শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান খুলছে টেলিভিশনে এমন সংবাদ দেখে সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার চরসাপড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র আকাশ শেখ এসেছিল তার স্কুলটি দেখতে। সঙ্গে ছিল তার দুই সহপাঠী সিরাতুল মুস্তাকিম জিহাদ আর মো. আকাশ। কিন্তু স্কুলের চাল সমান পানি দেখে তারা হতবাক। ক্লাসে ফেরার আনন্দ তাদের নিমেষেই মাটি হয়ে গেছে। চোখে-মুখে ফুটে ওঠেছে অনিশ্চয়তার দোলাচল।
দেড় বছর পর রোববার শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে স্কুলে স্কুলে প্রস্তুতি চললেও স্কুলে ফেরার আনন্দ থেকে বঞ্চিত সিরাজগঞ্জের এমন হাজারও শিশু।
যমুনা, ইছামতি ও ফুলজোড় নদীর পানি কমতে শুরু করায় সিরাজগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ, শ্রেণিকক্ষ আর রাস্তাঘাট এখনো পানির নিচে সেসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
সদর উপজেলার ছোনগাছা পারপাচিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের চারপাশে পানি থই থই করছে। যাতায়াতের রাস্তাটি হাঁটু পানির নিচে। আর স্কুলটির দুটি শ্রেণিকক্ষে পানি ঢুকেছে। সদর উপজেলার চরসাপড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরও একই অবস্থা। যমুনার পানি কমলেও স্কুলটির অর্ধেকটাই এখনো পানির নিচে।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার ২৫টি মাধ্যমিক, কারিগরি ও কলেজ এবং ১০৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। কিছু কিছু বিদ্যালয়ের পানি নেমে গেলেও যাতায়াতের সড়ক, রাস্তাঘাট ও বসতবাড়িতে এখনো পানি থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের একটা অংশের ক্লাসে ফেরা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এদিকে, গত দুই বছরে চৌহালী উপজেলার রেহাইমৌশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বারবয়লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আরমাশুকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ব্রিদাশুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ প্রায় ২৫টি স্কুল যমুনাগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এবারের বন্যায়ও অন্তত ৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদী ভাঙনের মুখে পড়েছে। এই স্কুলগুলোর টিন-কাঠসহ আসবাবপত্রের ঠাঁই হয়েছে কারও বাড়ির উঠান, খোলা মাঠে অথবা ওয়াপদা বাঁধে। এ কারণে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশে নিয়ে শঙ্কায় অভিভাবকরা।
বন্যা কবলিত ছোনগাছা পারপাচিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সালেহা খাতুন নিউজবাংলাকে জানান, স্কুলের মাঠ থেকে বন্যার পানি নেমে গেলেও চারপাশ এখনও পানিবন্দী। তবে পানি নেমে যাবে কি-না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও স্কুল খোলার সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
চৌহালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর ফিরোজ জানান, নদীতে বিলীন হওয়া স্কুলগুলো অন্যের বাড়ি অথবা খোলাস্থানে ঘর তুলে পাঠদান চালু রাখা হবে।
সিরাজগঞ্জ জেলা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ইমরান খন্দকার জানান, ইতোমধ্যে যমুনার পানি কমে যাওয়ায় অনেক বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ থেকে পানি নেমে গেছে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা একে এম শফী উল্লাহ বলেন, বন্যার কারণে কোন স্কুলে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা সম্ভব না হলে পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই সব প্রতিষ্ঠানে কার্যক্রম চালু করা হবে।