অকৃত্রিম বন্ধুত্বের নিদর্শন তৈরি করা কুমিল্লার সুধীর চন্দ্র দাশ ভালো নেই। বন্ধু আমির হোসেন সওদাগরকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছেন তিনি। ঠিকমতো খাচ্ছেন না। একটু পরপর আমির হোসেন বলে কেঁদে উঠছেন।
বার্ধক্যজনিত কারণে গত মঙ্গলবার রাতে সুধীর চন্দ্রের বন্ধু কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুণবতী এলাকার কাজী আমির হোসেন সওদাগরের মৃত্যু হয়। হিন্দুধর্মাবলম্বী হওয়ায় বন্ধুর জানাজায় অংশ নিতে না পারলেও জানাজাস্থলের পেছনে বসে তার কাঁদার একটি ছবি বুধবার ভাইরাল হয়।
এর পরই আলোচনায় আসেন সুধীর চন্দ্র। শুক্রবার দুপুরে চৌদ্দগ্রামের গুণবতী এলাকায় তার বাড়ি গিয়ে দেখা যায় তিনি শুয়ে আছেন।
তার স্ত্রী আরতী রানী দাশ বলেন, ‘আমির ভাই মারা যাওয়ার পর থেকে শুধু কাঁদেন তিনি। ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করেন না। আমির হোসেন কই গেলি আমারে লইয়া গেলি না বলে চিৎকার করেন।’
সুধীর চন্দ্রের দুই ছেলে ও পাঁচ মেয়ে। বড় ছেলে প্রবাসে আছেন। ছোট ছেলে অর্জুন চন্দ্র দাশ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বাবু (বাবা) ও আমির কাকার বন্ধুত্ব খুব গভীর ছিল। ঈদে আমরা আমির কাকার বাড়িতে যেতাম। আর দুর্গাপূজায় আমির কাকা আমাদের বাড়িতে আসতেন। দুই পরিবারের ঘনিষ্ঠতা পাড়া-প্রতিবেশীরা খুব ভালোভাবে জানে।’
আমির হোসেনের জানাজার পেছনে সুধীর বাবুর কান্নার এই ছবিটি বুধবার ভাইরাল হয়। ছবি: সংগৃহীতকথা বলতে বলতে এ সময় উঠে বসেন সুধীর। বন্ধু আমিরের সঙ্গে তার নানা স্মৃতির কথা বলেন।
তিনি জানান, তারা একসঙ্গে গুণবতী বাজারে ব্যবসা করতেন। ৭ বছর আগে অসুস্থতার জন্য ব্যবসা বন্ধ করেন তিনি। তবে বন্ধু আমিরের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত যেতেন। একসঙ্গে রাত পর্যন্ত গল্প করতেন।
সুধীর কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমি কেন মরলাম না, আমার বন্ধুরা ছাড়া আমি কেমনে থাইক্কাম। আমার বন্ধু নাই। আমি একলগে বাজার-সদাই করতাম। এলাকায় সর্দারি করতাম। আমরার দুই বন্ধুরে হগ্গলে সম্মান করত।’
তিনি জানান, আমির হোসেন ও সুধীর বাবু একসঙ্গে গুণবতী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েছেন। এরপর তাদের মধ্যে ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।
গুণবতী বাজারের ব্যবসায়ী মো. শহীদুল্লাহ্ বলেন, ‘বহু আগে থাইক্কা হেতেরা দোস্তি পাতছে। একলগে ব্যবসা করছে। একলগে চলত। দুইজন জোড়ের কইতর আছিল।’
বাজারের আরেক ব্যবসায়ী মো. ইব্রাহিম বলেন, ‘বহুত সম্পর্ক দেকছি, আমির ভাইসাব আর সুধীর বাবুর মতো এমন বন্ধুত্ব আর দেহি না।’
আমির হোসেনের ছেলে কাজী দেলোয়ার হোসেন সুমন বলেন, ‘আমার আব্বা ও সুধীর কাকার মধ্যে এত বছরের চলাচল। কখনও মনোমালিন্য হতে দেখিনি। আব্বায় মারা যাওয়ার পর কাকা অনেক কান্না করছে, আমাদের সান্ত্বনা দিছে।’
গুণবতী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমেদ খোকন ভূঁইয়া বলেন, ‘সওদাগর আমির হোসেন ভাই একজন প্রবীণ ব্যবসায়ী। আওয়ামী লীগের একজন নিবেদিত কর্মী। তার সঙ্গে সুধীর বাবুর যে সম্পর্ক ছিল তা অতুলনীয়।’