বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

করোনার মধ্যে বন্যার থাবায় ডুবছে তাঁতশিল্প

  •    
  • ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৮:৪৫

তাঁতশ্রমিক জহুরুল ইসলাম জানান, ‘তাঁত কারখানায় পানি উঠে পড়েছে, বেকার হয়ে রয়েছি। তাঁতমালিক নিজেও অভাবে আছেন। ফলে টাকা চেয়েও পাচ্ছি না। পরিবার-পরিজন নিয়ে চলতে হবে, তাই বাধ্য হয়ে নৌকা চালাচ্ছি।’

করোনাভাইরাসের প্রভাবে দীর্ঘ সময় ধরে দুরবস্থা চলছে সিরাজগঞ্জের তাঁতশিল্পে। তার ওপর নতুন দুর্যোগ হয়ে এসেছে বন্যা। করোনার ক্ষতি কাটিয়ে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য যখন চেষ্টা শুরু করেছেন তাঁতমালিকরা, ঠিক তখনই সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর পানি ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে বিভিন্ন উপজেলা। বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় জেলার আট শতাধিক কারখানা। কারখানাগুলোতে এখনো ডুবে আছে অর্ধলাখের মতো তাঁত মেশিন। বেকার হয়ে পড়েছে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত লক্ষাধিক শ্রমিক।

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের কারণে তাঁতের তৈরি কাপড়ের বাজারে চলছে মন্দা অবস্থা। এর প্রভাব পড়েছে সিরাজগঞ্জের তাঁতশিল্পেও। কোনোমতে টিকে আছে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা। সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছিল তারা। কিন্তু মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে হাজির হয় বন্যা।

চলতি মাসের শুরুতেই ফুঁসে ওঠে যমুনা নদী। বন্যার পানি ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, এনায়েতপুর ও শাহজাদপুর উপজেলার তাঁতশিল্প পড়েছে নতুন সংকটে। ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত আট শতাধিক কারখানায় পানি প্রবেশ করেছে। এই তাঁতশিল্পের সঙ্গে জড়িত লক্ষাধিক শ্রমিক এখন বেকার। চরম কষ্টে কাটছে তাদের দিনরাত। করোনা আর বন্যায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন তাঁতমালিকরাও।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সুতা প্রক্রিয়াজাতকরণ, নকশা তৈরিসহ তাঁত মেশিনে শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা তৈরিতে প্রতিদিন যেসব শ্রমিক কাজ করেন, তারা গত দুই সপ্তাহ ধরে কর্মহীন দিন কাটাচ্ছেন। নিম্ন আয়ের এসব মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

বেলকুচি থানার তাঁতশ্রমিক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘গত ১৫ দিন যাবৎ কাজ নেই, কারখানা পানিতে তলিয়ে রয়েছে। ফলে আমরাও বেকার হয়ে রয়েছি। এখনো কোনো ত্রাণ বা সহযোগিতা পাইনি।’

তাঁতশ্রমিক জহুরুল ইসলাম জানান, ‘তাঁত কারখানায় পানি উঠে পড়েছে, বেকার হয়ে রয়েছি। তাঁতমালিক নিজেও অভাবে আছেন। ফলে টাকা চেয়েও পাচ্ছি না। পরিবার-পরিজন নিয়ে চলতে হবে, তাই বাধ্য হয়ে নৌকা চালাচ্ছি।’

জেলার পাওয়ালুম মালিক সমিতির সভাপতি হাজি বদিউজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চলতি বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে তাঁতকুঞ্জ হিসেবে পরিচিত সিরাজগঞ্জের আট শতাধিক তাঁত কারখানা। পানিতে ডুবে যাওয়ায় নষ্ট হচ্ছে সুতা ও তাঁত মেশিনের যন্ত্রপাতি। ফলে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে আমাদের মতো তাঁতমালিকদের।

এক কথায় আমাদের স্বপ্ন এখন পানিতে নিমজ্জিত। একই সঙ্গে কারখানায় পানি উঠে পড়ায় কাজ না পেয়ে বেকার হয়ে রয়েছেন অনেক তাঁতশ্রমিকসহ এই শিল্পসংশ্লিষ্ট লক্ষাধিক মানুষ। পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। বন্যা শেষে নতুন করে এই শিল্পটিকে আবারো দাঁড় করাতে সরকারি প্রণোদনা ও স্বল্প সুদে ঋণের দাবি জানিয়েছেন মালিক সমিতির সভাপতি হাজি বদিউজ্জামান।

জেলা তাঁত মালিক সমিতির সভাপতি হাজি এম এ বাকী নিউজবাংলাকে বলেন, সিরাজগঞ্জ জেলার ৫ লক্ষাধিক পাওয়ারলুম ও হ্যান্ডলুম মেশিনে তাঁতপণ্য তৈরি হয়। চলতি বন্যায় জেলার তাঁতশিল্পসমৃদ্ধ সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুরের হাজার হাজার তাঁত পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। পানিতে নিমজ্জিত থাকায় তাঁত কারখানার সুতা প্রস্তুত করার ভিম, লোহার ল্যাংগোজ, মেশিনের পায়া ও ইলেকট্রনিক মোটরে মরিচা ধরছে, পচন ধরায় নষ্ট হয়ে গেছে সুতা।

বন্যা শেষে তাঁত কারখানা চালু করতে আবারো নতুন করে সুতা ক্রয় ও ভিম তৈরি করতে হবে, সংস্কার ও পরিবর্তন করতে হবে পাওয়ারলুম-হ্যান্ডলুমের মুল্যবান যন্ত্রপাতি। ফলে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছেন তাঁত ব্যবসায়ীরা। পুনরায় কারখানা চালু করতে প্রয়োজনীয় মূলধনের জোগান নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তাঁতমালিকেরা।

বেলকুচি পৌরসভার মেয়র সাজ্জাদুল হক রেজা বলেন, তাঁতশ্রমিকদের মাঝে পৌরসভা থেকে খাদ্যসহায়তা প্রদান করলেও মালিদের সহায়তা প্রদানের জন্য তাঁত বোর্ডকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তাঁত বোর্ড তালিকা তৈরি করে আগের মতো সহায়তা প্রদান করবে বলে জানা গেছে।

বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনিসুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তাঁতশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে তাঁত বোর্ড ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যেমে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে। আপাতত আমরা সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত ত্রাণের চাল ও নগদ অর্থ বিতরণ করছি শ্রমিকদের মাঝে।’

সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু ইউসুফ সূর্য জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও মালিকদের আর্থিক প্রণোদনা প্রদানের জন্য জেলা প্রশাসন ও তাঁত বোর্ডের মাধ্যমে বন্যাকবলিত তাঁত কারখানার তালিকা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বন্যা শেষে পুনরায় কারখানা চালু করতে স্বল্প সুদে ঋণ পাওয়ার জন্য মালিকদের পাশে থাকবে চেম্বার অব কমার্স।

এ বিভাগের আরো খবর