সংসদীয় কমিটির সুপারিশ আমলে নিয়ে সাভারের চামড়া শিল্প নগরী কেন বন্ধ করা হবে না- বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের (বিসিক) কাছে জানতে চেয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
শনিবার পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়। এতে বলা হয়, সাভার ট্যানারি কমপ্লেক্স কেন বন্ধ করা হবে না তা জানাতে ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে বিসিক চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করা হয়েছে।
গত ৯ সেপ্টেম্বর পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আশরাফ উদ্দিনের সই করা এক চিঠিতে এ অনুরোধ জানানো হয়।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে না করায় গত ২৩ আগস্ট পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চামড়া শিল্পনগরীটি বন্ধের সুপারিশ করে।
এতে বলা হয়, ভবিষ্যতে আইনের ধারা অনুযায়ী কমপ্লেক্সটি পরিচালিত হলে পুনরায় চালুর বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। বন্ধের আগ পর্যন্ত জরিমানার মাধ্যমে সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ আদায়েরও সুপারিশ করা হয়।
পরিবেশ দূষণের সমস্যার কারণে ঢাকার হাজারীবাগ থেকে চামড়া শিল্পনগরীতে কারখানাগুলো সরানো হয়েছিল, তবে তার কোনো সুফল মেলেনি।
চামড়াশিল্পকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পরিবেশে উন্নীত করতে ২০০৩ সালে সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয় বিসিক। হাজারীবাগের ট্যানারিমালিকদের অনীহার পরও ২০১৭ সালের এপ্রিলে সেখানে যেতে বাধ্য হয় তারা।
শুরুতে শর্ত ছিল শিল্পনগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ট্যানারিগুলো নিজেরাই ইটিপি স্থাপন করবে। ট্যানারিগুলো তা না করায় শিল্প মন্ত্রণালয় প্রকল্পের আওতায় সিইটিপি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ২০১০ সালে প্রকল্প সংশোধন করা হয়। তখন প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ৫৪৫ কোটি টাকা।
এর মধ্যে শিল্পনগরীর কোনো সুবিধাই নিশ্চিত না করে ট্যানারিগুলোকে বারবার স্থানান্তরের সময়সীমা বেঁধে দিতে থাকে শিল্প মন্ত্রণালয়। তাতেও কাজ না হওয়ায় উচ্চ আদালত হাজারীবাগের কারখানাগুলোর গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার আদেশ দেয়। এরপর ২০১৭ সালের এপ্রিলে কারখানাগুলো একযোগে স্থানান্তরিত হয়।
সিইটিপির বিভিন্ন কম্পোনেন্টের কাজ সমাপ্ত হওয়ার আগেই ১৩০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদন শুরু করে। আগে হাজারীবাগের বর্জ্য ও দূষিত কেমিক্যাল বুড়িগঙ্গা নদীর পানিতে মিশ্রিত হতো, এখন সাভারের চামড়াশিল্পের দূষণ ধলেশ্বরী নদীর পানিতে মিশে যাচ্ছে।
এই পরিস্থিতির কারণে, শিল্পনগরীটি বন্ধ করে দেয়ার সুপারিশ করে সংসদীয় কমিটি। পরিবেশ দূষণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারলে আবারও এই শিল্পনগরী খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পক্ষে তারা।
কমিটি মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে দৈনিক ৪০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য উৎপাদন হয়। সেখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা রয়েছে ২৫ হাজার ঘনমিটারের, অর্থাৎ দৈনিক ১৫ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য পরিবেশে মিশছে। গত তিন বছরে ১ কোটি ৬৪ লাখ ঘনমিটার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বাইরে থেকে গেছে।
গত ২৩ আগস্ট এই সুপারিশ করার দিন কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থা রয়েছে সাভারে। হেভি মেটাল এবং ক্রোমিয়াম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো ব্যবস্থাই নেই। দূষণ কমানোর জন্যই হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি আনা হলো। দূষণ তো কমল না। তাহলে আমরা এটা করতে গেলাম কেন?’