নওগাঁ শহরের কুমাইগাড়ী বাইপাস-ডিগ্রির মোড় সড়কের পাশে প্রায় তিন বছর আগে ময়লার ভাগাড় করেছে পৌরসভা। এরপর থেকে নিয়মিত ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। দূর থেকে দেখলে ময়লার স্তূপগুলোকে মনে হয় ছোটোখাটো পাহাড়।
প্রতিনিয়তই এখান থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। অবস্থা এতটাই খারাপ স্থানীয় বাসিন্দা, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও পথচারীদের এখান থেকে যেতে শ্বাস নেয়ার যেন উপায়ই নেই।
পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, এখানে প্রায় ১৪ কোটি টাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিশোধনাগার করা হবে। সেটি হয়ে গেলে আর দুর্ভোগ থাকবে না।
১৯৬৩ সালে গঠিত নওগাঁ পৌরসভায় ওয়ার্ড রয়েছে ৯টি। এ পৌরসভায় বসবাস করেন প্রায় ২ লাখ মানুষ। অথচ পৌরসভার ময়লার ভাগাড় মাত্র এই একটিই।
নওগাঁ পৌর শহরের কোমাইগাড়ী মহল্লার ময়লার ভাগাড়টি মলফেলা নামে পরিচিত। নওগাঁ সরকারি কলেজ থেকে শহরের বাইপাস শিবপুর সড়কের ছোট যমুনা নদীর তীররক্ষা বাঁধের পশ্চিম পাশে এর অবস্থান। প্রতিদিন পৌরসভার কয়েক টন বর্জ্য এই ভাগাড়ে ফেলা হয়।
বৃষ্টি হলে ভাগাড়ের আবর্জনা পানিতে ভেসে চলে আসে রাস্তায়। কিছু যমুনা নদীতেও পড়ে। এতে রাস্তায় চলাচলকারীদের যেমন দুর্ভোগ পোহাতে হয়, আবার নদীতে আবর্জনা পড়ে পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে।
ভাগাড়ের পাশেই রয়েছে আবাসিক এলাকা। একসময় জনসংখ্যা কম থাকলেও বর্তমানে তা বেড়েছে। দুর্গন্ধে অসুস্থ হয়ে পড়ছে বয়স্ক ও শিশুরা।
স্থানীয় বাসিন্দা জাহিদ হোসেন জানান, প্রায় তিন বছর ধরে এখানে ময়লা ফেলছে পৌরসভা। এতে তাদের খুব সমস্যা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘এটা পৌরসভা এলাকা শহরের মধ্যে পড়ে। এখানে ময়লার ভাগাড় কীভাবে করতে পারে পৌরসভা? এটি একটি ভুল সিদ্ধান্ত। একদিকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, অন্যদিকে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে।’
তার অভিযোগ, শহরের বাইরে ময়লার ভাগাড় করার জন্য এলাকাবাসী একাধিকবার পৌর কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছে। এখনও কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
নিবেদিতা মুন নামে স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘পৌর এলাকার মধ্যে এটা ১ নম্বর ওয়ার্ড। এখানে স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজসহ গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনা আছে। এখানে কীভাবে ময়লার স্তূপ করতে পারে।
‘যতদূর জানি, প্রায় তিন বছর ধরে এমন করে ময়লা ফেলা হচ্ছে। পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী ও পথচারীরা।’
নওগাঁ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী হিমেল রহমান বলে, ‘এই রাস্তার পাশ দিয়েই কলেজে যাতায়াত করতে হয়। অতিরিক্ত গন্ধে বমি বমি ভাব হয়। এই এলাকায় অনেক মানুষ থাকে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক মানুষের বেশি সমস্যা পোহাতে হচ্ছে দুর্গন্ধে।
নওগাঁ পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক মজিবর রহমান জানান, নওগাঁ পৌরসভার প্রায় ৪০-৪৫ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন চারটি ট্রাক ও ১৫টি ট্রলিতে বর্জ্য নিয়ে এই ভাগাড়ে ফেলে।
নওগাঁ পৌরসভার মেয়র নজমুল হক সনি বলেন, ‘অন্য কোনো স্থানে ময়লা ফেলার ব্যবস্থা না থাকায় কুমাইগাড়ীতে ময়লা ফেলা হচ্ছে। তবে পৌরসভার উদ্যোগে এই ময়লা-আবর্জনা থেকে কম্পোস্ট সার তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
‘সম্প্রতি একটি বিদেশি দাতা সংস্থা এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে। সেই প্রকল্পের মাধ্যমে বর্জ্যের বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনা, বর্জ্য পরিবহনে আধুনিক ব্যবস্থাপনা এবং পরিশোধনাগার নির্মাণ করা হবে। বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণে ইতিমধ্যে টেন্ডারও হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইউজিপি-৩ প্রকল্প থেকে প্রায় ১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। ডিজাইন হবে। যেখানে পচনশীল ও অপচনশীল আবর্জনা কোথায় ফেলা হবে তা আলাদাভাবে নির্ধারণ করা হবে। পচনশীল আবর্জনা থেকে কম্পোস্ট সার হবে।
‘পাশাপাশি পাড়া-মহল্লায় ভ্যান দিয়ে আবর্জনা সংগ্রহ করা হবে। অচিরেই কাজটি শুরু হবে বলে আশা করছি। পৌরবাসীকে একটু ধৈর্যধারণ করতে হবে।’