করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমায় প্রায় দেড় বছর পর খুলতে যাচ্ছে স্কুল-কলেজ। আবার স্কুল প্রাঙ্গণ মুখরিত হবে শিশু-কিশোরের কলকাকলিতে।
রোববার থেকে খোলার জন্য ধুয়েমুছে প্রস্তুত করা হয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে উচ্ছ্বাস যেমন আছে তেমনি আছে স্বাস্থ্যবিধি মানা নিয়ে অনিশ্চয়তা ও দুশ্চিন্তা।
মৌলভীবাজার পৌরসভার গির্জাপাড়া এলাকার জনি দত্তের দুই সন্তান পড়ে স্কুলে। তিনি নিউজবাংলাকে জানান, অনেক দিন পর স্কুল খোলায় সন্তানরা আনন্দিত। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানার যে চিত্র তাতে শিশুদের করোনা থেকে কতটা দূরে রাখা যাবে তা নিয়ে চিন্তা হচ্ছে।
সদর উপজেলার কসবা গ্রামের গোলাম ইমরান আলী বলেন, ‘করোনার শুরু থেকে পরিবারের সবাই কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেছি। এখন স্কুল খোলার পর যদি এসব মানা না হয় তাহলে সেখান থেকে বাসায় ভাইরাস আসতে পারে। এই বিষয়টাই ভাবাচ্ছে।
‘তবে অভিভাবক হিসেবে আমার পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব সেটা তো করবই। স্কুলে থাকাকালীন শিক্ষকরাও একটু খেয়াল রাখলে সবার জন্য ভালো হয়।’
স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে বলে নিশ্চিত করছেন শিক্ষা কর্মকর্তারা।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফজলুর রহমান জানান, মৌলভীবাজার জেলায় ১ হাজার ৫১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৮৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ২৩টি স্কুল অ্যান্ড কলেজ আছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুর রহমান জানান, সব স্কুল চালুর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। শ্রেণিকক্ষ জীবাণুমুক্ত করার পাশাপাশি সুরক্ষাসামগ্রী রাখার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
শুধু স্কুল কর্তৃপক্ষ নয়, স্থানীয় সরকার বিভাগের বিভিন্ন বিভাগও প্রতিষ্ঠান জীবাণুমুক্ত করতে উদ্যোগ নিয়েছে।
পৌর কাউন্সিলর সালেহ আহমেদ পাপ্পু জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণার পর থেকেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু হয়। এখন শুধু পাঠদান শুরুর অপেক্ষা।
করোনাভাইরাস সুরক্ষার পাশাপাশি মশা নিধন কার্যক্রমও পরিচালিত হয়েছে বিভিন্ন স্কুলে। জেলার কুলাউড়া উপজেলার কুলাউড়া পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ২৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুইদিন ধরে মশানিধন অভিযান চালানো হয়েছে।
মশা তাড়াতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চালানো হয়েছে মশানিধন কার্যক্রম
কুলাউড়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ফারজানা রহমান তাসলিমা জানান, দীর্ঘদিন কলেজ বন্ধ থাকায় প্রচুর মশা হয়েছিল। মেয়রের উদ্যোগে চলেছে মশানিধন কার্যক্রম।
কুলাউড়া পৌরসভার মেয়র সিপার উদ্দিন আহমদ জানান, দেশে এখন ডেঙ্গুর প্রকোপ চলছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় বিভিন্ন ধরনের মশার বিস্তার হয়েছে। তাই শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে মশানিধন কার্যক্রম চালানো হয়।
স্কুলে দীর্ঘ বিরতি শেষ হতে চলায় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি উচ্ছ্বসিত শিক্ষকরাও।
আলী আমজাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুবীর ভট্টাচার্য বলেন, ‘চাকরিজীবনে এত লম্বা ছুটি এর আগে কখনও আসেনি। ভবিষ্যতেও যেন না আসে সেই প্রার্থনা করি। কাজের ফাঁকে ফাঁকে ছুটি উপভোগ করি কিন্তু এত বেশি ছুটিতে বিরক্ত চলে এসেছে।’
ধুয়েমুছে জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে কয়েক দফা আলোচনা করেছি, মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা দিয়েছি ও তা বাস্তবায়নে নিয়মিত মনিটরিং করা হয়েছে।
‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর আমি নিজে সর্বোচ্চ সংখ্যক স্কুল-কলেজে গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি মনিটরিং করব। স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে কোনো ছাড় দেয়া যাবে না। শিশুরা দেশের ভবিষ্যৎ, তাদের সুরক্ষা সবার আগে।’