শিশু-কিশোরদের বৃদ্ধির সময়টাতে প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বেড়ে ওঠার এই সময়ে অনেকেরই ইউনিফর্ম ছোট হয়ে গেছে। পায়ে আঁটছে না জুতা।
রোববার থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ায় অনেক অভিভাবকই ভিড় জমিয়েছেন পোশাকের দোকান ও টেইলার্সে। কিনছেন নতুন ইউনিফর্ম ও জুতা।
নওগাঁ শহরের তুলাপট্টি, দেওয়ান মার্কেট ও পুরাতন সোনালী ব্যাংক রোডের দোকানগুলোতে শনিবার সারাদিন দেখা যায় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের ভিড়।
শুধু পোশাক নয়, অনেকেই কিনছেন বই-খাতা ও শিক্ষার আনুষঙ্গিক উপকরণও।
শহরের জনকল্যাণ মডেল স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সাদিক হোসেন। মায়ের সঙ্গে কাপড়পট্টিতে নতুন ইউনিফর্ম বানাতে এসে সাদিক নিউজবাংলাকে বলে, ‘প্রায় দেড় বছর হলো স্কুলে যাই না। গতকাল ইউনিফর্ম পরে দেখি অনেক ছোট হয়ে গেছে। সেজন্য আম্মুর সঙ্গে বাজারে এসেছি নতুন ইউনিফর্ম বানিয়ে নিতে।
‘নতুন ইউনিফর্ম পেয়ে কী যে আনন্দ লাগছে! কাল থেকে আবার স্কুলে যাব।’
সাফিন আহম্মেদ শুভ পড়েন শহরের চকএনায়েত উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে। সে বাবার সঙ্গে এসেছে ইউনিফর্ম কিনতে।
শুভ বলে, ‘আগের যে প্যান্ট-জামা ছিল শরীর বেড়ে যাওয়ায় তা আর হচ্ছে না। বাবাকে সঙ্গে নিয়ে ইউনিফর্ম কিনতে এসে দেখি দোকানে অনেক ভিড়। দামটাও বেশি মনে হচ্ছে।
‘বাড়িতে বসে স্কুলের অ্যাসাইনমেন্ট করতে হয়েছে। চাপ না থাকায় পড়াতে মন বসছিল না। বেশিরভাগ সময় টিভি দেখে সময় পার করতে হয়েছে। কাল থেকে স্কুল খুলবে বলে খুব আনন্দ লাগছে। কতদিন যে স্কুলে যাই না!’
নতুন ইউনিফর্ম বানাতে টেইলার্সের দোকানে ভিড়। ছবি: নিউজবাংলা
রোকেয়া বেগম নামের এক অভিভাবক জানান, তার ছেলে এ বছর শহরের সরকারি কেডি স্কুলে লটারিতে তৃতীয় শ্রেণিতে চান্স পেয়েছে। চান্স পেলেও করোনামহামারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় একদিনও ছেলে স্কুলে যেতে পারেনি। তাই কেনাই হয়নি ইউনিফর্ম।
এখন কিনতে এসেছেন ইউনিফর্ম। নতুন স্কুলে নতুন ইউনিফর্মে যাবে তার ছেলে।
গত কয়দিন ধরে ব্যস্ত সময় পার করছেন নগরীর দর্জি ও পোশাক বিক্রেতারা।
ব্রিজের মোড়ের বিসমিল্লাহ মার্কেটের সেঞ্চুরি টেইলার্সের দর্জি রুমান হোসেন জানান, গত কয়দিনে তিনি স্কুলের ১৫টি জামা-প্যান্টের অর্ডার পেয়েছেন। দ্রুততার সঙ্গে ডেলিভারি দিতে হচ্ছে এগুলো।
তুলাপট্টি মার্কেটের সুরমা গার্মেন্টসের মালিক বাবর আলী বলেন, ‘করোনার মধ্যে স্কুল-কলেজের পোশাক বিক্রি বন্ধ ছিল। এখন সব খুলে দেয়ায় সবাই ভিড় করে পোশাক কিনছেন।’
করোনার কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রোববার থেকে চালু হচ্ছে সশরীরে ক্লাস। এক সপ্তাহ আগে আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। একই দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি হিসেবে ১৯টি নির্দেশনা জারি করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। এসব নির্দেশনা মেনেই প্রস্তুতি নিয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো।
নওগাঁ জেলা শিক্ষা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এই জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১ হাজার ৩৭৪টি, সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৪৪টি, কলেজ ১০৯টি, মাদ্রাসা ৩৫০টি ও স্কুল অ্যান্ড কলেজ ২২টি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিক মো. ইউসুফ রেজা বলেন, ‘প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজ শেষ হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী কেনা হয়েছে। আমাদের প্রস্তুতি সন্তোষজনক।’
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান জানান, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি নিজে জেলার বেশ কয়েকটি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা পরিদর্শন করেছেন। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সব ধরনের প্রস্ততি নেয়া শেষ।
তিনি বলেন, ‘এই দীর্ঘসময়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সঙ্গে রাখার জন্য স্কুল থেকে নিয়মিত অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হয়েছে, অনলাইন ক্লাস চলছে। প্রায় দেড় বছর পর তারা আবার আগের পদ্ধতিতে পাঠদানে ফিরবে। শিক্ষার্থী-শিক্ষক সবার মাঝেই অন্যরকম আনন্দ কাজ করছে।’