লাতিন আমেরিকার দেশ পেরুর মাওবাদী বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘শাইনিং পাথ’-এর প্রতিষ্ঠাতা আবিমায়েল গুজমান কারাবন্দি অবস্থায় মারা গেছেন।
৮৬ বছর বয়সে স্থানীয় সময় শনিবার ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে রাজধানী লিমার একটি সামরিক হাসপাতালে মারা যান মাওবাদী এই গেরিলা নেতা।
পেরুর আইনমন্ত্রী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন দর্শনশাস্ত্রের সাবেক এই অধ্যাপক।
সন্ত্রাসবাদ ও দেশদ্রোহের অভিযোগে ১৯৯২ সাল থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছিলেন গুজমান।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, গত জুলাইয়ে কারাগারে অসুস্থ্ হয়ে পড়েন গুজমান। সে সময় তাকে কারাগার থেকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। পরে আবার ফিরিয়ে আনা হয় কারাগারে।
পেরুর দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় শহর মোলেন্দোয় ১৯৩৪ সালের ডিসেম্বরে এক ধনী পরিবারে গুজমানের জন্ম। ছোটবেলায় মাকে হারান তিনি।
বেসরকারি একটি ক্যাথলিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা শেষে ভর্তি হন ইউনিভার্সিটি অব আরেকুইপায়। সেখানে তিনি গবেষণা করেন বিখ্যাত জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্টের ওপর।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে মার্ক্সবাদের দিকে ঝোঁকেন গুজমান। ১৯৬২ সালে পেরুর আয়াকুছো শহরের হুয়ামাঙ্গা ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির দর্শন বিভাগের অধ্যাপক হন।
১৯৬৫ সালে চীন সফরে কমিউনিস্ট নেতা মাও সেতুং দ্বারা ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত হন গুজমান।
১৯৬৯ সালে গুজমানসহ ১১ জন মিলে প্রতিষ্ঠা করেন কমিউনিস্ট দল- শাইনিং পাথ। মাওবাদী চেতনায় গড়া সংগঠনটি পেরুর পুঁজিবাদী শাসক গোষ্ঠীকে হটিয়ে কমিউনিস্ট রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘জনযুদ্ধ’ শুরুর চেষ্টা করে।
ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তাদের অনুসারী। ধারণা করা হয় কমপক্ষে ১০ হাজার সদস্য ছিল শাইনিং পাথের। আর তাদের হামলায় কমপক্ষে ৭০ হাজার মানুষ নিহত বা বাস্তুচ্যুত হয়।
যে ভাবে সশস্ত্র লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে শাইনিং পাথ
শুরুর দিকে সংগঠনটি সশস্ত্র লড়াই না চালালেও, ধীরে ধীরে তারা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।
পেরুতে তখন চলছিল সেনা শাসন। দীর্ঘ এক যুগ পর ১৯৮০ সালে গণতান্ত্রিক নির্বাচন দেয় সেনাবাহিনী। তবে কমিউনিস্ট রাষ্ট্র গঠনে উদ্বুদ্ধ শাইনিং পাথ এ নির্বাচন মেনে নেয়নি। শুরু করে সশস্ত্র তৎপরতা। নির্বাচন প্রতিহত করতে ব্যালট বাক্স পুড়িয়ে দেয় মাওবাদীরা।
পেরুর প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলো দখলে নিয়ে শাইনিং পাথ শুরু করে তাদের কঠোর শাসন। কাউকে সরকারের পক্ষের লোক সন্দেহ হলেই, খুন করা হতো। নিজস্ব আদালতে বসিয়ে বিচার ও প্রকাশ্যে ফাঁসি কার্যকর করে জনমনে সৃষ্টি করেছিল আতঙ্ক।
এরপর গাড়িবোমা হামলা শুরু করে সংগঠনটি। তাদের হামলায় বেকায়দায় পড়ে যায় সরকার। হামলা থেকে বাঁচতে এক পর্যায়ে রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থা জারি করে পেরু সরকার।
১৯৮৩ সালে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা চালায় শাইনিং পাথ। সে বছর সংগঠনটির এক কমান্ডারের হত্যার বদলা নিতে সান্তিয়াগো দে লুকানমারকা জেলায় হত্যা করা হয় ৬৯ জনকে।
১৯৯২ সালে রাজধানী লিমার মিরাফ্লোরেস জেলায় ট্রাকবোমা হামলা চালায় তারা। ওই হামলায় প্রাণ হারান ১৫ জন, আহতের সংখ্যা ১৫৫।
যেভাবে ধরা পড়েন আবিমায়েল গুজমান
১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বরে শেষ হয় শাইনিং পাথের সশস্ত্র লড়াই। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানী লিমার একটি ডান্স স্টুডিও থেকে সংগঠনটির প্রধান আবিমায়েল গুজমানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরে গোপনে সামরিক আদালতে তার বিচার হয়। বিচারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয় তাকে।