বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এহসান গ্রুপ যশোরে হাতিয়েছে ‘৩২২ কোটি টাকা’

  •    
  • ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০১:৪৭

এহসানের ক্ষতিগ্রস্ত লগ্নিকারী সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক মফিজুল ইসলাম ইমন জানান, প্রতারকদের ধরতে সাত বছর তারা মাঠে রয়েছেন। মানুষের বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে ইসলামী আদর্শের সঙ্গে বেঈমানি করে ৩২২ কোটি ১২ লাখ ৭৫০ টাকা হাতিয়ে নিয়ে অধিকাংশ প্রতারক প্রকাশ্যেই ঘুরছে।

ইসলামী শরিয়তের লেবাসে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে আটক গালিব আহসানের ফাঁদে পা দিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন যশোরের ১৬ হাজার লগ্নিকারী।

এ প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে প্রায় ৩২২ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ তুলেছে যশোরের লগ্নিকারী গ্রাহকদের সংগঠন ‘এহসানের ক্ষতিগ্রস্ত লগ্নিকারী সংগ্রাম কমিটি’।

যশোরে ২০১২ সালে কার্যক্রম শুরু করে এহসান ইসলামী মাল্টিপারপাস কোঅপারেটিভ সোসাইটি এবং এহসান ইসলামী রিয়েল এস্টেট লিমিটেড।

এহসান এস বাংলাদেশ, এহসান রিয়েল এস্টেট এবং এহসান মাল্টিপারপাস শরিয়া মোতাবেক সুদবিহীন ব্যবসার ধুয়ো তুলে মাসে এক লাখে ১৬ শ টাকা মুনাফার প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা জমা নিতে থাকেন।

এ কাজে যশোরের বিভিন্ন মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হয়। ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের মাধ্যমে শরিয়া মতে ব্যবসার কথা বলে এবং ইহকাল পরকালের কথা বলে সাধারণ মানুষকে তাদের ব্যবসায় জড়িত হতে উদ্বুদ্ধ করেন। সাধারণ মানুষ সরল বিশ্বাসে তাদের গচ্ছিত কাড়ি কাড়ি টাকা ব্যবসায় লগ্নি করে।

এহসান গ্রুপের বিরুদ্ধে আন্দোলন

সংগ্রাম কমিটি জানায়, এহসান গ্রুপ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী লভ্যাংশ ও বিনিয়োগের টাকা ফেরত না দিয়ে ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে পালিয়ে যায়। ওই সময় গ্রাহকদের টাকা আদায় আন্দোলন কমিটি করা হয়। হিসেব জড়ো হয় প্রায় ৫০০ কোটি টাকার।

এক পর্যায়ে সব কার্যক্রম বন্ধ করে গা ঢাকা দেয় গ্রুপটির অর্ধশত কর্মচারীসহ পাঁচ ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। এ ঘটনায় রাস্তায় নামেন বিশাল অংকের টাকা লগ্নিকারীরা। যশোরাঞ্চলের ১৬ হাজার লগ্নিকারীর মাথায় হাত ওঠে।

যশোরাঞ্চল থেকে ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় এহসান গ্রুপের এহসান এস বাংলাদেশ ও রিয়েল এস্টেটের চেয়ারম্যান নামধারী চট্টগ্রামের মুফতি আবু তাহের নদভীসহ ২৭ জনের নাম বেরিয়ে এসেছে।

অন্যরা হলেন এহসান এস এর ব্যবস্থাপক শিমুলিয়ার আতাউল্লাহ, প্রধান নির্বাহী ব্যবস্থাপক মাগুরার কাজী রবিউল ইসলাম, অর্থ মহাব্যবস্থাপক মাগুরার মুফতি জুনায়েদ আলী, মহাব্যবস্থাপক প্রশাসন সাতক্ষীরার মুফতি আমিনুল হক ওরফে আমজাদ হোসেন, পরিচালক আজিজুর রহমান, মঈন উদ্দিন, আমিনুল হক, আব্দুল মতিন, কালিমুল্লাহ, মিরাজুল ইসলাম, খুলনার মুফতি গোলাম রহমান, মাঠকর্মী যশোরের বাবর আলী, সেলিমুল আজম চৌধুরী, সিরাজুল ইসলাম, শামসুর রহমান, মকছেদ আলী।

এ অঞ্চলের মানুষের কাছ থেকে বিশাল অংকের টাকা আদায় করে আত্মসাত করা এমডি নামধারী রবিউল ইসলাম, খরিরুজ্জমান, জুনায়েদ আলী, ইউনুস আলী ও আতাউল্লাসহ ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন আন্দোলনকারীরা।

এহসানের ক্ষতিগ্রস্ত লগ্নিকারী সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক বারান্দীপাড়া কদমতলার মফিজুল ইসলাম ইমন জানান, প্রতারকদের ধরতে সাত বছর তারা মাঠে রয়েছেন। অনেক লগ্নিকারী এরই মধ্যে মারাও গেছেন। মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন, আর বিছানায় কাতরাচ্ছেন অনেক লাগ্নিকারী। মানুষের বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে ইসলামী আদর্শের সঙ্গে বেঈমানি করে ৩২২ কোটি ১২ লাখ ৭৫০ টাকা হাতিয়ে নিয়ে অধিকাংশ প্রতারক প্রকাশ্যেই ঘুরছে।

গালিব আহসানের সব সহযোগী মুফতি আবু তাহের নদভীসহ জড়িতদের দ্রুত আটক দাবি করেন তিনি। তিনি আরও জানান শত শত লগ্নিকারী ও তাদের পরিবারের লোকজন এখনও পথ চেয়ে আছেন ওই টাকা ফেরতের আশায়।

এহসান গ্রুপের বিরুদ্ধে যশোরে মামলা

এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে বেজপাড়ার মৃত ইব্রাহিম গোলদারের ছেলে শামসুর রহমান ৪০৬/৪২০/৩২৩/৫০-৬/১৮৬০ পেনাল কোডের ধারায় এজাহার দেন। এভাবে ১২টি মামলা করা হয় ওই চক্রের বিরুদ্ধে। যশোরের বেজপাড়ার মৃত ইব্রাহিম গোলদারের ছেলে শামসুর রহমান ওই ১৩ জনের নামে দুইটি মামলা করেন। মামলা দুইটি তিন পুলিশ পরিদর্শক ও কয়েকজন এসআই প্রথমে তদন্ত করেন। মামলাগুলো এখনও বিচারাধীন।

১৬ হাজার লগ্নিকারীর মধ্যে একজন যশোর শহরের পুরাতন কসবা শহীদ মশিউর রহমান সড়কের আফসার উদ্দিন। তিনি জানান, ইসলামী নানা বুলিতে পড়ে ২০১৩ সালে এহসান গ্রুপে সাড়ে ১২ লাখ টাকা লগ্নি করেন ।

তিনি আরও জানান, ১৬ হাজার গ্রাহককে পথে বসিয়ে ২০১৪ সালে লাপাত্তা হয় এহসান এস যশোর অফিস। সেই থেকে টাকা ফেরত পেতে সব মহলে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন, টাকা ফেরত পাননি। এখন তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত, বিছানায় শয্যাশায়ী। কান্নায় কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে জানান, টাকার ওভাবে ওষুধ কিনতে পারছেন না। প্রলোভনে পড়ে সর্বস্ব তুলে দিয়েছিলেন ওদের হাতে।আফসার উদ্দিনের আরও জানান, তার মতো আরও পাঁচ জন মাথাপ্রতি তিন থেকে সাড়ে ১৩ লাখ টাকা পর্যন্ত লগ্নি করে আজ কঠিন সময় পার করছেন। সংসারের সব খুইয়ে লগ্নি করে আজ দু’মুঠো ভাতের নিশ্চিয়তা নেই তাদের। এহসানের প্রতারকদের প্রতি অভিশাপ আর আহজারিতে তাদের সময় কাটছে।

রাগীব এহসান আটক হলেও যশোরে প্রতরণা করা মূফতি আবু তাহের নদভীসহ সব সহযোগীর শাস্তি চেয়েছেন আফসার উদ্দিন।

এছাড়াও এহসান গ্রুপে বিভিন্ন অংকের টাকা লগ্নি করেছেন খড়কীর শামসুর রহমান, আব্দুল মতিনের ছেলে শফিকুল ইসলাম, হামিদপুর এলাকার কামরুজ্জামান, রূপদিয়া এলাকার শের আলী, বারান্দীপাড়া এলাকার বিধবা আমিরুননেছা, কুলসুম বেগম, পুরাতন কসবা মিশনপাড়ার আফসার উদ্দিন, সীতারামপুরের আবুল কালাম।

ছাড়াও রয়েছেন বালিয়া ভেকুটিয়া এলাকার মোহাম্মদ হানিফ, বারান্দীপাড়ার আমিনুন্নেছা, রাজারহাট এলাকার শাহাজাদী বেগম, বারান্দীপাড়ার আলেয়া বেগম, পূর্ববারান্দী মাঠপাড়ার নাছিমা খাতুন, একই এলাকার রায়হানুল ইসলাম, নাজির শংকরপুর এলাকার তরিকুল ইসলাম, চাঁচড়ার রাজা বরদাকান্ত রোডের আম্বিয়া, ঝুমঝুমপুর মুক্তিযোদ্ধা কলোনির রহিমা খাতুন, রুপদিয়ার নুর ইসলাম, বাঘারপাড়া ঘোষ নগরের শেফালী রানী শীল ও একই গ্রামের দূর্গা রানী অধিকারী।

দূর্গা রানী অধিকারী জানান, প্রতারক চক্রের বিচার দেখে যেতে পারলে শান্তি পেতেন।

অভিযোগ স্বীকার মুফতি রাগীব আহসানের

পিরোজপুরে 'এহসান রিয়েল এস্টেট’ নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে এভাবে টাকা তোলার অভিযোগে র্যাবের হাতে ধরা পড়েন মুফতি রাগীব আহসান।

১৯৮৬ সালে পিরোজপুরের একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। ১৯৯৬ থেকে ৯৯ সাল পর্যন্ত হাটহাজারীর একটি মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস এবং ১৯৯৯-২০০০ পর্যন্ত খুলনার একটি মাদ্রাসা থেকে ধর্মীয় আইনে পড়াশোনা শেষ করে মুফতি হন।

এরপর পিরোজপুরে একটি মাদ্রাসার মসজিদে ইমামের চাকরি শুরু করেন। ২০০৬-২০০৭ সালে ইমামতির পাশাপাশি 'এহসান এস মাল্টিপারপাস' নামে এমএলএম কোম্পানিতে মাসে ৯০০ টাকা বেতনের চাকরি নেন। ২০০৮ সালে নিজেই প্রতিষ্ঠা করেন 'এহসান রিয়েল এস্টেট' নামে এমএলএম কোম্পানি।

এই কোম্পানির মাধ্যমে আনুমানিক ১৭ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তার বিরুদ্ধে ১৫টির অধিক মামলা রয়েছে এবং তিনি এর আগে একবার জেলও খেটেছেন।

২ সেপ্টেম্বর রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১০-এর একটি দল রাজধানীর তোপখানা রোড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে তাকে। ধরা পড়েন সহযোগী আবুল বাশার খানও।

পরদিন বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে রাগীবের বিরুদ্ধে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে হাজির করা রাগীব ও তার সহযোগী আবুল বাশার

তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে এমএলএম কোম্পানির নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় ভুক্তভোগীরা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, পিরোজপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলায় মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেন। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।’

র্যাব কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাগীব আহসান তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ স্বীকার করে নানা তথ্য দিয়েছেন।

এ বিভাগের আরো খবর