আফগানিস্তানে ক্ষমতায় এসে কট্টরপন্থি ধর্মীয় গোষ্ঠী তালেবানের সমালোচনা করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। তালেবানদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ না হলে বাংলাদেশও তালেবানি রাষ্ট্রে পরিণত হবে বলে শঙ্কার কথাও বলেছে তারা।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী অবশ্য এমনটি মনে করেন না। তালেবান যোদ্ধাদের তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তুলনা করেছেন। আর তিনি সিপিবিকেই কটাক্ষ করেছেন তালেবানের বিরুদ্ধে বলায়।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে পাশাপাশি দুটি কর্মসূচিতে যোগ দেয় দুই পক্ষ। আফগান নারীদের সংগ্রামের প্রতি সংহতি জানাতে কর্মসূচিতে যোগ দেন সিপিবি নেতারা। অন্যদিকে জাফরুল্লাহ চৌধুরী যোগ দেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধনে।
গত ১৫ আগস্ট দ্বিতীয়বারের মতো আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। কাবুল দখলের পর তারা নারীদের শিক্ষা ও চাকরি করার সুযোগ দেয়ার অঙ্গীকার করেছে, এমনকি সরকারে যোগ দেয়ার আহ্বানও জানিয়েছে। বলেছিল, বোরকা পরা বাধ্যতামূলক নয়।
তবে শেষ পর্যন্ত নব্বই দশকের কঠোর শাসনেই ফিরে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে তারা। নারী চাকরিজীবীদের ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। তাদের একা বাড়ির বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। নারী শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে যেতে দেয়া হলেও জানানো হয়েছে, কেবল চোখ খোলা থাক- এমন পোশাক পরতে হবে। কার্যত বোরকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আর নারীদের সরকারে নেয়া হয়নি, বরং বলা হয়েছে, নারীদের কাজ মন্ত্রিত্ব করা নয়, তাদের দায়িত্ব সন্তান ধারণ করা।
আফগান নারীরা অধিকারের দাবিতে যতবার মিছিল বের করেছে, ততবার তাদের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়া হয়েছে, করা হয়েছে বেত্রাঘাত।
তালেবানদের বিরুদ্ধে আফগান নারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সিপিবির সহসম্পাদক শাহ আলম বলেন, ‘আমরা সেদিনের অপেক্ষায় আছি যেদিন আফগান নারীরা অস্ত্র হাতে রাজপথে নেমে আসবে তাদের অধিকার আদায়ের দাবিতে।’
সিপিবি নেত্রী আমেনা বেগম বলেন, ‘আজ যদি তালেবানদের অন্যায়ের প্রতিবাদ না করা হয় তাহলে একদিন বাংলাদেশ তালেবান রাষ্ট্রে পরিণত হবে। নারীরা একা ঘর থেকে বের হতে পারবে না। তাদের ঘরে বন্দি করে রাখা হবে।’
সিপিবিকে জাফরুল্লাহর কটাক্ষ
সিপিবি তার কর্মসূচি শেষ করার পর ২০ দলের শরিক জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি, জাগপার মানববন্ধনে দাঁড়ান জাফরুল্লাহ। তার আগে তিনি সিপিবি নেতাদের বক্তব্য শুনছিলেন।
জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আমি যখন এখানে এসে পৌঁছাই, তখন কমিউনিস্ট পার্টি তালেবান মেয়েদের অধিকার দিচ্ছে না. তার প্রতিবাদে কথা বলছে।
‘আমি বলব, বন্ধুরা বিএনপির গঠনতন্ত্রে আছে ৩৩ শতাংশ মহিলা হতে হবে। এমন আওয়ামী লীগেও আছে। আপনারা কমিউনিস্ট পার্টিতে দেন তো?
‘আপনার নিজের ঘর আগে ঠিক করেন। নিজের ঘরে আগুন লাগছে, সেই আগুন আগে নেভান। তালেবানরা যাই হোক না কেন, তারা মুক্তিযোদ্ধা। তাদের ভুলভ্রান্তি হলে সেগুলো ধরিয়ে দেন। তাদের সেভাবে সাহায্য করেন। অকারণে তাদের বিভ্রান্তির পথে, সাম্রাজ্যবাদীদের দিকে ছুঁড়ে দেবেন না। নিজেদের ঘর ঠিক করেন।’
জাফরুল্লাহ বলেন, ‘তালেবান মুক্তিযোদ্ধা। তারা ২০ বছর সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে ক্ষমতায় এসেছে।’
বাংলাদেশের নারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের নিজেদের অধিকার ঠিক আছে তো? ছেলে-মেয়ে সমান সম্পত্তি পায় তো? মুসলমান বোনদেরও বলি। নিজেদের ঘর আগে ঠিক করেন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন না দেয়ায় উচ্চ আদালতের সমালোচনাও করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা। বলেন, ‘এক রিকশাওয়ালা তার স্ত্রীকে হত্যা করেছিল। নিম্ন আদালতে তার ফাঁসির রায় হয়, যা সব আদালতেই বহাল থাকে। তবে মৃত্যুদণ্ডের আগ পর্যন্ত সে জামিনে ছিল। এই উদাহরণ তো আপনারাই তৈরি করেছিলেন। তাহলে খালেদা জিয়ার কেন জামিন হবে না?’
হাইকোর্টের ঈদগাহ মাঠ জনসভার জন্য খুলে দেয়ার পরামর্শও দেন জাফরুল্লাহ। বলেন, ‘তাহলে সেখানে যারা অন্যায়-অবিচার নিয়ে কথা বলবে, সেগুলো আপনাদের (বিচারপতি) কানে পৌঁছাবে।’