পুঁজিবাজারে আসার আগে কোম্পানি মুনাফায় থাকবে আর টাকা তোলার পর লোকসানে চলে যাবে, এমনটা আর হতে দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম। বলেছেন, টাকা নিলে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতেই হবে।
বাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ করার পর বেশকিছু কোম্পানি লোকসানিতে পরিণত হওয়া, বছরের পর বছর লভ্যাংশ না দেয়া, উদ্যোক্তা-পরিচালকদের ঘোষণা না দিয়ে শেয়ার বিক্রি করে দেয়া, একপর্যায়ে কোম্পানি বন্ধ করে দেয়ার ঘটনা অহরহ ঘটছে।
গত বছরের মে মাসে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নেতৃত্বে পরিবর্তন আনার পর বন্ধ ও লোকসানি ১২টি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুনদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুটি কোম্পানি এরই মধ্যে উৎপাদনে চলে এসেছে, একটি উৎপাদন শুরুর অপেক্ষায়। দুটি কোম্পানি অন্য কোম্পানির সঙ্গে একীভূত করার চেষ্টা চলছে, একটি কোম্পানি বিক্রি করার কথা ভাবা হচ্ছে।
বিএসইসি বলছে, পুঁজিবাজারে এসে যেনতেনভাবে চলা যাবে না। এ জন্য মূল বাজার থেকে ওভার দ্য কাউন্টার বা ওটিসি মার্কেটে পাঠানো কোম্পানিগুলোকেও ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। যেগুলোকে ফেরানো যাবে না, সেগুলোর মালিকপক্ষকে বিনিয়োগকারীদের টাকা ফিরিয়ে দেয়ার শর্তে তালিকাচ্যুত করতে হবে।
নিয়মিত লভ্যাংশ না দেয়া এমনকি আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ না করার বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়া হবে, এমন প্রশ্ন ছিল বিএসইসি চেয়ারম্যানের কাছে।
জবাবে তিনি বলেন, ‘এগুলো এখন আর করতে দেয়া হবে না। আপনাকে মানুষের টাকা নিলে লভ্যাংশ দিতে হবে। না হলে কেন সে আপনাকে টাকা দেবে? আর যদি লভ্যাংশ না-ই দেবেন, তাহলে তার থেকে টাকা নিলেন কেন? আরেকজনের টাকা নিয়ে ব্যবসা করবেন আর কিছুই না দেয়ার ইচ্ছা থাকলে এটা তো ঠিক না।’
গত ডিসেম্বরে অর্থবছর শেষ হয়েছে এমন বেশ কিছু কোম্পানি এখনও তাদের আর্থিক হিসাব প্রকাশ করেনি।
এর মধ্যে আছে ফারইস্ট ফাইন্যান্স, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, ফাস ফাইন্যান্স, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, উত্তরা ফাইন্যান্স। বিআইএফসি ২০১৯ সালের চূড়ান্ত আর্থিক বিবরণীও প্রকাশ করেনি।
প্রকৌশল খাতে অ্যাপোলো ইস্পাত ২০১৯ সালের পর আর্থিক বিবরণী প্রকাশ করেনি। ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড ২০২০ সালের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর আর কোনো হিসাব প্রকাশ করেনি।
এ সমস্যা সবচেয়ে বেশি বস্ত্র খাতে। তুংহাই টেক্সটাইল ২০১৭ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের পর আর হিসাব দেয়নি। তাল্লু স্পিনিং ২০১৯ সালের তৃতীয় প্রান্তিক পর পর্যন্ত হিসাব দিয়েছে, রিংশাইন ২০২১ সালের কোনো প্রান্তিকের হিসাব দেয়নি, নূরানী ডায়িং সম্প্রতি ঘোষণা না দিয়ে উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে, ফ্যামিলিটেক্সের উদ্যোক্তারা ঘোষণা না দিয়ে কোম্পানির সব শেয়ার বিক্রি করে লাপাত্তা হয়ে যান ২০২০ সালে, সিএনএ টেক্সটাইল ২০১৭ সালে বন্ধ করে দেয়ার পর মালিকরা লাপাত্তা হয়ে যান।
এ ছাড়া বেশকিছু কোম্পানি আছে, যাদের লভ্যাংশ দেয়ার রেকর্ডই নেই ডিএসইর ওয়েবসাইটে। এর মধ্যে আছে বস্ত্র খাতের দুলামিয়া কটন, খাদ্য খাতে আছে শ্যামপুর সুগার, জিলবাংলা সুগার, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, মেঘনা পেট, পাট খাতের জুট স্পিনার্স, ব্যাংক খাতের আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, বিবিধ খাতের সাভার রিফ্রাকটরিজ।
তবে এর মধ্যে একাধিক কোম্পানি আছে, যারা কেন প্রতিবছর লোকসান দেবে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তবে এসব কোম্পানির শেয়ার দর প্রায়ই বাড়ে অস্বাভাবিক। এবার ব্যাংক খাতের কোম্পানিগুলো ঘুমিয়ে থাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে কখনো লভ্যাংশ না দেয়া আইসিবি ইসলামী ব্যাংক। ১০ টাকার লোকসানি কোম্পানি সাভার রিফ্রাকটরিজের দর ৩০০ টাকার বেশি কেন হবে, তা নিয়ে আছে বিস্ময়।
বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘সবার কাছে তাদের ডিভিডেন্ড দেয়ার সক্ষমতা আছে কি না, দিচ্ছে কি না, সেগুলোকে আমরা মনিটরিং করি। মনিটরিং করার পর এখন সবাই ঠিকভাবে ডিভিডেন্ড দেয়ার চেষ্টা করছেন কি না।’
‘আমরা এই জিনিসটা এনশিওর (নিশ্চিত) করব। এটা নিশ্চিত হলে আরও বিনিয়োগ আসবে মার্কেটে।’