করোনার কারণে প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকা শিক্ষাঙ্গন প্রাণ ফিরে পাওয়ার দিন ছাত্রছাত্রীরা ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে স্কুলে গেছে। প্রথম দিনেই উপস্থিতির হার ছিল ৮০ শতাংশের বেশি।
রোববার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন শাখা থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
শাখাটির পরিচালক আমির হোসেন বলেন, ‘বিকেল ৫টা পর্যন্ত সারা দেশের মোট ১৪ হাজার ৪৮৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য পেয়েছি। এতে দেখা যায় ৮০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত ছিল।’
সরকারি ও বেসরকারি শীর্ষ মানের স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেক বেশি ছিল। তবে যেসব শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত হননি তিনদিন পর তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শিক্ষকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর ২০২০ সালের ১৭ মার্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। এই সময়ে ক্লাস হয়েছে অনলাইনে। গত মে মাসে স্কুল খুলে দেয়ার পরিকল্পনা করা হলেও সে সময় আরও প্রাণঘাতি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার।
তবে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে আসতে থাকায় সারাদেশেই একযোগে খুলে দেয়া হয়েছে সব স্কুল ও কলেজ।
দীর্ঘদিন পর স্কুলে আসা শিক্ষার্থীদের বরণ করা হয়েছে ভালোবাসা নিয়ে। স্কুলগুলো সাজানো হয়েছে নানা উপকরণে, নাচে-গানে আনন্দ দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
চিরচেনা শপথ পাঠ আর জাতীয় সঙ্গীত দিয়ে শুরু হয় স্কুলের কার্যক্রম। কোনো কোনো স্কুলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের অ্যাসেম্বলি করতে দেখা গেছে রোববার।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার আগেই সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশ এসেছে, দেড় বছরে শিশু-কিশোরদের মনে যে প্রভাব পড়েছে, তার কারণে তাদের সঙ্গে আচরণ করতে হবে সংবেদনশীলতার সঙ্গে। কোনোভাবে মানসিক চাপ দেয়া যাবে না।
প্রথম দিন রাজধানী এবং দেশের বাইরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই চেষ্টাটি দেখা গেছে। শিশু কিশোররাও দীর্ঘদিন পর বন্ধুদের পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে। চট্টগ্রামে একটি স্কুলে একটি মেয়ে তার ‘ঝালমুড়ি মামার’ খোঁজ করে সংবাদ শিরোনামে এসেছে।
ক্রমেই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আরও বাড়বে আশা করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের পরিচালক বলেন, ‘অনেকেই গ্রামের বাড়িতে আছেন, অসুস্থ ও ব্যক্তিগত সমস্যাসহ নানা কারণে ক্লাসে উপস্থিত হতে পারেননি। তবে ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়বে।’
কুমিল্লায় একটি স্কুলে শিশুদের হাতে মাস্ক তুলে দেয় কর্তৃপক্ষ
গত ৯ সেপ্টেম্বর দেশের সরকারি-বেসরকারি ১৯ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিদিনের কার্যক্রম সংক্রান্ত তথ্য গুগল ডকসের মাধ্যমে পাঠানোর নির্দেশ দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। প্রতিদিন বিকেল ৪ টার মধ্যে তথ্য জমা দিতে বলা হয়।
গত ৫ সেপ্টেম্বর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে আসায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ঘোষণা দেয় সরকার।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি তখন বলেছিলেন, ‘২০২১ সাল ও আগামী বছরের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা প্রতিদিন ক্লাস করবে। অন্যান্য শ্রেণির ক্লাস সপ্তাহে এক দিন করে চলবে। একইভাবে প্রাথমিকের পঞ্চম শ্রেণি প্রতিদিন এবং অন্যান্য ক্লাস সপ্তাহে এক দিন চলবে।’
কুমিল্লারই আরও একটি স্কুলে শিশুদেরকে বরণ করা হয় চকলেট দিয়ে
মেডিক্যাল, ডেন্টাল ও নার্সিংবিষয়ক সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীরে ক্লাস চালু হবে আগামীকাল থেকে।
সম্প্রতি জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দেশের ৪ কোটির বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের ভাষ্য, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যত বেশি সময় বন্ধ থাকবে, ততই বাড়বে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা।