দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদেশগামী যাত্রীদের করোনা শনাক্তের জন্য কবে থেকে আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হবে সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। এই ল্যাব স্থাপনের যে নির্দেশনা মন্ত্রিসভা থেকে দেয়া হয়েছিল, তার বাস্তবায়ন কবে তা জানে না কেউই।
এ হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতির কারণে নির্ধারিত সময়ে কর্মস্থলে যোগ দিতে পারছেন না প্রবাসী কর্মীরা। ফলে অন্তত ১ হাজার প্রবাসী কর্মীর চাকরির ভবিষ্যৎ হয়ে পড়েছে অনিশ্চিত।
গত ৬ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিসভা বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ঢাকার হজরত শাহজালাল, সিলেটের ওসমানী ও চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আরটি-পিসিআর ল্যাব বসানো হবে।
সোমবারের মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একটি কন্ডিশন (শর্ত) দেয়া হচ্ছে যে ফ্লাইংয়ের ৪, ৬ বা ৮ ঘণ্টার মধ্যে পিসিআর টেস্ট করতে হবে। বেশ কয়েকটি দেশ থেকে এ রকম বলা হয়েছে। গত কদিন থেকে আলোচনা চলছিল। আজকে এটা প্রিসাইজ করে দেয়া হয়েছে। দু-তিন দিনের মধ্যে টেস্টিং ফ্যাসিলিটিজ করা হবে।’
করোনাভাইরাসের কারণে যেসব দেশ বাংলাদেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, তাদের মধ্যে কয়েকটি দেশ সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা শিথিলের ঘোষণা দেয়। নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হলেও বেশ কিছু শর্ত মানতে বলা হয়েছে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া যাত্রীদের, এর মধ্যে যাত্রার ছয় ঘণ্টার মধ্যে বিমানবন্দরে পিসিআর টেস্ট উল্লেখযোগ্য।
বিমানবন্দরে করোনাভাইরাসের আরটি-পিসিআর টেস্টের সুবিধা না থাকায় সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতগামী (ইউএই) যাত্রীদের নেবে না বলে জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির পতাকাবাহী বিমান পরিবহন সংস্থা এমিরেটস।
করোনাভাইরাস শনাক্তে এখন পর্যন্ত বিশ্বে যে কটি নমুনা পরীক্ষা পদ্ধতি আছে, তার মধ্যে আরটি-পিসিআর পরীক্ষাই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য। এই পদ্ধতিতে রোগীর নাসারন্ধ্র বা মুখের ভেতর থেকে মিউকাস বা লালা সংগ্রহ করা হয়। আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষায় এন্টিজেন টেস্টের চেয়ে একটু সময় লাগলেও অনেকটা নিখুঁত ফল পাওয়া যায়। এতে প্রায় ৪০ মিনিটের মতো সময় লাগে।
বিশ্বে বাংলাদেশের যে শ্রমবাজার রয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে মধ্যপ্রাচ্যের আটটি শ্রমবাজার থেকে রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ২৪৫ কোটি ডলার। চলতি বছরের জুলাই মাসে এসেছে ১০৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার আর আগস্ট মাসে এসেছে ১০২ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। এই বাজারের কর্মীরা কোনো কারণে সংকটে পড়লে তার প্রভাব পড়তে পারে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে।
সরকারের নির্দেশনার পরও এখনও কোনো বিমানবন্দরেই আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা যায়নি। আর এতেই অনিশ্চয়তায় পড়েছেন মধ্যপ্রাচ্যগামী প্রবাসী কর্মীরা।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক তৌহিদ উল আহসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য জায়গা আমরা দিয়ে রেখেছি। এখন সরকার যাকে এগুলো বসানোর কাজ দেবে, তারা শুধু এখানে স্থাপন করবে।
‘আমাদের দিক থেকে সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বাকিটা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় করবে। এটি কবে নাগাদ বসবে সে বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, যে সংখ্যক যাত্রী মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিদিন যান, সে অনুপাতে পরীক্ষা করার সক্ষমতা সরকারিভাবে দেশে নেই। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এ পরীক্ষা করা যায় কি না তা ভেবে দেখা হচ্ছে।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কতগুলো দেশে যেতে হলে বিমানে ওঠার আগে করোনা পরীক্ষার কথা বলা হচ্ছে। তবে সরকারিভাবে যে র্যাপিড পিসিআর মেশিনের কথা বলা হচ্ছে, সেটির নমুনা পরীক্ষার ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে কম।
‘বেসরকারিভাবে যদি ২৫টি মেশিন বসানো যায়, তা হলে সারা দিনে ২ হাজার টেস্ট করা সম্ভব। এক মেশিনে ২৪ ঘণ্টায় ৮০টি নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হবে। আর তাই মেশিন লাগবে বেশি। এ ক্ষেত্রে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বেসরকারি খাত থেকেই মেশিন জোগাড় করা হবে। আর তাই দ্রুততার সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে (ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম) র্যাপিড পিসিআর ল্যাব স্থাপনে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়।’
তবে কবে নাগাদ এ মেশিনগুলো বসানো হতে পারে সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।