এক সময় রাজনীতির মাঠ কাঁপাতেন যে নেতারা, তাদের এখন খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। করোনা মহামারির কারণে অনেকে খুব একটা ঘর থেকে বের হন না। অনেকের বয়স হয়েছে। আবার অনেকে রাজনীতির সমীকরণ মেলাতে পড়ছেন পিছিয়ে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে আর দেখা যায়নি সাবেক রাষ্ট্রপতি, বিকল্পধারার সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে। তার নেতৃত্বাধীন জোট যুক্তফ্রন্টও নিষ্ক্রিয়।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বি. চৌধুরীর নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের কথা ছিল। কিন্তু তিনি বিএনপিকে ১৫০ আসন এবং জামায়াতকে ত্যাগ করার শর্ত দিলে সে প্রক্রিয়া ভেস্তে যায়। পরে বি. চৌধুরীর নেতৃত্বে ১১টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত হয় যুক্তফ্রন্ট।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনী ঐক্য গড়ে জোটটি। নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বি. চৌধুরীর ছেলে মাহী বি. চৌধুরী ও তার দলের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান।
৯০ বছর বয়সী রাজনীতিবিদ অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী নিউজবাংলাকে জানান, করোনার কারণে তিনি একপ্রকার ‘ঘরবন্দি’ হয়ে আছেন। এক সময় রাজনীতি আর হাসপাতালে রোগী দেখে সময় কাটাতেন। কিন্তু এখন তাও করেন না। থাকেন বারিধারার বাসায়।
কেমন আছেন জানতে চাইলে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আসলে ভালো লাগে না। কাজ নাই, কাম নাই। বয়স বেড়ে গেছে, তাই বাসায় থাকতে হয়। করোনার কারণে বাইরে যাওয়া নিরাপদ নয়। আমরা তো কাজের মানুষ। ‘
তিনি বলেন, ‘আগে রোগী দেখতাম, এখন তাও দেখি না। তবে মাঝে মাঝে বাসার বাইরে গাড়ি নিয়ে ঘুরতে বের হই।’
যুক্তফ্রন্ট নিয়ে আবার কাজ শুরু করবেন কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন খুব একটা কাজ হচ্ছে না। দেখি, কী করা যায়।’
যুক্তফ্রেন্টের সমাবেশে সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। ফাইল ছবি
একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ‘ঐক্যফ্রন্টের’ নেতা ছিলেন কাদের সিদ্দিকী। পরে অবশ্য তিনি জোট থেকে বেরিয়ে যান। এক সময় আওয়ামী লীগ করা কাদের সিদ্দিকী কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি। রাজনীতির মাঠে তিনিও নিষ্ক্রিয়। তার দিন কাটছে লেখালেখি করে। সপ্তাহে তিন দিন তিনি নিজ এলাকা টাঙ্গাইলে কাটান।
তার ব্যক্তিগত সহকারী ফরিদ আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনার কারণে রাজনীতি না থাকায় উনি সপ্তাহের অর্ধেক সময় টাঙ্গাইলেই কাটান। বাকি সময়টা ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসায় থাকেন। এলাকায় (টাঙ্গাইল) গেলে খুব একটা যে মুভ করেন, তাও না।’
ফরিদ আহমেদ জানান, ‘উনি অসুস্থ না, খুব ভালো আছেন। তবে লকডাউনের সময় থেকে রাজনীতি নেই বললেই চলে। এমন ফ্রি সময় তো রাজনীতিবিদরা পান না। এ সময়টা ওনার লেখালেখি করে ও বই পড়েই কাটছে।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কাদের সিদ্দিকীর দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের যুব সংগঠন বাংলাদেশ যুব আন্দোলনের আহ্বায়ক হাবিবুন্নবী সোহেল জানান, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড না থাকায় কাদের সিদ্দিকী বই লিখছেন। সঙ্গে বিভিন্ন পত্রিকায় উপসম্পাদকীয় লেখেন।
হাবিবুন্নবী সোহেল বলেন, ‘সারা দেশে আমাদের যতগুলো কমিটি আছে, সেগুলোর মাধ্যমে আমরা ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন করেছি। এ ছাড়া করোনার সময় আমরা বিভিন্ন জায়গায় মাস্ক, পিপিই বিতরণ করেছি।
‘এত দিন করোনার কারণে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ ছিল, তবে এখন যেহেতু সব কিছু খুলতে শুরু করেছে, তাই আমরাও আমাদের বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে আবার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করব।’
বিএনপি থেকে বহিষ্কার হয়ে আওয়ামী লীগমুখী হয়েছিলেন এক সময়ের প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। তবে আওয়ামী লীগে তেমন একটা সুবিধা করে উঠতে পারেননি। বর্তমানে টেলিভিশন দেখে, পত্রিকা পড়ে ও গান শুনে সময় পার করছেন বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন তিনি।
দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে ২০১০ সালে বিএনপি থেকে বাদ পড়েন ব্যারিস্টার হুদা। এরপর দলের প্রাথমিক সদস্যপদও হারান তিনি। পরে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট (বিএনএফ) নামের একটি দল গঠন করেন। কিন্তু ২০১৩ সালে সেই দল থেকেও তাকে বহিষ্কার করা হয়। এর পর ‘তৃণমূল বিএনপি’ নামে একটি দল গঠন করেন তিনি। দলটির নিবন্ধন হয়নি।
২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে নামসর্বস্ব বেশকিছু দল নিয়ে ‘বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট অ্যালায়েন্স’ নামে জোট গঠন করেন ব্যারিস্টার হুদা। সেই জোটের ব্যানারে ঢাকা-১৮ আসন থেকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হন।
নিউজবাংলাকে ব্যারিস্টার হুদা বলেন, ‘আগামীতে তৃণমূল বিএনপি নিয়ে কাজ শুরু করব। আমার নিজের একটা হোটেল আছে। সেই হোটেলে বসেই দলের জন্য কাজ করার ইচ্ছা আছে।’
কী কারণে রাজনীতিতে দেখা যায় না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাজনীতি তো নাই। এখন তো একদলীয় রাজনীতি। অন্য দলের রাজনীতি নেই বললেই তো চলে। শক্তিশালী রাজনীতি করতে শক্তিশালী বিরোধী দলের প্রয়োজন। এটা প্রধানমন্ত্রীর চিন্তা করা উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি খুব তাড়াতাড়ি সভা-সমাবেশ শুরু করতে চাই, যাতে জনমত গঠন করা যায়। হিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না।’
বিএনপি কিংবা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা নেই জানিয়ে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি আমার অবস্থান থেকে রাজনীতি করে যেতে চাই। নিজের দলকে শক্তিশালী করতে চাই।’
একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি আ স ম আবদুর রব। করোনা মহামারির মধ্যে তার দলে ভাঙনের পর থেকে রাজনীতিতে তেমন দেখা যায়নি তাকে।
আ স ম আবদুর রব পাঁচ মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত সহকারী সাইফুল ইসলাম। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উনি ওখানে মূলত চিকিৎসার জন্য গিয়েছেন। আমেরিকার বোস্টনে ওনার বড় ছেলে ও ছেলের বউ থাকেন। ওনার নাতনি হয়েছে, এটাও অন্যতম কারণ।‘
সাইফুল ইসলাম জানান, মে মাসে আমেরিকায় গিয়েছেন তিনি। হার্টের রিং আগে থেকেই পরানো রয়েছে। হার্টের চেকআপও করাবেন। চলতি সেপ্টেম্বর মাসেই তিনি ঢাকায় ফিরবেন।