বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পির সাহেবের কাণ্ড দেখেন!

  •    
  • ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৯:২৮

আদালত বলেছে, ‘পির সাহেবের কাণ্ড দেখেন। জায়গা-জমি দখলের জন্য পির সাহেবরা তাদের অনুসারী-মুরিদ দিয়ে কী করে দেখেন। যেখানে একটা মামলা দিলেই একজন মানুষের জীবন শেষ হয়ে যায়, সেখানে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে এত মামলা! এটা তো সিরিয়াস ব্যাপার।’

অন্যের জায়গা-জমি দখলের জন্য রাজারবাগ দরবার শরিফের পির দিল্লুর রহমান মুরিদদের দিয়ে নিরীহ এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৪৯টি মামলা দিয়েছেন। এ ঘটনার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সিআইডির সেই প্রতিবেদন দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। আদালত বলেছে, ‘পির সাহেবের কাণ্ড দেখেন। জায়গা-জমি দখলের জন্য পির সাহেবরা তাদের অনুসারী-মুরিদ দিয়ে কী করে দেখেন। যেখানে একটা মামলা দিলেই একজন মানুষের জীবন শেষ হয়ে যায়, সেখানে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে এত মামলা! এটা তো সিরিয়াস ব্যাপার।’

বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এ মন্তব্য করে। পরে আদালত এ বিষয়ে শুনানি এক সপ্তাহের জন্য মুলতবি করে।

ঢাকার শান্তিবাগের বাসিন্দা একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় ৪৯টি মামলা হয়। এর মধ্যে অধিকাংশের মামলার বাদীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। এসব মামলায় বেশ কয়েক বছর জেলও খাটেন কাঞ্চন।

বাধ্য হয়ে হাইকোর্টে রিট করেন একরামুল আহসান। তার আবেদনের শুনানি নিয়ে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। আদালতের নির্দেশে সিআইডি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয়। সেটি দেখে আদালত রোববার বিস্ময় প্রকাশ করে।

আদালতে একরামুল আহসান কাঞ্চনের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট এমদাদুল হক বসির। অপরপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট অজিউল্লাহ। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।

আইনজীবী এমদাদুল হক বসির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আদালত সিআইডির রিপোর্ট দেখেছেন। আদালত বলেছেন, দেখেন একজন পীরের কারসাজি। একজন পীর কীভাবে একজন নিরীহ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করে হয়রানি করে। এক কথায় আদালত রিপোর্ট দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।’

আরও পড়ুন: জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া মামলা হবে না

সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘একরামুল আহসান কাঞ্চনের তিন ভাই এবং এক বোন। ১৯৯৫ সালে তার বাবা ডা. আনোয়ারুল্লাহ মারা যান। রাজারবাগ দরবার শরিফের পিছনে ৩ শতাংশ জমির ওপর ৩ তলা পৈতৃক বাড়ি তাদের। বাবার মৃত্যুর পর কাঞ্চনের বড় ভাই আক্তার-ই-কামাল, মা কোমরের নেহার ও বোন ফাতেমা আক্তার পির দিল্লুর রহমানের মুরিদ হন। তবে রিট আবেদনকারী ও তার অপর ভাই ডা. কামরুল আহসান বাদলকে বিভিন্নভাবে প্ররোচিত করেও ওই পিরের মুরিদ করা যায়নি।

‘এরই মধ্যে একরামুল আহসান কাঞ্চনের মা, ভাই ও বোনের কাছ থেকে তাদের পৈতৃক জমির অধিকাংশই পিরের দরবার শরিফের নামে হস্তান্তর করা হয়। আর একরামুল আহসান কাঞ্চন ও তার ভাইয়ের অংশটুকু পির এবং তার দরবার শরিফের নামে হস্তান্তর করার জন্য পির দিল্লুর এবং তার অনুসারীরা বিভিন্নভাবে চাপ দেন। সম্পত্তি হস্তান্তর না করায় পির দিল্লুর রহমান ও তার অনুসারীদের সঙ্গে একরামুল আহসান কাঞ্চনের শত্রুতা সৃষ্টি হয়। সে শত্রুতার কারণেই একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় হয়রানিমূলক মামলা করা হয়।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় মোট ৪৯টি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে জিআর মামলা ২৩টি এবং সিআর মামলা ২৬টি। ইতিমধ্যে জিআর ১৫টি মামলা এবং সিআর ২০টি মামলায় আবেদনকারী আদালত থেকে খালাস পেয়েছেন। বর্তমানে ১৪টি মামলা আদালতে বিচারাধীন। যার মধ্যে আটটি জিআর এবং ছয়টি সিআর মামলা রয়েছে।

‘অধিকাংশ মামলার নথিপত্র সংগ্রহের পর পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আবেদনকারীর বিরুদ্ধে একাধিক মানবপাচার, নারী নির্যাতন, বিস্ফোরক দ্রব্য আইন, হত্যার চেষ্টা মামলাসহ প্রতারণা, জাল-জালিয়াতি, ডাকাতির প্রস্তুতিসহ বিভিন্ন ধর্তব্য ও অধর্তব্য ধারায় মামলা করা হয়েছে। অধিকাংশ মামলার বাদী, সাক্ষী, ভুক্তভোগীরা কোনো না কোনোভাবে রাজারবাগ দরবার শরিফ এবং ওই দরবার শরিফের পিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত।’

এ বিভাগের আরো খবর