বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শরিয়তসম্মত বিনিয়োগের প্রলোভনে পকেটে ‘১৭ হাজার কোটি’

  •    
  • ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৯:১১

রাগীব মূলত ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতিকে অপব্যবহার করে এমএলএম কোম্পানির ফাঁদ তৈরি করেন। ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষ, ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যুক্ত ব্যক্তি, ইমাম ও অন্যদের টার্গেট করেই তিনি কাজ করতেন। তিনি 'শরিয়তসম্মত সুদবিহীন বিনিয়োগ'-এর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করেন। ওয়াজ মাহফিলেও ব্যবসায়িক প্রচার-প্রচারণা চালানো হতো।

‘শরিয়তসম্মত সুদবিহীন বিনিয়োগ’ কেমন হবে, তার প্রচার চালিয়ে হাজার হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা তুলে আত্মসাৎ করা হয়েছে।

ব্যবসার ফাঁদ পাতা হয়েছে ওয়াজ মাহফিলসহ ধর্মীয় মজলিসে, ব্যবহার করা হয়েছে ইমাম, মাদ্রাসার শিক্ষক, ছাত্রদের। তারা শরিয়তসম্মত বিনিয়োগের কথা শুনে অকাতরে টাকা ঢেলেছেন, এরপর ঠকেছেন।

পিরোজপুরে 'এহসান রিয়েল এস্টেট’ নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে এভাবে টাকা তোলার অভিযোগে র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েছেন মুফতি রাগীব আহসান।

১৯৮৬ সালে পিরোজপুরের একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। ১৯৯৬ থেকে ৯৯ সাল পর্যন্ত হাটহাজারীর একটি মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস এবং ১৯৯৯-২০০০ পর্যন্ত খুলনার একটি মাদ্রাসা থেকে ধর্মীয় আইনে পড়াশোনা শেষ করে মুফতি হন।

এরপর পিরোজপুরে একটি মাদ্রাসার মসজিদে ইমামের চাকরি শুরু করেন। ২০০৬-২০০৭ সালে ইমামতির পাশাপাশি 'এহসান এস মাল্টিপারপাস' নামে এমএলএম কোম্পানিতে মাসে ৯০০ টাকা বেতনের চাকরি নেন। ২০০৮ সালে নিজেই প্রতিষ্ঠা করেন 'এহসান রিয়েল এস্টেট' নামে এমএলএম কোম্পানি।

এই কোম্পানির মাধ্যমে আনুমানিক ১৭ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তার বিরুদ্ধে ১৫টির অধিক মামলা রয়েছে এবং তিনি এর আগে একবার জেলও খেটেছেন।

বৃহস্পতিবার রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১০-এর একটি দল রাজধানীর তোপখানা রোড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে তাকে। ধরা পড়েন সহযোগী আবুল বাশার খানও।

শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে রাগীবের বিরুদ্ধে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে হাজির করা রাগীব ও তার সহযোগী আবুল বাশার

তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে এমএলএম কোম্পানির নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় ভুক্তভোগীরা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, পিরোজপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলায় মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেন। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এর পরে গতকাল রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।’

র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাগীব আহসান তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ স্বীকার করে নানা তথ্য দিয়েছেন।

ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে টাকা উত্তোলন

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রাগীব মূলত ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতিকে অপব্যবহার করে এমএলএম কোম্পানির ফাঁদ তৈরি করেন। ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষ, ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যুক্ত ব্যক্তি, ইমাম ও অন্যদের টার্গেট করেই তিনি কাজ করতেন।

তিনি 'শরিয়তসম্মত সুদবিহীন বিনিয়োগ'-এর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করেন। ওয়াজ মাহফিলেও ব্যবসায়িক প্রচার-প্রচারণা চালানো হতো।

তিনি লাখ টাকার বিনিয়োগে মাসে মাত্রাতিরিক্ত মুনাফার প্রলোভন দেখান। এভাবে ২০০৮ সালেই ১০ হাজার গ্রাহককে যুক্ত করতে সমর্থ হন। এরপর গ্রাহকের সংখ্যা একপর্যায়ে ছাড়িয়ে যায় লক্ষাধিক।

র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, রাগীব হাউজিং ল্যান্ড প্রজেক্ট, দোকান, ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের আড়ালে সাধারণ গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। তিনি এখন পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদে ১১০ কোটি টাকা সংগ্রহের স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘অনেকেই পাওনা টাকার চেক নিয়ে ব্যাংকে গিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। এ ছাড়া অনেকেই ভয়ভীতি, লাঞ্ছিত ও নির্যাতিত হতেন বলে ভুক্তভোগীরা জানায়।’

রাগীব আহসানের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরছেন র‌্যাব কমান্ডার খন্দকার আল মঈন

তিনি কত টাকা আত্মসাৎ করেছেন এবং এই টাকা জঙ্গি তৎপরতায় ব্যবহার হতো কি না, এমন প্রশ্নে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘বিভিন্ন ভুক্তভোগীর তথ্য, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে আনুমানিক তিনি ১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

‘আত্মসাৎকৃত টাকা জঙ্গি তৎপরতায় ব্যবহার হয়েছে কি না, সেটা আমাদের গোয়েন্দারা খতিয়ে দেখবেন।’

ঠকিয়েছেন কর্মচারীদেরও

র‌্যাব জানায়, রাগীবের প্রায় তিন শ কর্মচারী ছিল। তাদের নির্ধারিত কোনো বেতন দেয়া হতো না।

কর্মচারীরা মাঠপর্যায় থেকে বিনিয়োগকারী গ্রাহক সংগ্রহ করে থাকেন। তাদের গ্রাহকের বিনিয়োগের ২০ শতাংশ অর্থ দেয়ার প্রলোভন দেখানো হয়। আর তারাও দ্রুত গ্রাহক বাড়াতে থাকেন। তবে পরে গ্রাহকদের মতো প্রতারিত হন তারাও।

রাগীবের ১৭টি প্রতিষ্ঠান

রাগীব আহসান জানান, তিনি ১৭টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এগুলো হলো এহ্সান গ্রুপ বাংলাদেশ, এহ্সান পিরোজপুর বাংলাদেশ (পাবলিক) লিমিটেড, এহ্সান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমেটেড, নূর-ই মদিনা ইন্টারন্যাশনাল ক্যাডেট অ্যাকাডেমি, জামিয়া আরাবিয়া নূরজাহান মহিলা মাদ্রাসা, হোটেল মদিনা ইন্টারন্যাশনাল (আবাসিক), আল্লাহর দান বস্ত্রালয়, পিরোজপুর বস্ত্রালয়-১ ও ২, এহ্সান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড, মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডিং অ্যান্ড কোং, মেসার্স মক্কা এন্টারপ্রাইজ, এহ্সান মাইক অ্যান্ড সাউন্ড সিস্টেম, এহ্সান ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস, ইসলাম নিবাস প্রজেক্ট, এহ্সান পিরোজপুর হাসপাতাল, এহ্সান পিরোজপুর গবেষণাগার, এহ্সান পিরোজপুর বৃদ্ধাশ্রম।

স্বজনদের যুক্ত করে ব্যবসায়িক কাঠামো

রাগীব তার নিকটাত্মীয়দের মধ্যে শ্বশুরকে তার গ্রুপের সহসভাপতি, বাবাকে প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা, ভগ্নিপতিকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক করেছেন।

রাগীব আহসানের তিন ভাইয়ের মধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া আবুল বাশার প্রতিষ্ঠানের সহ-পরিচালক।

এ বিভাগের আরো খবর