যে আইনের অধীনে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনা করা হচ্ছে, সেই আইনের মেয়াদ বৃদ্ধির নীতিগত অনুমোদনের পর শেয়ারমূল্য বেড়ে যাওয়া নিয়ে সতর্ক করেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কোম্পানি খুলনা পাওয়ার কোম্পানি কেপিসিএল ও অরিয়ন ফার্মা।
কোম্পানি দুটি জানিয়েছে, তাদের বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়েনি। আইন সংশোধন আর মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি দুটি আলাদা বিষয়।
এই কোম্পানি দুটির বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে আর তারা মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছে। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা এমনকি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম জানিয়েছেন, কেপিসিএলের বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়বে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কথা হয়েছে।
গত সোমবার মন্ত্রিসভা ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) আইন, ২০২১‘-এর মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়ানোর প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়।
এই সংবাদে বিশেষভাবে কেপিসিএলের শেয়ারধারীরা উল্লসিত হন। কারণ, কোম্পানিটির দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে। আর তারা মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছে। এখন আইন সংশোধন হওয়ায় মেয়াদ বৃদ্ধির বাধা কাটবে।
২০০৯ সালে পুঁজিবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্ত কেপিসিএলের বিদ্যুৎকেন্দ্র ছিল তিনটি। এর মধ্যে ২০১৮ সালে মেয়াদ শেষ হয়ে যায় একটির আর গত মে মাসে শেষ হয় বাকি দুটির। কোম্পানিটি মে মাসে মেয়াদ শেষ হওয়া দুটি কোম্পানির মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছে।
তবে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের পর অনেক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ধারণা জন্মে যে, কেপিসিএলের মেয়াদ বেড়েছে আর মঙ্গল ও বুধবার কোম্পানিটির শেয়ার দরে ব্যাপক উল্লম্ফন হয়।
মঙ্গলবার দিনের সর্বোচ্চ ৪ টাকা ৩০ পয়সা বেড়ে শেয়ার দর হয়ে যায় ৪৭ টাকা ৭০ পয়সা। বুধবার সকালে তা আরও ৪ টাকা ৭০ পয়সা বেড়ে হয়ে যায় ৫২ টাকা ৪০ পয়সা। তবে দিন শেষে সেখান থেকে কিছুটা কমে লেনদেন শেষ হয় ৫০ টাকা ১০ পয়সায়।
পরের দুই দিনে আরও খানিকটা দর কমে রোববার তা দাঁড়িয়েছে ৪৬ টাকা ৯০ পয়সা।
সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসের লেনদেন শেষে কেপিসিএল ও অরিয়ন ফার্মার পক্ষ থেকে ঢাকা স্টক এক্মচেঞ্জের সতর্কতা নোটিশ দেয়া হয়।
কেপিসিএল যা বলল
কেপিসিএল বলেছে, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) আইনের মেয়াদ ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হলেও কোম্পানির সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয়ের কোনো চুক্তি হয়নি।’
কেপিসিএল বলছে, ‘বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানির জন্য এই সিদ্ধান্ত ইতিবাচক হতে পারে। আপনাদের আগেই জানানো হয়েছিল, কেপিসিএলের দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের (১১৫ মেগাওয়াটের কেপিসিএল ইউনিট টু ও ৪০ মেগাওয়াটের নওয়াপাড়া কেন্দ্র) মেয়ার বৃদ্ধির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
‘তবে আমরা বিদ্যুৎ বিভাগ বা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা পাইনি। এ বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত যথাসময়ে আপনাদের জানানো হবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, সে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা কোম্পানির আর্থিক হিসাবে কোনো প্রভাব ফেলবে না।’
তিনটি কেন্দ্রেরই মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় কেপিসিএলের বিনিয়োগকারীদের এখন ১৫০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র ‘ইউনাইটেড পায়রা’র আয়ের অংশবিশেষের ওপর নির্ভর করতে হবে। এই কেন্দ্রে ৩৫ শতাংশ মালিকানা আছে কেপিসিএলের।
ওরিয়ন ফার্মা যা বলল
ওরিয়ন ফার্মা ওষুধ কোম্পানি হলেও গ্রুপের দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে মালিকানা আছে এই কোম্পানিটির। এর মধ্যে ১০০ মেগাওয়াটের একটি কেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে।
এই কোম্পানিটি অবশ্য জরুরি বিদ্যুৎ সরবরাহ আইনের মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টিই গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
কোম্পানিটি বলেছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) আইনের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়েছে।
তবে তাদের কাছে থাকা তথ্য ও উপলব্ধি বলছে, এমন কোনো প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় করা হয়নি। ফলে সেই সংবাদের কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা নেই।
‘আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে প্রভাবিত করতে একটি স্বার্থান্বেষী মহল এ বিষয়ে গুজব ছড়াচ্ছে’- এই বলে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে ওরিয়ন ফার্মা।