যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি গণতান্ত্রিক দেশে ঠান্ডা মাথার খুনি জিয়াউর রহমানের নামে কোনো সড়কের নামকরণ হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এএইচ শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের বাল্টিমোর সিটিতে যে সড়কটির নাম ‘জিয়াউর রহমান ওয়ে’ ছিল, সেটির নামকরণ বাতিলে নিজের ভূমিকা ও কৌশল জানিয়ে নিউজবাংলাকে বিচারপতি মানিক এ কথা বলেন।
জিয়ার নামে সড়কের নামকরণ বাতিলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বিচারপতি মানিক বলেন, ‘খুবই ভালো একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সিটি মেয়র। একটি গণতান্ত্রিক দেশে একজন স্বৈরশাসকের নামে একটি সড়কের নামকরণ হতে পারে না। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘গত জুনে বিএনপির কিছু লবিস্ট টাকা-পয়সা খরচ করে সেখানে জিয়াউর রহমান ওয়ে নামে একটি সড়কের নামকরণ করেন। এটা জানতে পেরে আওয়ামী লীগের অফিস সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া কাজ শুরু করেন। তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিমও ছিলেন। তারা আমাদের দেশের উচ্চ মহলে খবরটি জানান।
‘আওয়ামী লীগের বিপ্লব, সেলিম ছাড়াও কুমার দেবুল দে নামে আরেকজন আমার বাসায় আসেন। আমরা বসে বিষয়টি বাতিলের জন্য কৌশল ঠিক করি।’
জিয়াকে ঠান্ডা মাথার খুনি অভিহিত করে বিচারপতি মানিক বলেন, ‘জিয়া বঙ্গবন্ধুর হত্যায় জড়িত, খুনিদের বিচার বন্ধ করতে ইনডেমনিটি আইন প্রনয়ণ করেছিল। তাকে নিয়ে হাইকোর্টের রায়ে পর্যবেক্ষণ আছে, যেখানে জিয়াকে ঠাণ্ডা মাথার খুনি বলা হয়েছে। এছাড়া সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী ও সপ্তম সংশোধনীতে হাইকোর্ট ও সুপ্রিমকোর্ট বহু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে জিয়াকে নিয়ে। যেখানে বলা হয়েছে জিয়া গণতন্ত্র ধ্বংস করে সাংবিধানিক শাসন ধ্বংস করেছে।
‘আমরা সব তথ্য যোগ করে আমেরিকার বাল্টিমোর সিটি মেয়রকে পাঠিয়েছি। এর সঙ্গে আমরা উচ্চ আদালতের রায়কে দালিলিক প্রমাণ হিসেবে দিয়েছি। এরপর তারা কমিটি গঠন করেছে।’
নিজেদের অবদানকে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বিচারপতি মানিক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতারাও এ প্রচেষ্টায় যুক্ত ছিলেন, তবে তাদের দাবিগুলো ছিল মৌখিক। আর আমাদের ছিল দালিলিক প্রমাণসহ বক্তব্য। প্রবাসী নেতারা প্রায় সাড়ে ৩০০ সই সংগ্রহ করে সাদামাটাভাবে প্রতিবাদ করেছিলেন। কিন্তু আমাদের মতো কৌশলে রায়, রায়ের পর্যবেক্ষণ এবং যুক্তিতর্ক দিতে পারেননি। এটা অবশ্য তাদের জানার কথাও না। তারা তো আর বিশেষজ্ঞ না।’
নাম বাতিলের সিদ্ধান্ত বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর সিটির মেয়র সাহেব আমাদের ডাকেন। আমরা একটি ওয়েবিনারে যুক্ত হই। সেখানে আমি ও প্রফেসর এম এ আরাফাত ঢাকা থেকে যুক্ত ছিলাম। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক আলাপ-আলোচনা শেষে সড়কটির নাম জিয়ার নামে রাখার সিদ্ধান্ত বাতিল হয়।’
‘ওয়েবিনারে আমাদের বক্তব্য ছিল, যেখানে বাংলাদেশের সুপ্রিমকোর্ট জিয়াকে রাষ্ট্রদ্রোহী বলেছে, ঠান্ডা মাথার খুনি বলেছে, সংবিধান লঙ্ঘনকারী বলেছে, স্বৈরশাসক বলেছে, সেখানে আব্রাহাম লিংকনের দেশে তার নামে কোনো সড়ক হতে পারে না। এই বিবেচনায় তারা সেটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে মেয়রের সিদ্ধান্ত বদলের মূল কাজটি আমরা এখান থেকেই করেছি। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের চেষ্টা ছিল হালকা, সাদামাটা। আর আমাদের পদক্ষেপ ছিল আইনগত। তাহের হত্যার মামলার রায়ে জিয়াকে নিয়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছিলাম। আমরা সেগুলো তাদেরকে পাঠিয়ে দিয়েছি।’
বিচারপতি মানিক বলেন, ‘জিয়াকে নিয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের রায়, বিচারপতি তাফাজ্জল ইসলামের রায় যুক্ত করে বিশেষ অংশটুকু পাঠিয়েছি। যেখানে বলা আছে, জিয়া অবৈধভাবে বন্দুকের জোরে ক্ষমতা দখল করেছে। প্রায় পাঁচ-ছয় পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট আমরা পাঠিয়েছিলাম।
‘আমাদের ভূমিকাই ছিল মূল। আমেরিকা থেকে আওয়ামী লীগের নেতারা যে বলছেন, তারাই সব কিছু করেছেন, ব্যাপারটি আসলে তা নয়। বরং আমরাই দেশ থেকে মূল ভূমিকা রেখেছি।’
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ম্যারিল্যান্ডের বাল্টিমোরের একটি সড়ক থেকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নামফলক সরিয়ে দেয়া হয়। নামফলক সরানোর এ সিদ্ধান্ত নেয় বাল্টিমোর সিটি কর্তৃপক্ষ।