বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীদের মিশরে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির রাষ্ট্রদূত হাইথাম গোবাসি।
তিনি বলেছেন, ‘বিনিয়োগকারীদের জন্য মিশরে অনেক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এখানে অনেকগুলো শুল্কমুক্ত বাণিজ্য এলাকা রয়েছে। আমরা খুব ভালো প্রণোদনাও দিচ্ছি।’
শনিবার সকালে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ঢাকা-কায়রো রুটে ইজিপ্ট এয়ারের ফ্লাইট শুরুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা অনুষ্ঠানে হাইথাম এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি জানি, বাংলাদেশ পাট এবং তৈরি কাপড় শিল্পে অনেক ভালো করছে। আমি তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, এখন মিশরে যাওয়া এবং সেখানে বাস করা অনেক সহজ। শুধু কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করাই নয়, সেখানে বসবাস করাও এখন অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক সহজ, বিশেষ করে বিদেশিদের জন্য।’
মিশরের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘কয়েক দিন আগে বহুজাতিক কোম্পনি আমাজনও মিশরে তাদের নতুন একটি শাখা খুলেছে। মধ্যপ্রাচ্য এবং মিশরের চাহিদা পূরণে এটি কাজ করবে।’
রাষ্ট্রদূত হাইথামের মতে বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীরা মিশরে বিনিয়োগ করলে দেশটির বিনিয়োগকারীরাও বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে।
তিনি বলেন, ‘এখানে বিনিয়োগ করলে মিশর যেমন লাভবান হবে, অন্যদিকে মিশরের বিনিয়োগকারীরাও বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত হবে।
‘বাংলাদেশে প্রায় ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে। তবে সমস্যা হচ্ছে মিশরীয়দের কাছে এ বিষয়ে খুব কম তথ্যই রয়েছে। এমনকি সেখানের অনেকেই বাংলাদেশিদের অতিথিপরায়ণতার বিষয়ে জানে না। দেশের জন্যই বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীদের মিশরে আসা উচিত।’
মিশরের জঙ্গিবাদ পরিস্থিতির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমি আশ্বস্ত করতে চাই, মিশর এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি নিরাপদ। কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো মূলত উত্তরাঞ্চলের ছোট একটি এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিল।’
২০১৩ সালে দেশটির নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনাবাহিনী। এরপর থেকেই আইএসসহ বিভিন্ন জঙ্গি ও বিদ্রোহী গোষ্ঠি বিভিন্ন সময়ে দেশটির বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালিয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটিয়েছে।
এসব হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন দেশটির সংখ্যালঘু খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা। বিভিন্ন সময় বিদেশি পর্যটকদের ওপরেও হামলার ঘটনা ঘটেছে।
২০১৭ সালের নভেম্বরে দেশটির সিনাই উপদ্বীপে একটি মসজিদে জঙ্গি হামলায় প্রায় ২০০ মানুষ প্রাণ হারান।
২০১৯ সালের জুনে ওই এলাকাতেই একটি পুলিশ চৌকিতে হামলায় অন্তত ১০ পুলিশ সদস্য নিহত হন। এ হামলাগুলোর কারণে দেশটিতে যাওয়া পর্যটকের সংখ্যা অনেকটাই কমে আসে।
দেশটির রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে ওই এলাকাগুলোতে পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি, যাতে কোনো বেসামরিক মানুষকে তারা স্পর্শও করতে না পারে। এটি অনেকটা এখানে বাংলাদেশে যেভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে সেটির মতোই।’
হাইথাম গোবাসি জানান, এশিয়া অঞ্চলের জন্য ভিসা নীতি পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে মিশর।
তিনি বলেন, ‘আগের চেয়ে এখনকার পরিস্থিতি আলাদা। এখন প্রচুর মানুষ বিদেশ ভ্রমণ করে। এ কারণে এশিয়া অঞ্চলের জন্য মিশরের যে ভিসা নীতি আছে সেটিও বদলাবে।’
মানবপাচার বন্ধে দুই দেশের সমন্বিত উদ্যোগ ফলপ্রসু হতে পারে বলে মন্তব্য করেন মিশরীয় রাষ্ট্রদূত।
তিনি বলেন, ‘মানবপাচারের যে বিষয়টি সামনে চলে আসছে সেটির বিষয়ে বলব, এটা মিশর এবং বাংলাদেশ উভয় দেশে কর্তৃপক্ষের সমন্বিত প্রয়াসের দাবি রাখে।
‘সমস্যা হলো, মানবপাচার বন্ধে বাংলাদেশের কাছ থেকে আরও কঠোর অবস্থান দরকার। এরই মধ্যে দুই দেশের প্রতিনিধিরাই এটি নিয়ে আলোচনা করেছে, কীভাবে এ বিষয়টিতে কাজ করা যায়।’