বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ডোপ টেস্টে শিক্ষার্থীরা ‘নাজেহাল’

  •    
  • ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০৯:৫১

স্নাতকে ভর্তির আগে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করেছে বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ। শিক্ষার্থীরা বলছেন, এর জন্য হাসপাতাল ভেদে গুনতে হচ্ছে ৯০০ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত, যা তাদের জন্য বাড়তি চাপ।

সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে স্নাতকে ভর্তির আগে শিক্ষার্থীদের ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করেছে বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ। এতে নাখোশ শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ ডোপ টেস্টের জন্য গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। করোনাকালের উপার্জন সংকটে এই টাকা টেস্টে খরচ করা চাপ বলে মনে করছেন তারা। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ডোপ টেস্ট ছাড়া ভর্তির কোনো সুযোগ নেই।

রাজধানীতে গত ২ জুন আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ষষ্ঠ সভায় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক এবং নির্দিষ্ট সময় পরপর তা পরীক্ষার সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানান, সরকারি নিয়োগ ও উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এরপর থেকেই বগুড়ার আজিজুল হক কলেজ কর্তৃপক্ষ স্নাতক শ্রেণির ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করেছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, এই টেস্টের জন্য গুনতে হচ্ছে ৯০০ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত।

এই কলেজে ভর্তি হতে অপেক্ষায় থাকা জিল্লুর রহমান, মো. রাজুসহ অন্তত ১০ জনের সঙ্গে এ প্রসঙ্গে কথা হয়েছে।

তাদের অভিযোগ, করোনার কারণে অনেকে পারিবারিকভাবে আর্থিক সংকটে রয়েছেন। এর মধ্যে শুরু হয়েছে অনার্সে ভর্তির কার্যক্রম। বিজ্ঞান বিভাগে একজন শিক্ষার্থীকে প্রায় ৩ হাজার এবং কলা ও বাণিজ্য অনুষদের শিক্ষার্থীদের ২ হাজার ৮০০ টাকা ভর্তি ফি জোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডোপ টেস্টের ফি, যা তাদের জন্য বোঝা।

তারা জানিয়েছেন, বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ৯৫০, মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল ৯০০ এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলো ডোপ টেস্ট ফি হিসেবে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছে।

আফজাল হোসেন, আব্দুল মালেকসহ কয়েকজন অভিভাবক জানালেন, করোনা কারণে তাদের পক্ষে ভর্তির টাকাই জোগাড় করা কষ্টকর। তার ওপর আবার ডোপ টেস্টের জন্য এতো টাকা দিতে হচ্ছে। সংসারের কোনো এক খাতের খরচ বন্ধ রেখে সন্তানদের জন্য টাকা জোগাড় করতে হচ্ছে।

এই সুযোগে অনেকে ডোপ টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট বিক্রির ব্যবসাও শুরু করেছেন। এমনই কিছু ভুয়া রিপোর্ট বিক্রির সময় গত বৃহস্পতিবার রাতে আজিজুল হক কলেজ এলাকা থেকে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

রাসেল মাহমুদ নামের ওই যুবক কামারগাড়ি এলাকার একটি কম্পিউটার ও ফটোস্ট্যাট দোকানের মালিক এবং আজিজুল হক কলেজের মাস্টার্সের পরীক্ষার্থী।

বগুড়া র‌্যাব ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার সোহরাব হোসেন বলেন, ‘সরকারি আজিজুল হক কলেজে প্রথম বর্ষে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীরা মাদক গ্রহণ করে কি না তা নিশ্চিত হতে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়। এ সুযোগকে কজে লাগিয়ে কামাড়গাড়িতে কিছু কম্পিউটার অ্যান্ড ফটোস্ট্যাট দোকানদার বিভিন্ন হাসপাতালের নাম ব্যবহার করে ডোপ টেস্টের ভুয়া ফল বিক্রি করা শুরু করেছে।

‘প্রতি রিপোর্ট ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। এমন সংবাদ পেয়ে অভিযান চালিয়ে রাসেলকে গ্রেপ্তার করা হয়।’

আজিজুল হক কলেজ ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করলেও শাহ সুলতান কলেজ ও সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ কর্তৃপক্ষ তা করেনি।

সরকারি শাহ সুলতান কলেজের অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে করোনার কবলে অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। সাধারণ মানুষরা আর্থিক সংকটে রয়েছেন। দেশ এখনও করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতেই রয়েছে। এমন অবস্থাতে শিক্ষার্থীদের পরিবারের আর্থিক বিষয় বিবেচনা করে ও তাদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি থেকে বাঁচাতে আমরা ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করিনি।

‘যদিও ডোপ টেস্ট করার নির্দেশনা আমরা পেয়েছি। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অঙ্গীকারনামা নেয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে তাদের শরীরে মাদকের উপস্থিতি পাওয়া গেলে আমরা তাদের ভর্তি বাতিল করবো। তাদের কাছ থেকে লিখিত নিয়েই আমরা ভর্তি করছি।’

সরকারি আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ শাহজাহান আলী বলেন, ‘অন্য কলেজগুলো কী করছে আমি সেই বিষয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না। সেটা তাদের বিষয়। আমি সরকারি নির্দেশনা পেয়েছি, এ কারণে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করেছি। দেশে এখন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে, যা উন্নত দেশগুলোতে অনেক আগে থেকেই কার্যকর রয়েছে।’

আজিজুল হক কলেজের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে জেলা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নেতারা গত বৃহস্পতিবার এক বিক্ষোভ সমাবেশ করে। ডোপ টেস্টের সিদ্ধান্তকে অনৈতিকভাবে আর্থিক বোঝা উল্লেখ করে এই প্রতিবাদ করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন কলেজে শাখার সদস্য সচিব নিয়তি সরকার নিতু।

তিনি বলেন, ‘প্রায় ২ বছর ধরে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। করোনাকালে সারা দেশের শিক্ষার্থীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এরইমধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এক দিকে আর্থিক অনটন পরিবারে, অন্যদিকে ভর্তির টাকা সংগ্রহ করা যখন দূরহ বিষয় হয়ে ওঠেছে।’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির বগুড়া জেলার সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ফরিদ বলেন, ‘ডোপ টেস্ট তো সরকার বাধ্যতামূলক করেনি, কিন্তু আজিজুল হকের প্রিন্সিপাল অতি উৎসাহী হয়ে এসব করছেন। গরীব ছাত্ররা এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অথচ কলেজে মেধা বিকাশে প্রিন্সিপালের কোনো উদ্যোগ নেই।’

তিনি দাবি করেন, ডোপ টেস্ট বাতিল করতে হবে অথবা কলেজের ফান্ড থেকে ডোপ টেস্টের টাকা পরিশোধ করতে হবে।

এ বিভাগের আরো খবর