শেয়ার বেচাকেনায় ব্রোকারেজ হাউসগুলো যে হারে কমিশন নিয়ে থাকে, তা কমানোর দাবি উঠেছে বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামও বিষয়টি নিয়ে আগ্রহী। তবে সিদ্ধান্ত নিতে আরেকটু সময় নিতে চান তিনি।
নিউজবাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বিএসইসির চেয়ারম্যান এ কথা বলেন। সময় নেয়ার কারণ হিসেবে তিনি গত বছর করোনার সময় লেনদেন বন্ধ থাকায় ব্রোকারেজ হাউসগুলোর লোকসানের বিষয়টি তুলে ধরেন। বলেন, এখন যে হারে লেনদেন হচ্ছে, সে প্রবণতা বজায় থাকলে তারা লেনদেনের কমিশন কমানোর সিদ্ধান্ত নেবেন।
এক বছরের বেশি সময় ধরে চাঙা পুঁজিবাজারে শেয়ারমূল্যের সঙ্গে সঙ্গে লেনদেনও বেড়েছে ব্যাপকভাবে। ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার লেনদেন বাড়তে বাড়তে তিন হাজার কোটি টাকা ছুঁইছুঁই হয়ে গেছে।
বিনিয়োগকারীরা বলছেন, লেনদেন ৫০০ কোটি টাকা থাকলে ব্রোকারেজ হাউসগুলো যে হারে কমিশন কাটবে, আড়াই হাজার বা তিন হাজার কোটি টাকা হলেও একই হারে কাটবে, এটা হতে পারে না। লেনদেনের বিভিন্ন ধাপ অনুযায়ী কমিশন নির্ধারণের দাবি উঠেছে।
পুঁজিবাজার চাঙা হয়ে উঠায় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে এখন ব্যাপক ভিড় দেখা যায়
বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস শেয়ার কেনাবেচার ক্ষেত্রে প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে ৩৫ পয়সা থেকে ৫০ পয়সা কমিশন নিয়ে থাকে। এই কমিশন যেমন কেনার সময় দিতে হয়, তেমনি দিতে হয় বিক্রির সময়।
তবে শেয়ারের ক্রয় ও বিক্রয়মূল্যের ওপর ব্রোকারেজ হাউসগুলোর কাছ থেকে প্রতি ১ লাখ টাকায় সাড়ে ১২ টাকা ফি নেয় সিডিবিএল। যেটি আগে ছিল ১৫ টাকা। বাকিটা মুনাফা হিসেবে থাকে ব্রোকারেজ হাউসের।
এক বছরের ব্যবধানে লেনদেন চার থেকে পাঁচ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে কমিশন হিসেবে হাউসগুলোর বেশ ভালো পরিমাণ মুনাফা হচ্ছে।
লেনদেন বাড়তে থাকায় এই কমিশন কমানোর উদ্যোগ নিতে বিএসইসিকে চিঠি দেয়া হয়েছে বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে। তারা লেনদেনের অঙ্ক অনুযায়ী বিভিন্ন ধাপে কমিশন নির্ধারণের দাবি জানান।
বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম এ প্রসঙ্গে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের কাছে অনেকেই চিঠি দিয়েছে। আমরা একটি দেখব।
‘তবে ২০২০ সালের করোনা মহামারিতে অনেক ব্রোকারেজ হাউস লোকসান করেছে। লেনদেন ৬৬ দিন বন্ধ থাকায় অনেক হাউস তাদের শাখা অফিস বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। আয় না থাকায় বেতনসংকটে ছাড়তে হয়েছে অনেক কর্মীকে।
‘বেতন দেয়া, বাড়ি ভাড়া দেয়া, অনেক কিছুতে কষ্ট হচ্ছিল। তারা মাত্র লস কাভার করতে শুরু করেছে। আর একটু সময় যাক। লেনদেনের এমন ট্রেন্ড চালু থাকলে আমরা বিষয়টি দেখব।’
২০১০ সালের মহাধসের পর চলতি বছরের মতো এত বেশি লেনদেন এর আগে কখনও দেখেনি পুঁজিবাজার
এ বিষয়ে ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ব্রোকারেজ হাউসগুলোর আয় আসে মূলত লেনদেনের ওপর ভিত্তি করে। লেনদেন বেশি হলে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর আয় বেশি থাকে।
‘তবে ২০২০ সালের করোনার কারণে বেশির ভাগ ব্রোকারেজ হাউসের আয় কমে যায়। এখন পুঁজিবাজার ভালো, লেনদেন বেশি হচ্ছে। এখন তাদের আয় বেড়েছে। কিন্ত সে সময় যে লোকসান হয়েছে সেটিও কাটিয়ে উঠতে হবে। কমিশন সেটি নির্ধারণ করা আছে সেটি নেয়া হচ্ছে। বরং অনেক সময় অনেক কমও নেয়া হচ্ছে।’
আইন অনুযায়ী হাউসগুলো শেয়ার মূল্যের সর্বোচ্চ ১ শতাংশ কমিশন নিতে পারে। কিন্ত প্রতিযোগিতামূলক লেনদেনে কেউ ১ শতাংশ কাটে না। সর্বোচ্চ ৬০ পয়সা পর্যন্ত নিয়ে থাকে।
ইউনাইটেড ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের একজন ট্রেডার নিউজবাংলাকে বলেন, শেয়ার কেনার সময় একবার আর শেয়ার বিক্রি করার সময় একবার কমিশন কাটা হয়। তবে যেসব বিও হিসাব থেকে বেশি লেনদেন হয় সেগুলোর কমিশন হার কম। আর স্বাভাবিক বিও হিসাবে কমিশন হার শতকরা ৫০ পয়সার বেশি নয়।
সেকেন্ডারি বাজারে ইটিএফ ইউনিট ও বেমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট লেনদেনের ক্ষেত্রেও একই হারে ফি দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে ফান্ডের নিট সম্পদমূল্যের ভিত্তিতে ফি নির্ধারণ হয়ে থাকে।
মার্কেট মেকারদের ইটিএফ ও বেমেয়াদি ফান্ড লেনদেনের ক্ষেত্রে সিডিবিএল ফি সাড়ে ১২ টাকার পরিবর্তে প্রতি এক লাখ টাকায় সাড়ে ৭ টাকা ফি নিয়ে থাকে।
ব্রোকারেজ হাউস কমিশন থেকে ডিএসই চার্জ হিসেবে দুই পয়সা কেটে রাখে। এর মধ্যে সিডিবিএলর কোনো চার্জ নেই।
কেনাবেচায় কমিশনের বাইরে শেয়ার কেনাবেচায় ব্যবহৃত বিও হিসাব রক্ষণাবেক্ষণের বার্ষিক ফি ৪৫০ টাকা। এই ফি থেকে সরকার ২০০ টাকা, সিডিবিএল ১৫০, সংশ্লিষ্ট ডিপি ১০০ ও বিএসইসি ৫০ টাকা নিয়ে থাকে।