কোনো বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র, আবার কোনোটির শ্রেণিকক্ষে, মাঠে ও সামনের রাস্তায় বানের পানি। নদীগর্ভে বিলীনের পথেও আছে কিছু।
এই পরিস্থিতির কারণে রোববার মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ৮টি বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু হয়নি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, পদ্মার তীরবর্তী শিবচর উপজেলার মাদবরেরচর, কাঁঠালবাড়ী, চরজানাজাত ও বন্দরখোলা ইউনিয়ন আর আড়িয়াল খাঁ নদীর তীরবর্তী শিরুয়াইল, নিলখী, বহেরাতলা দক্ষিণ ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে আছে এখনও। এসব এলাকার ওই স্কুলগুলো পাঠদানের জন্য অনুপযোগী বলে কর্তৃপক্ষ সেগুলো বন্ধই রেখেছে।
এর মধ্যে কাজির সুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্বখাস বাচামারা আজাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রিয়াজ উদ্দিন মাদবরের কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আছিম বেপারীর কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রাজারচর বন্দরখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিস্থিতি বেশি খারাপ। সেগুলোর শ্রেণিকক্ষে এখনও বানের পানি।
মধ্য সন্নাসীরচর ইউনিয়নের পূর্বখাস বাচামারা আজাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মূল ভবনটি আড়িয়াল খাঁ নদের তীরবর্তী হওয়ায় যেকোন মুহূর্তে নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
রিয়াজ উদ্দিন মাদবরের কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী নাসিম বলেন, ‘স্কুলের মধ্যে ও চারপাশ দিয়ে পানি। আমরা কীভাবে স্কুলে যাইব... যদি রুমে পানি থাকে তাহলে ক্লাস করতে পারব না।’
আড়িয়াল খাঁ নদে বিলীনের ঝুঁকিতে শিবচরের মধ্য সন্নাসীরচর ইউনিয়নের আজাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘করোনার মধ্যে আমরা অনলাইনে ক্লাস, ওয়ার্ক শিট বিতরণ, হোম ভিজিটসহ সকল কাজ করেছি। আমাদের বিদ্যালয়ে ২৫০ জন শিক্ষার্থী। বন্যায় বিদ্যালয়টি বেহাল হয়ে পড়েছে।
‘কয়েকদিন ধরে এলাকার একটি পরিবার বিদ্যালয়টিতে আশ্রয় নিয়েছিল। গতকাল (শনিবার) পানি কমায় তারা বাড়ি চলে গেছে। বিদ্যালয়ে নিচতলা ও যাতায়াতের রাস্তাতেও পানি। তাই ১২ তারিখ বিদ্যালয়ে পাঠদান সম্ভব হবে না। তবে আমরা শিক্ষকরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাব।’
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, গত কয়েকদিন ধরে পানি বেড়ে পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদের চরাঞ্চল ডুবে গেছে। আড়িয়াল খাঁ নদের পানি বিপৎসীমার দেড় ফুট উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে গত দুই দিন ধরে পানি কমতে শুরু করেছে। এরইমধ্যে বন্যায় স্কুল, কলেজ, ঘরবাড়ি, ফসলি জমিসহ অনেক গ্রামীণ সড়ক নষ্ট হয়ে গেছে।
শিবচর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শিবচর উপজেলায় আছে ১৮০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ উপজেলায় চর ও নিম্নাঞ্চল বেশি। যে কারণে ২৬টি বিদ্যালয়ে পানি উঠেছে। এর মধ্য ৮টি আশ্রয়কেন্দ্র। অন্যগুলোতে শিক্ষকরা আসলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম।
‘সন্নাসীরচর ইউনিয়নের খাসচর বাচামারা আজাদ বিদ্যালয়টি ভাঙনের কবলে। পানি বাড়তে থাকলে আরও অন্তত ২০টি বিদ্যালয় পানিতে প্লাবিত হবে। আমাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানিয়েছি। তারাও কয়েকটি বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছে।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘জেলার যেসব বিদ্যালয়ে পানি উঠেছে ও উঠতে পারে তার একটি তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি।
‘এখন পর্যন্ত বেশ কিছু বিদ্যালয়ের মাঠে পানি উঠেছে। কিছু কিছু বিদ্যালয়ে যাওয়ার রাস্তায় পানি উঠেছে। তবে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে সেভাবে পানি উঠেনি। শিবচর উপজেলার বিদ্যালয়গুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ উপজেলার যে বিদ্যালয়গুলোতে সমস্যা আছে সেগুলো সমাধান করে শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’