গভীর সমুদ্রে ঝড়ে মাছ ধরার ট্রলার ডুবে ভোলা সদরের ভেলুমিয়া এলাকার আট জেলে নিখোঁজ হয়েছেন।
গত সোমবার ভোরে বঙ্গোপসাগরের মহিপুরা পয়েন্টে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ডুবে যাওয়া ট্রলারের মাঝি সিরাজ মিয়া ফিরে এসে এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, ঝড়ের কবলে পড়া ট্রলারের তিনজন বুধবার পাড়ে ফিরেছেন। তবে পাঁচ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন ট্রলারমালিক নিরবসহ আট জেলে।
নিখোঁজদের সন্ধানে এখনও কোনো সংস্থা তৎপরতা শুরু করেনি বলে জানান তিনি।
সিরাজ মিয়া জানান, রোববার দুপুরে ভোলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নে নিজ নিজ বাড়ি থেকে সাগরে মাছ ধরার উদ্দেশে রওনা দেন তারা। পরদিন ভোরে ঝড়ের কবলে তাদের ট্রলার উল্টে যায়। তখন তারা সবাই ট্রলারের ভেতরে কেবিনে ছিলেন।
সেখান থেকে সিরাজ মাঝি, জাহাঙ্গীর হাওলাদার ও মজিদ মাঝি বের হয়ে দুই দিন ট্রলারের রশিতে নিজের বেঁধে প্রাণ বাঁচান। পরে ট্রলারে থাকা ভাসমান বস্তুর সাহায্যে ভাসতে থাকেন। একপর্যায়ে সাগরপাড়ের কাছাকাছি পৌঁছলে অন্য একটি মাছ ধরার ট্রলার তাদের উদ্ধার করে চরফ্যাশনের সামরাজ ঘাটে নামিয়ে দেয়।
আট জেলের খোঁজ পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।
ট্রলারডুবিতে নিখোঁজ জেলেদের বাড়িতে মাতম। ছবি: নিউজবাংলানিখোঁজ জেলেরা হলেন ট্রলারমালিক নিরব, তার ছেলে রুবেল, একই এলাকার দেলোয়ার চৌকিদার, সিরাজ, ইউসুফ, শহীদ, রফিকুল ইসালম ও বজলুর রহমান।
তারা সবাই ভোলা সদরের ভেলুমিয়া ইউনিয়নের কুঞ্জপট্টি এলাকার বাসিন্দা। নিরব মাঝির ট্রলারে তারা মাছ ধরতে যান সাগরে।
নিখোঁজ জেলে দেলোয়ারের ছেলে রুবেল বলেন, ‘ট্রলার নিয়ে আমরা সাগরে গেছিলাম। নিখোঁজদের কোনো খোঁজ পাইনি।’
ট্রলারমালিক নিরবের মা মানছুরা বলেন, ‘কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ১৬ লাখ টাকা দিয়া বোট কিনে নিরব। সাগরে গেছে মাছ ধরে লোন শোধ করব আশা কইরা। এখন ছেলে গেছে, নাতি গেছে, বোট গেছে। আমার সব শেষ। কে আমার সংসার চালাইব। কে আমোগোরে খাওয়াইব। দুজনের লাশ পাইলে ঘরের দুয়ারে মাটি দিতে পারতাম।’
নিখোঁজ সিরাজ ব্যাপারীর স্ত্রী জান্নাত বেগম বলেন, ‘শনিবার বিকেলে আমার স্বামীর সঙ্গে তার ছোট মেয়ের সবশেষ কথা হয়। তারপর আর কোনো কথা হয় নাই। আমার ছোট ছোট ছেলেমেয়ে এতিম হয়ে গেছে। এখন ওদের কে দেখব।’
ভেলুমিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মহসীন খাঁ বলেন, ‘১১ জেলে সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়েন। তিনজন জীবিত ফিরলেও আট জেলে নিখোঁজ আছেন। নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধার করতে হবে।’
এ বিষয়ে কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোন অপারেশন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট সাফকাত বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে আট জেলে নিখোঁজের খবর পেয়েছি। আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। নিখোঁজদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ভোলার জেলা প্রশাসক তৌফিক-ই-লাহী চৌধুরী জানান, নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধারে কোস্ট গার্ডকে বলা হয়েছে। তারা উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে।
নিখোঁজ ও জীবিত ফিরে আসা জেলেদের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে বলে জানান তিনি।