দিনভর বিক্ষোভ, পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি, লাঠিচার্জের পর স্বাভাবিক হয়ে এসেছে গাজীপুরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা।
রোববার রাত সোয়া ৯টার দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এর আগে সকাল ৯টার দিকে স্নাতক চতুর্থ বর্ষের চূড়ান্ত ফল পরিবর্তনের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা।
ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন বিক্ষুব্ধরা। তাদের এই অনশন ও বিক্ষোভ কর্মসূচির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ তিন শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ক্যাম্পাসে আটকা পড়েন।
আন্দোলনের খবরে সেখানে মোতায়েন করা হয় বিপুল পুলিশ সদস্য। তারা নানাভাবে শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। রাতেও শিক্ষার্থীরা তাদের অবস্থান থেকে সরে না আসায় চড়াও হয় পুলিশ।
লাঠিচার্জে দুইজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। অনশন কর্মসূচি চলাকালে অসুস্থ পয়ে পড়েন তিনজন।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেন শিক্ষার্থীদের সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বদরুজ্জামানের কাছে তারা সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে স্মারকলিপি জমা দেয়।
এ সময় শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিতে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় চান বদরুজ্জামান। তবে শিক্ষার্থীরা কোনো সময় দিতে রাজি হননি।
তারা বলেন, রাতের মধ্যেই অকৃতকার্যদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এই অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে আবারও অনশন ও বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। পরে রাত ৯টার কিছু পর তাদের ছত্রভঙ্গের চেষ্টা করে পুলিশ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে লাঠিচার্য করে পুলিশ।
শিক্ষার্থীরা সরে গেলে ক্যাম্পস ত্যাগ করেন আটকে পড়া শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
কয়েকজন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী জানান, গত ২০ জুলাই প্রকাশিত ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষ পরীক্ষার ফলে ২৮ শতাংশ পরীক্ষার্থীকে এক বিষয়ে অকৃতকার্য দেখানো হয়। এতে চূড়ান্ত পরীক্ষায় ২৪ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পাশ করতে পারেননি।
তাদের অভিযোগ, ‘সশরীরে পরীক্ষা দিয়েও অনেক শিক্ষার্থীকে অনুপস্থিত দেখানো হয়েছে। চতুর্থ বর্ষের ১০টি কোর্সের মধ্যে ৯টিতে প্রথম শ্রেণি পেলেও তুলনামূলক সহজ বিষয় যেমন সাংগঠনিক আচরণ, প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় অনেক শিক্ষার্থীকে অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে।’
অনশনে থাকা লালমাটিয়া মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী নাহিদ নীয়াজী নীরা বলেন, ‘স্নাতক প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষে ভালো রেজাল্ট এসেছিল, কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় আমাকে এক বিষয়ে অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে।
‘আমাদের গাইবান্ধার শিক্ষার্থী মশিউর এই ফলাফলের কারণে আত্মহত্যা করেছে। তার মতো এমন অনেক ছাত্রছাত্রী আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাদের ফলাফল পুনর্মূল্যায়ন না করা হলে এই অনশন লাগাতার চলবে। প্রয়োজনে মাসব্যাপী অনশন চালিয়ে যাব।’
শেরপুর থেকে স্ত্রী জেরিন আক্তার ববিকে নিয়ে সকাল ৯টায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে যান রকিবুল হাসান খুররম।
তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রীর প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষায় প্রথম গ্রেড আসে। চতুর্থ বর্ষে এক বিষয়ে তাকে অকৃতকার্য দেখান হয়েছে। এই ফল আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। তাই স্ত্রীর সঙ্গে আমি নিজেও আন্দোলনে যোগ দিয়েছি।’
এর আগে একই দাবিতে গত ১১ ও ১৮ আগস্ট বিক্ষোভ করেছিলেন তারা।