‘উপজেলার কত রাস্তা ঠিক হয়, কিন্তু আমাদের এ রাস্তাটা ঠিক হচ্ছে না। রাস্তাটার অবস্থা খুবই শোচনীয়। এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে কী পরিমাণ কষ্ট হয়, সেটা কেবল আমরাই বুঝি।’
ক্ষোভের সঙ্গে কথাগুলো বললেন কামরুজ্জামান তালুকদার সজল। হবিগঞ্জের মাধবপুরের শাহজিবাজার এলাকায় তার বাড়ি।
সজলের ক্ষোভ শাহজিবাজার দরগা গেট থেকে ছাতিয়ান সড়কটি নিয়ে। ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটি অনেক দিন ধরেই ভাঙাচোরা। খানাখন্দে ভরা এই সড়ক দিয়ে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হয় স্থানীয় লোকজনকে। দীর্ঘদিনের এই দুর্ভোগ এখন ক্ষোভে পরিণত হয়েছে।
কামরুজ্জামানের মতো এই ক্ষোভ টের পাওয়া গেলে স্থানীয় মোতালিব মিয়ার কথাতেও।
তিনি বলেন, ‘এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন ২০ হাজার মানুষ চলাচল করে। সাতসকালে শ শ শ্রমিক কোম্পানির কাজে যায়। আমি বুঝি না, আমরা কি মানুষ না, আমরা কি এই দেশের জনগণ না। যদি জনগণ হই তাহলে আমাদের রাস্তাটি কেন ঠিক হবে না।’
এই সড়ক সংস্কারের জন্য ২০১৯ সালে ৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ বলছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতিতে আড়াই বছরেও সংস্কার হয়নি সড়কটি। বরাদ্দ বাতিল করায় টাকাও ফেরত চলে গেছে। এখন নতুন করে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
বিকল্প পথ না থাকায় প্রতিদিন কয়েক গ্রামের অন্তত ২০ হাজার মানুষ ১০ কিলেমিটারের এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, এই সড়ক দিয়ে রোগী ও গর্ভবতীদের চলাচলে ভোগান্তি হয় সবচেয়ে বেশি। বৃষ্টিতে খানাখন্দে পানি জমে গেলে তো সড়কে যান চলাচল বন্ধই হয়ে যায়।
স্থানীয় সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বৃষ্টি হলে ভাঙা অংশে পানি লেগে থাকে। প্রায় সময় টমটম ইজিবাইকসহ বিভিন্ন ছোট যানবাহন উল্টে যায়। কখন বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে, সেই আতঙ্ক নিয়ে আমাদের চলাচল করতে হয়।’
মাধবপুর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জুলফিকার হক চৌধুরী জানান, ‘শাহজিবাজার-বাঘাসুরা ও ছাতিয়ান সড়কটি সংস্কারের জন্য ২০১৯ সালের প্রথম দিকে ৮ কোটি টাকার বরাদ্দ হয়।
‘কাজের টেন্ডার পায় ‘ডলি কনস্ট্রাকশন’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তারা কিছুদিন কাজ করার পরই হঠাৎ কাজ বন্ধ করে দেয়। বারবার তাগিদ দেয়ার পরও ঠিকাদার কাজ শুরু করেননি। একপর্যায়ে গত এপ্রিল মাসে কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ায় আমরা কাজটি বাতিল করেছি।’
তিনি জানান, সড়কটি সংস্কারের জন্য আবারও প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সেটি পাস হলে আবার দরপত্র আহ্বান করা হবে।
এই প্রকৌশলী বলেন, সড়কের অবস্থা আগের চেয়ে বেশি নাজুক হয়ে গেছে। এ কারণে সংস্কারের জন্য বরাদ্দও এবার বেশি চাওয়া হয়েছে।