ডিসেম্বর থেকে ঢাকা-কায়রো রুটে প্রতিদিনের ফ্লাইট চালু করতে চায় দেশে ফ্লাইট অপারেশন শুরু করতে যাওয়া মিশরের রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান ইজিপ্ট এয়ার।
শনিবার সকালে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ঢাকা-কায়রো ফ্লাইট শুরুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছিল ঢাকায় মিশরের দূতাবাস। এ সময় ইজিপ্ট এয়ারে কায়রো হয়ে তৃতীয় গন্তব্যে যাওয়ার সময় বিনামূল্যে ট্রানজিট সুবিধা দেয়ার কথাও জানিয়েছে এয়ারলাইনসটি।
অনুষ্ঠানে ইজিপ্ট এয়ারের বাংলাদেশি জেনারেল সেলস এজেন্ট (জিএসও) অ্যালো ঢাকা এভিয়েশনের প্রধান নির্বাহী সৈয়দ আলী সামী বলেন, ‘১ নভেম্বরে চালুর পর থেকে সপ্তাহে দুটি করে ফ্লাইট চালু ঢাকা-কায়রো রুটে চলবে। তবে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে ১ ডিসেম্বর থেকে কায়রোতে প্রতিদিন ফ্লাইট পরিচালনা করার।
‘কায়রো হয়ে আমরা আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকি। বাংলাদেশি যাত্রীরা আমাদের এই লং হউল (লম্বা দূরত্বের) ফ্লাইটের সুবিধা নিতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ট্রানজিট যাত্রীদের কায়রোতে একরাত থাকতে উৎসাহিত করছি। তারা দুই দিন বা তিন দিনের ট্রানজিট প্যাকেজের সুবিধাও পাবেন।
‘আমরা বিনামূল্যে ২৪ ঘণ্টা ট্রানজিটের একটি অফার দিচ্ছি। এর অর্থ ঢাকা থেকে কেউ নিউইয়র্ক বা ইউরোপে গেলে ২৪ ঘণ্টার জন্য তিন বা পাঁচ তারকা মানের হোটেলে থাকার সুযোগ পাবেন, যেখানে বিনামূল্যে যানবাহন ও সকালের খাবার থাকবে। একই সঙ্গে তাদের পিরামিড এবং কায়রোর জাদুঘর ঘুরিয়ে দেখানো হবে।’
এর আগে ১৮ আগস্ট ঢাকা থেকে কায়রো সরাসরি ফ্লাইট চালু করতে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি সই হয়। ওই সময় জানানো হয়েছিল, ১ নভেম্বর থেকে চলবে ফ্লাইট। শনিবার তারই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এলো।
অনুষ্ঠানে মিশরের রাষ্ট্রদূত হাইথাম গোবাসি বলেন, ‘আমাদের মিশর সম্পূর্ণ নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত। কায়রোর বিমানবন্দরে যাত্রীদের করোনা টেস্টের জন্য আরটিপিসিআর ল্যাব রয়েছে। এছাড়াও গোটা দেশের সবার টিকা দেয়া রয়েছে। হোটেলগুলো ৫০ শতাংশ অতিথি নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। সব মিলিয়ে একজন পর্যটক খুব স্বাচ্ছন্দ্যে ইজিপ্টে ঘুরতে পারবেন।
‘আমাদের ভ্রাতৃপ্রতীম দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে ইজিপ্ট এয়াজের ফ্লাইট শুরু করা একটি বিশেষ মাইলফলক। ঢাকা ও কায়রোর মধ্যে ইজিপ্ট এয়ারের সরাসরি ফ্লাইট শুরুর মাধ্যমে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের জন্য বিশাল সুযোগের দ্বার উন্মোচিত হবে, বিশেষ করে যারা মিশর, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকা ভ্রমণে আগ্রহী।’
তিনি বলেন, ‘ইজিপ্ট এয়ারের ফ্লাইট শুরুর কারণে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা ও কার্গো পরিবহনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। মিশরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা শিক্ষা নেয়ার সুযোগ পাবেন এবং পর্যটকরা মিশৱেৱ বহুমুখী পর্যটনের সুবিধা ভোগ করবেন।’
ইজিপ্ট এয়ার জানিয়েছে, তাদের বর্তমান বহরে রয়েছে ৬৯টি আধুনিক উড়োজাহাজ। ফ্লাইট রয়েছে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আফ্রিকা, এশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৮০টি গন্তব্যে।
প্রাধমিকভাবে, কায়রোর স্থানীয় সময় প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসবে ফ্লাইট। বাংলাদেশ সময় রাত ১টা ৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে এটি।
একইভাবে প্রতি মঙ্গল ও শুক্রবার রাত ২টা ৩৫ মিনিটে ঢাকা ছেড়ে পরের দিন স্থানীয় সময় ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে কায়রোয় পৌঁছাবে ফ্লাইটটি।
এই রুটে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য প্রাথমিকভাবে ব্যবহার করা হবে বোয়িং সেভেন এইট সেভেন ড্রিমলাইনার ও এয়ারবাস থ্রি থ্রি জিরো মডেলের উড়োজাহাজ। এতে থাকবে ২০টি বিজনেস ক্লাসসহ মোট ২৮০ আসন। যাত্রীর পাশাপাশি ৬ টন সাধারণ কার্গোও পরিবহন করা যাবে ফ্লাইটে।
ঢাকা-কায়রো-ঢাকার রাউন্ড ট্রিপের ইকোনমি ক্লাসের টিকিটের দাম শুরু হবে ৬৬০ ইউএস ডলারে। বিজনেস ক্লাসের টিকিটের দাম শুরু ১ হাজার ৫০০ ডলার থেকে।
ইজিপ্ট এয়ার ঢাকা থেকে মিসরের সরাসরি যাত্রী ছাড়াও প্যারিস, ফ্রাঙ্কফুর্ট, জেনেভা, বার্সেলোনা, এথেন্স, ইস্তাম্বুল, দারুস সালাম, আদ্দিস আবাবা, আবুজা, নাইরোবি, আক্রা, কাম্পালা, নিগলি, খার্তুম, এনডিজামনা, বৈরুত, জেদ্দা, মদিনা, দাম্মাম, বাহরাইন, রিয়াদ, দুবাই, আম্মান, টরন্টো, নিউ ইয়র্কগামী ট্রানজিট যাত্রী পরিবহন করতে পারবে।