পঞ্চম দল হিসেবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট ছেড়ে দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের নেতৃত্বাধীন কল্যাণ পার্টি।
আমার বাংলাদেশ পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিবসহ প্রায় ২০ নেতা-কর্মীর কল্যাণ পার্টিতে যোগদানের অনুষ্ঠানে শুক্রবার এই ইঙ্গিত দেন ইবরাহিম।
সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কিংস পার্টি নামে যেসব দল আলোচনায় ছিল, তার একটি ছিল সৈয়দ ইবরাহিমের কল্যাণ পার্টি। তবে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসনে দাঁড়িয়ে জামানত বাজেয়াপ্ত হয় ইবরাহিমের।
আওয়ামী লীগ-বিরোধী সব দলকে একত্রিত করে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বধীন জোট পরিণত হয় ২০ দলে। তাতে যোগ দেন ইবরাহিমও। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে তিনি চট্টগ্রাম-৫ আসন থেকে ভোটে দাঁড়িয়ে হেরে যান।
বিএনপির প্রতি ইবরাহিম যে সন্তুষ্ট নন, সেটি তার বক্তব্যে স্পষ্ট। বলেছেন, ‘প্রধান শরিক বিএনপি যদি জোটকে সক্রিয় করতে চান, যদি অতীতের ভুলগুলো আত্মসমালোচনা করে পরিবেশ ভিন্ন করতে পারেন, তাহলে আমরা একসঙ্গে পথ চলব। না হলে যদি প্রয়োজন পরে আমরা নিশ্চিতভাবে গণতন্ত্রের স্বার্থে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের আন্দোলনে আলাদা ভূমিকা রাখব।’
তবে বর্তমান সরকারের আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবেন না বলেও জানান সৈয়দ ইবরাহিম।
গত পাঁচ বছরে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন জোট থেকে চারটি দল চলে গেছে।
২০১৬ সালের ৭ জুন ২০-দলীয় জোট ছেড়ে যায় মুফতি ফজলুল হক আমিনীর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ঐক্যজোট। ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর ২০-দলীয় জোট ছেড়ে যায় লেবার পার্টি। ২০১৯ সালের ৬ মে ২০ দল ছাড়ে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি- বিজেপির আন্দালিভ রহমান পার্থ। সবশেষ গত ১৪ জুলাই জোট ছেড়ে যায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম।
এর মধ্যে ইবরাহিম ছাড়াও এলডিপির সভাপতি অলি আহমদের এলডিপিও জোটে থাকতে চায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা আছে প্রায় দুই বছর ধরেই।
এর মধ্যে ২০১৯ সালের জুনের শেষে অলি আহমদের নেতৃত্বে ২০ দলের কয়েকটি শরিক দল মিলে গঠন করা হয় ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’ নামে একটি মোর্চা। এতে কল্যাণ পার্টি ছাড়াও ২০ দলের আরেক দল জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি- জাগপাও ছিল।
এই মঞ্চ গঠন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে এসব দলের নেতাদের দূরত্বের সংবাদ আসে গণমাধ্যমে। তবে পরে বিষয়টি আর খুব একটা আগায়নি।
২০-দলীয় জোটের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে সৈয়দ ইবরাহিম বলেন, ‘দীর্ঘদিন যাবৎ ২০-দলীয় জোটের কোনো মিটিং হচ্ছে না, এ কথাটিই বাস্তবতা। এই জোট আছে বললেও সঠিক, নাই বললেও সঠিক। মাঝখানে যদি বলি দুই পা দুই দিকে, সেটাও সঠিক।
‘তবে আশা করছি, প্রধান শরিক বিএনপি একটি সিদ্ধান্ত নেবে। কারণ, তারা বলছে, তারা বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে চায়, কিন্তু সেটার রূপরেখা এখন দেয়নি।’
নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের দাবি
নিবন্ধিত রাজনৈতিকগুলোর সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবিও জানান সৈয়দ ইবরাহিম। অন্যথায় আন্দোলনে যাওয়ার কথাও বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আগামী পার্লামেন্ট নির্বাচন অনেক কাছেও নয়, অনেক দূরেও নয়। আগামী পার্লামেন্ট নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। যদি ত্রুটিপূর্ণ ও জালিয়াতির নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় অব্যাহত থাকে, তাহলে বাংলাদেশে স্বৈরাচারী শাসন পদ্ধতি স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা।
‘বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি চায় পার্লামেন্টে প্রবেশ করতে, এ দেশে সুশাসন ফেরত আনার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে। তার জন্য সুষ্ঠু নির্বাচন প্রয়োজন।’
এবি পার্টি থেকে আসা নেতা-কর্মীদের স্বাগত জানাচ্ছেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম
সংবাদ সম্মেলনের আগে জামায়াত ভেঙে গঠন করা ‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’ বা এবি পার্টির ২০ নেতা-কর্মী কল্যাণ পার্টিতে যোগ দেন। এবি পার্টি থেকে আসা যুগ্ম সদস্যসচিব শাহেদ চৌধুরীকে কল্যাণ পার্টির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও আব্দুল আউয়াল মামুনকে সেক্রেটারি জেনারেল ডেজিগনেট ঘোষণা করা হয়।
এবি পার্টি থেকে আসা নাজমুল হুদা অপু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসলে এবি পার্টির এখনও নিবন্ধন হয়নি। আর কল্যাণ পার্টির নিবন্ধন রয়েছে। আমরা আশা করছি আমরা এই দলে যোগ দিয়ে ভালোভাবে কাজ করতে পারব। এ জন্যই আমরা এই দলে যোগ দিয়েছি।’