বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কেউ জামায়াতের, কেউ সরকারের ‘বি টিম’ বলছে

  •    
  • ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ২২:২৭

‘আমাদের একই দিকে দুই ধরনের ব্লেইম শুনতে হচ্ছে: কেউ বলছে আমরা অন্য রাজনৈতিক দলের (জামায়াত) বি টিম। কেউ বলছে আমরা সরকারের বি টিম। ওরা বলছে আমরা সরকারের দালাল আবার সরকারের লোকেরা সন্দেহ করছে আমরা অন্য দলের এজেন্ডা বাস্তনের জন্য নতুন দল খুলেছি কী না।’

২০২০ সালের ২ মে দলটির যাত্রা শুরু হয় ‘আমার বাংলাদেশ পার্টি নামে, যা সংক্ষেপে ‘এবি পার্টি’ নামে পরিচিতি পায়। দলটির বর্তমান সদস্য সচিব মুজিবুর রহমান মঞ্জু এককালে জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন নিউজবাংলার সঙ্গে।

নিউজবাংলা: জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক কেমন? আপনাদের দলের প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই অনেকের মধ্যে ধারণা ছিল, জামায়াত ভেঙ্গে দলটির সৃষ্টি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আপনারা মূলধারায় আসতে পারছেন না। কেন?

মুজিবুর রহমান মঞ্জু: জামায়াতের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্কের প্রশ্ন আসে না এ কারণে যে, আমরা একটি নতুন রাজনৈতিক দল করেছি। আমি কিংবা আরও দুই-একজন জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারে, যাদের অনেকেই জামায়াত থেকে পদত্যাগ করেছে, আবার কাউকে কাউকে জামায়াত থেকে বহিষ্কৃত করা হয়েছে। এটা আমাদের জন্য একটা ক্লোজ চ্যাপটার। আমরা যে দল শুরু করেছি, সেটি সম্পূর্ণ নতুন চিন্তা আদর্শ, নতুন কর্মসূচি, দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। এটার সঙ্গে জামায়াতের কোনোই সম্পর্ক নাই। বরং নতুন দল করার পর জামায়াত আমাদের বিরুদ্ধে বলছে যে, আমরা ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে গেছি, আমরা ধর্মকে বাদ দিয়ে দিয়েছি। এ ধরনের অপপ্রচার জামায়াত আমাদের বিরুদ্ধে করছে। সুতরাং আমি মনে করি, আমাদের রাজনৈতিক উদ্যোগ সম্পূর্ণ স্বাধীন, পৃথক। শুধু জামায়াত নয়, কোনো দলের সঙ্গেই আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এটা সম্পূর্ণ স্বাধীন চিন্তার আলোকে নতুন একটা উদ্যোগ।

দলের প্রতিষ্ঠার শুরুতে আমরা এ ধরনের প্রচার দেখেছি যে, আমাদের উদ্যোগকে অনেকে জামায়াতের ভাঙ্গণ হিসেবে দেখেছেন। আমরা তখন বলেছি যে, এটা একটা ভুল ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ এবং এটা একটা অপপ্রচার।

আমাকে জামায়াত থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ব্যারিস্টার রাজ্জাক সাহেব ওনার ব্যাখ্যা দিয়ে দল থেকে বের হয়ে গেছেন। আর সোলেমান চৌধুরী সাহেবও জামায়াত থেকে বের হয়েছেন। আমরা যখন জামায়াতে ছিলাম, তখন একটি বিষয় নিয়ে আমরা দলে ফাইট করেছি কেউ কেউ।

আর মূলধারায় আসার বিষয়ে আমি বলব, একটা রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠা তো এক দিনের ব্যাপার না। বাংলাদেশে সত্যিই এখন রাজনীতির একটি বৈরি পরিবেশ যাচ্ছে। তার ওপর চলছে করোনা পরিস্থিতি। সব মিলিয়ে রাজনীতিই তো কঠিন পরিস্থিতিতে আছে। আমরা মনে করি, যারা দেশকে নিয়ে ভাবে, তাদের যে কোনো পরিস্থিতিতে কাজ করতে হয়। এ জন্যই আমরা বৈরি পরিস্থিতিতেও রাজনৈতিক দলের সূচনা করেছি।

নিউজবাংলা: বর্তমান জামায়াতে ইসলামীর নিয়ে কী বলবেন?

মুজিবুর রহমান মঞ্জু: এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।

নিউজবাংলা: এখন কীভাবে দলকে সংগঠিত করছেন?

মুজিবুর রহমান মঞ্জু: আমরা ইতিমধ্যে প্রায় ৪০টি জেলায় কমিটি করেছি। প্রায় ৮০টার মতো উপজেলায় আমরা কমিটি করেছি। আমরা আমাদের দলের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য-কর্মসূচি নিয়ে কাজ করছি। দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন, পরিস্থিতি সব কিছুর সঙ্গে মিলিয়ে আমাদের দল সময়ের ব্যবধানে এগিয়ে যাবে। আমরা কোনো চমক সৃষ্টি করার জন্য দল তৈরি করিনি। বাংলাদেশের রাজনীতির অতীতের যে ব্যর্থতা, সেটা থেকে উদ্ধার করে নতুন একটা দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য আমরা দল করেছি।

এবি পার্টির প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ভার্চুয়ালি সংবাদকর্মীদের সামনে আসেন দলের নেতারা

নিউজবাংলা: অনেকে বলেন, তুরস্কের আধ্যাত্মিক নেতা ও ধর্মপ্রচারক ফেতুল্লা গুলেনের মতাদর্শে আপনারা এবি পার্টি সৃষ্টি করেছেন এবং দলকে সংগঠিত করছেন। কী বলবেন?

মুজিবুর রহমান মঞ্জু: এটাও একটা অপপ্রচার। আমাদের দলের ১০ জন কর্মীকে যদি জিজ্ঞেস করেন, তাহলে দেখবেন ফেতুল্লা গুলেনের নামই শোনেন নি তারা। পৃথিবীতে অনেক রাজনৈতিক দার্শনিকের জন্ম হয়েছে, আমরা সবার রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে পড়াশোনা করছি। তবে ফেতুল্লা গুলেনের কোনো রাজনৈতিক দর্শন-চিন্তা যদি আমাদের রাজনৈতিক কাজে লাগে, তবে আমরা সেটা ব্যবহার করব, অসুবিধা কী? কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির চিন্তাধারায় আমরা প্রভাবিত না। আমি মনে করি, এটা রাজনীতির জন্য ঠিকও না। দেশ ও বিশ্ব রাজনৈতিক বিবেচনায় আমরা আমাদের রাজনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছি। আমরা দলের রাজনীতিতে অধিকারভিত্তিক, কর্মসূচিভিত্তিক দল করতে চাই। আমরা মানুষের সমস্যার সমাধান, সার্ভিস ওরিয়েন্টেড রাজনীতি চালু করতে চাই দেশে। আর দেশের মৌলিক জায়গা ধর্ম ও মুক্তিযুদ্ধ – এ দুটোকে বিতর্কের উর্ধ্বে রেখে আমরা আমাদের রাজনীতি করতে চাই। এ দুটোর চেতনাকে ধারণ করে বাংলাদেশের মানুষের ঐক্যের জায়গা আমরা তৈরি করতে চাই।

নিউজবাংলা: আপনি বলছেন, আপনার দল সার্ভিস ওরিয়েন্টেড রাজনীতি করতে চায়। কিন্তু সেটার জন্য তো প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। সেটা কীভাবে সংগ্রহ হচ্ছে?

মুজিবুর রহমান মঞ্জু: রাজনৈতিক দলের তহবিল দলের কর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের দিয়েই হয়। দল যত বড় হবে, তার অর্থের শক্তিটাও সাথে সাথে বাড়বে। আমি মনে করি, অবশ্যই আমরা সার্ভিস ওরিয়েন্টেড রাজনীতি করতে চাই। আমি আপনাকে ছোট্ট একটা উদাহরণ দেই: করোনা যখন প্রথম শুরু হয়, যখন লকডাউন শুরু হয়েছিল, প্রাথমিক অবস্থা দেখে আমরা খুব ব্যথিত ছিলাম, যে এই যে মানুষজন, যারা দিন আনে দিন খায়, তাদের কী হবে। তখন আমাদের মধ্যে থেকে একজন প্রস্তাব দিল যে, আমরা ‘ফুড ব্যাংক’ চালু করতে পারি কীনা। মানে যাদের খাদ্য আছে, তারা অতিরিক্ত খাদ্য জমা করবে, আর যাদের নেই, সেই খাদ্য তাদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। আমরা এটি নিয়ে কাজ শুরু করলাম। আমরা দেখলাম ২২ হাজার টাকার মতো প্রথম দিনে আমাদের যোগাড় হয়েছে। আমরা সেই টাকায় খাদ্য কিনে দুস্থদের মাঝে দিয়েছি। আমি মনে করি, সার্ভিস ওরিয়েন্টেড রাজনীতির একটা শক্তি হচ্ছে, সেটা প্রতিষ্ঠা হলে মানুষ তার সামর্থ্য নিয়ে পাশে দাঁড়াবে।

নিউজবাংলা: অনেকে বলেন, সরকারের সঙ্গে আপনাদের ভালো সম্পর্কের কারণে আপনারা রাজনীতি করতে পারছেন। এ বিষয়ে কী বলবেন?

মুজিবুর রহমান মঞ্জু: আমাদেরকে অনেকে অনেকভাবে বলছে। রাজনীতির জায়গাটা হলো, আপনাদের নানা ধরনের ব্লেম, নানা ধরনের মানুষের ধারণার ‍ওপর কাজ তো হবেই। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে, সেটার বেসিস কী? আপনি শুনলে অবাক হবেন, আমরা যখন প্রথম রাজনৈতিক দল ঘোষণা করলাম, সেদিনই পুলিশ এসে আমাদের বলেছে, আমরা মিটিং করতে পারব না। কারণ আমরা পারমিশন নেইনি। আমরা বলেছি, মিটিং করতে হলে পারমিশন নিতে হবে এটা কোথায় বলা আছে, সংবিধানের কোন অনুচ্ছেদে এটা বলা আছে? আমরা যে কমিটি করছি, সেখানে আমরা গোয়েন্দা সংস্থার লোকদের হয়রানির শিকার হচ্ছি। আমাদের ঘরোয়া মিটিংয়েও পুলিশ বাধা দিয়েছে।

এগুলো হচ্ছে অপপ্রচার। আমরা মনে করি, সরকারের সহযোগিতা নিয়ে কোনো রাজনৈতিক দল কোনো দিন কোথাও প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। দালালি করে অন্যের স্বার্থ নিয়ে রাজনীতি করে কেউ প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। আমরা এটা করতে চাইব না।

আমাদের একই দিকে দুই ধরনের ব্লেইম শুনতে হচ্ছে। কেউ বলছে, আমরা অন্য রাজনৈতিক দলের (জামায়াত) বি টিম। কেউ বলছে, আমরা সরকারের বি টিম। ওরা বলছে, আমরা সরকারের দালাল, আবার সরকারের লোকেরা সন্দেহ করছে, আমরা অন্য দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য নতুন দল খুলেছি কীনা।

কাজেই, আমরা চ্যালেঞ্জ দিতে চাই। কেউ যদি আমাদের চ্যালেঞ্জ দিয়ে প্রমাণ করতে পারে আমরা কারও পক্ষ হয়ে, সুবিধা নিয়ে, সাহায্য নিয়ে দল হিসেবে কাজ করছি, তাহলে আমি সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে রাজি আছি।

নিউজবাংলা: আপনারা কি বিএনপির সঙ্গে সরকারবিরোধী জোটে থাকবেন?

মুজিবুর রহমান মঞ্জু: আমাদের দলের এখনও নিবন্ধন হয় নি। আমরা নিবন্ধনের জন্য চেষ্টা করছি। দলের কমিটিগুলোর নিবন্ধনের জন্য কাজ করছি। আমরা এখন পর্যন্ত রাজপথে কোনো কর্মসূচি নিয়ে নামিনি। আমাদের বেশিরভাগ কাজ হচ্ছে ঘরোয়াভাবে। রাজপথে নামার সুযোগও তৈরি হয় নি। লকডাউনের পর রাজনৈতিক পরিবেশ বেশ বৈরি। আমাদের এখন কাজই হচ্ছে দলটাকে শক্তিশালী জায়গায় নিয়ে যাওয়া। এরপর আমরা জোটবদ্ধ হব কিনা, পরে দেখা যাবে।

নিউজবাংলা: আপনাদের দলের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক দেশে আসছেন না কেন?

মুজিবুর রহমান মঞ্জু: উনি পেশার কারণে প্রথমে ইংল্যান্ড গিয়েছিলেন। যাওয়ার পর দেখা গেল, ওনার বিরুদ্ধে দুটো মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ওনার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচারিত হয়েছে যে, উনি দেশে এলে ওনাকে গ্রেপ্তার করা হবে। এ ধরনের একটা পরিস্থিতি তখন বিরাজমান ছিল। সে কারণে সে সময় তিনি আর দেশে আসেননি।

দেশে না ফেরার কারণে উনি সেখানেই অবস্থান করছেন। সেখানেই উনি ল প্র্যাকটিস করছেন। মাঝখানে তিনি অসুস্থও হয়েছেন, ওনার ক্যান্সার ধরা পড়েছে। উনি ট্রিটমেন্টে আছেন। সার্বিক বিষয় মিলিয়ে ওনার বিরুদ্ধে এই যে হুমকি, যে উনার মতো একজন বিখ্যাত আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, উনি দেশে এলে ষড়যন্ত্র হতে পারে, এ কারণে উনি দেশে আসছেন না। সব মিলিয়ে একটা সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে উনি দেশে ফিরে আসবেন।

নিউজবাংলা: আপনি বলছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দেশের একটি শক্তি। কিন্তু আমরা দেখেছি, যুদ্ধাপরাধীদের প্রসিকিউটর হিসেবে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ছিলেন। তিনিই এখন আপনাদের দলের উপদেষ্টা। কী বলবেন?

মুজিবুর রহমান মঞ্জু: রাজ্জাক সাহেবকে এই প্রশ্ন অনেক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও করেছিল। এটা উনি ক্লিয়ার করেছিলেন। উনি একজন প্রফেশনাল আইনজীবী হিসেবে সেটা করেছেন। তিনি যখন জামায়াত থেকে পদত্যাগ করেছেন, তখন কিন্তু স্পষ্টভাবে ওনার পজিশন ক্লিয়ার করেছেন। সুতরাং উনি যুদ্ধাপরাধের সহায়ক, এটা মিন করে না।

নিউজবাংলা: আফগানিস্তানে বর্তমান যে পরিস্থিতি চলছে, সেটিকে কীভাবে দেখছেন? বাংলাদেশের ওপর এটার প্রভাব কেমন হবে বলে মনে করেন?

মুজিবুর রহমান মঞ্জু: প্রভাব তো অবশ্যই বাংলাদেশের ওপর পড়বে। প্রত্যেক দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন সে দেশের সংস্কৃতি, রাজনীতি ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল। আমি মনে করি, দক্ষিণ এশিয়ার একটা বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। বাংলাদেশে একটা প্রভাব আমরা দেখতে পাচ্ছি। একটা পুতুল সরকারের বিরুদ্ধে বিজয়ের বিষয় সামনে আসছে। আর একটা বিষয় আসছে, ওখানে (আফগানিস্তানে) যে একটা রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছে, এটাও একটা সীমা তৈরি করে যে, পটপরিবর্তন সম্ভব।

এ বিভাগের আরো খবর