অর্থাভাবে সুচিকিৎসা পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীদের অনেকে। বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন কেউ কেউ। এমন অবস্থায় স্বাস্থ্যবিমা নিয়ে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৬ বছর পার হলেও শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হলের ব্যবস্থা হয়নি। বাধ্য হয়ে তাদের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে হচ্ছে। অসুস্থ হলে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। বিনা চিকিৎসায় কেউ মারা গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় দায়িত্ব নিচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিমা করা থাকলে অমানবিক পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষে ৮৫ টাকা বার্ষিক প্রিমিয়ামে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিমার ঘোষণা দেন। এ সুযোগটি এখনও নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিমার ব্যাপারে এরই মধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক দফা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিমার দাবি উঠলেও ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। করোনায় অনেক শিক্ষার্থী আক্রান্ত হলে এবং সম্প্রতি কিছু শিক্ষার্থীর অসুস্থতায় মৃত্যু ঘটলে ফের আলোচনায় এসেছে স্বাস্থ্যবিমা।
বাংলা বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আল আমিন লেবু গত বৃহস্পতিবার মারা যান। তীব্র জ্বরে আক্রান্ত লেবু টাকার অভাবে চিকিৎসা শুরু করতে পারেননি।
স্বজনরা জানান, লেবুর দুই ভাই ভ্যানচালক, বাবা গোবরের জ্বালানি বিক্রি করেন। অসুস্থ অবস্থায় লেবু বাড়িতে টাকা চাইলে, তারা অপেক্ষা করতে বলেছিলেন। সেই সময় আর পাননি লেবু। চিকিৎসা ছাড়াই মারা যান বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শিক্ষার্থী।
শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী রাহাত আরা রিমি মারা যান গত ১১ জুলাই। তিনি জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভূগছিলেন। শারীরিক জটিলতায় দীর্ঘদিন ভুগতে থাকা রিমি সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছিলেন না টাকার অভাবে।
ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইমরান পাভেল মারা যান টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে। গত বছর ১৪ সেপ্টেম্বর মারা যাওয়ার আগে পাভেল ঢাকায় এসেছিলেন টিউশনি করার জন্য।
শিক্ষার্থীদের মতে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা। আবাসিক হল না থাকায় শিক্ষার্থীদের বাইরে থাকতে হয়। ঢাকার আবাসন খরচ মেটাতেই যখন তাদের হিমশিম অবস্থা তখন স্বাস্থ্যসেবার দিকে নজর দেবার সুযোগ কম। স্বাস্থ্যবিমা করা থাকলে সহজেই তারা চিকিৎসা করাতে পারবেন।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রিপা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টাকার অভাবে চিকিৎসা শুরু করাতে পারেননি আমাদের বিভাগের আল আমিন ভাই, বৃহস্পতিবার মারা গেলেন। যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক সহায়তা অথবা স্বাস্থ্যবিমার ব্যবস্থা থাকত তাহলে এমন হতো না।’
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী রতন বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এমনিতে হল নেই, যার কারণে বাইরে থাকতে বেশি খরচ হয়। সেখানে বিশুদ্ধ পানির অভাবে টাইফয়েড, জন্ডিসে আক্রান্তের আশঙ্কা বেশি। এখন আবার করোনা ও ডেঙ্গুর প্রকোপ। শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে আমাদের অধিকাংশ পরিবারের খরচ জোগান দেয়া কঠিন। সব দিক বিবেচনায় স্বাস্থ্যবিমা চালু করা জরুরি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিমার বিষয়ে আমরা একবার আলোচনা করেছিলাম, বিমার লোকজন নানা সমস্যার কথা জানালে তা এগোয়নি। বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্যবিমার ব্যবস্থা করাটা অনেক বড় কাজ। সবকিছু বিবেচনায় এটা করা যেতে পারে।’
করোনা আক্রান্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও সহযোগিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি তো নতুন দায়িত্ব পেয়েছি, আগে ছাত্রকল্যাণের সবকিছু অগোছাল ছিল। আমি শিক্ষার্থীদের পরিসংখ্যান তৈরি করছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের কারো স্বাস্থ্যবিমা নেই। এগুলো চালু থাকলে বিপদের সময় কাজে লাগে। আমরা স্বাস্থ্যবিমার চিন্তাভাবনা করছি, কথা বলছি। চেষ্টা করব শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার জন্যই স্বাস্থ্যবিমা করার।’