেন, ‘আমার বাইচ্চাডির কী হইব।’

রুবেলের আত্মীয় ইউসুফ বলেন, ‘এক দুর্ঘটনায় পরিবারটিকে নিঃস্ব করে দিল। বিশেষ করে রুবেলের দুই শিশুর কী হবে।’

বাবা হারানোর বিষয় বুঝতে পারছে না এহসান ও মরিয়ম। বাড়ির চারদিকে ঘুরছে, সবার কান্নাকাটি দেখছে। মুখ ফুটে কিছুই বলছে না।

কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারান মোমেনা

স্বামী ও দুই ছেলে হারানোর শোকে কাতর মোমেনা বেগম। কাঁদতে কাঁদতে তিনি যেন বাকরুদ্ধ। কিছুক্ষণ পর পর জ্ঞান হারাচ্ছেন।

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সাদেক মিয়ার বড় মেয়ে ইয়াছমিন। তাদের এই মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না স্বজনরা। মাটিতে লুটিয়ে গড়াগড়ি করছিলেন সবাই।

রুবেলের চাচাতো ভাই রোমান মিয়া বলেন, ‘আমার ভাই তো মারাই গিয়েছে, তাকে তো আর ফিরে পাব না। ভাইদের মৃত্যুর জন্য দায়ী গেটম্যান। এখন সরকারের কাছে অনুরোধ দ্রুত এই গেটম্যানকে শাস্তির আওতায় আনা হোক।’

রাজঘর ঈদগাহ মাঠে রোববার বাদ জোহর তিনজনের জানাজা হয়। জানাজায় দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লিরা যোগ দেন। পরে রাজঘর কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।

তদন্ত কমিটি

দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে রেলওয়ের পক্ষ থেকে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি হয়েছে। রেলওয়ের সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। সদস্যরা হলেন সহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক ও অপারেশন) মো. আলাউদ্দিন, সহকারী প্রকৌশলী (সংকেত ও টেলিযোগাযোগ) আহাদ আলী খলিফা ও আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম মাহমুদুর রহমান।

তদন্ত কমিটির প্রধান আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দুর্ঘটনার বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। কারা ঘটনার জন্য দায়ী, এ ব্যাপারে তদন্ত শুরু হয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে রেলওয়ে ঢাকা বিভাগীয় কর্মকর্তার কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর