মাদারীপুরে লুঙ্গি দিয়ে ক্লোজড সার্কিট (সিসিটিভি) ক্যামেরা ঢেকে চার শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ উঠেছে এক মাদ্রাসাশিক্ষকের বিরুদ্ধে।
শাহ্ মাদার দরগা শরিফ মাদ্রাসার শিক্ষক বেলাল হোসাইন শুক্রবার আসরের নামাজের পর তাদের মারধর করেন বলে অভিযোগ। বেধড়ক পিটুনি থেকে বাঁচতে ওই সময় দুই শিক্ষার্থী পালিয়ে বাড়ি চলে যায়।
মারধরের শিকার চার শিক্ষার্থী হলো ডাসার উপজেলার পশ্চিম বোথলা গ্রামের শাহাদাৎ ব্যাপারীর ১০ বছরের ছেলে আসিফ ব্যাপারী, আয়নাল ব্যাপারীর ১২ বছরের ছেলে সাকিব, রাজার চরের রাজু ও কালকিনি উপজেলার খাসের হাট গ্রামের সাইফুল। তারা সবাই মাদ্রাসার প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
শিশুশিক্ষার্থী আসিফ ব্যাপারী বলে, ‘অহেতুক হুজুর আমাকে মেরেছেন। কুঁচকিতে ঘা হওয়ায় আমি অসুস্থ ছিলাম। এ জন্য আসরের নামাজ পড়তে পারেনি। তাই হুজুর সিসি ক্যামেরা লুঙ্গি দিয়ে ঢেকে চারজনকে বেধড়ক পেটান।’
সে আরও বলে, ‘আমার হাত ও পিঠে দাগ হয়ে গেছে। হুজুর আমাদের হুমকি দেন যে আমাদের মতো দুই-একজনকে মেরে দরকার হয় তিনি জেলে যাবেন।’
আসিফের বাবা শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘এভাবে যদি মাদ্রাসায় ছাত্রদের মারধরের শিকার হতে হয়, তাহলে আর আমাদের ছেলেমেয়েদের ভর্তি করব না।’
এ বিষয়ে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক আল আমিন বলেন, ‘এটা একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। অভিযুক্ত শিক্ষক বেলাল হোসাইন বর্তমানে পলাতক।’
মারধরের সময় সিসিটিভি ক্যামেরা ঢেকে রাখার তথ্যও নিশ্চিত করেছেন তিনি।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল হোসেন মিঞা বলেন, ‘বিষয়টি আমি এখনও জানি না। যদি কেউ লিখিত অভিযোগ করে, তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
দেশে বিভিন্ন মাদ্রাসায় শিশুশিক্ষার্থীদের মারধরের ঘটনা নতুন নয়। প্রায়ই মাদ্রাসার শিক্ষকদের বিরুদ্ধে তুচ্ছ কারণে শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগ ওঠে।
শিশুশিক্ষার্থীদের ওপর মাদ্রাসাশিক্ষকদের চালানো নির্মম নির্যাতনের একাধিক ভিডিও ফেসবুকে ভাইরালও হয়েছে। একাধিক শিক্ষককে কারাগারেও পাঠিয়েছে আদালত।
এ বছরের মার্চে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় একটি মাদ্রাসায় এক শিশুকে বেদম পিটুনির ভিডিও ভাইরাল হয়। পরে ওই শিক্ষককে আটক করা হয়।
এর পরপরই সাতকানিয়ার একটি মাদ্রাসায় চার শিক্ষার্থীকে নির্মমভাবে পেটানো হয়। এ ঘটনায় নাম আসা শিক্ষককেও কারাগারে পাঠানো হয়।
গত ১০ আগস্ট ঝালকাঠি সদর উপজেলার একটি মাদ্রাসায় ১০ ছাত্রকে বেত্রাঘাত করেন এক শিক্ষক।
স্থানীয়রা জানান, করোনাকালীন সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে কে এ খান হাফেজি মাদ্রাসা খোলা রেখে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছিলেন শিক্ষক মোহাম্মদ উল্লাহ। শনিবার বেলা ৩টার দিকে ৯ থেকে ১০ বছরের ১৩ শিক্ষার্থী মাদ্রাসার ভেতরে খেলছিল।
তাদের কথার শব্দে মোহাম্মদ উল্লাহর ঘুম ভেঙে যায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মাদ্রাসার একটি কক্ষের দরজা আটকে ১০ ছাত্রকে বেত দিয়ে পিটিয়ে জখম করেন তিনি। পরে তাকে পুলিশে দেন স্থানীয়রা।