টাঙ্গাইল শহরে চিকিৎসক ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অবহেলায় সিজারের পর ১০ ঘণ্টা রক্তক্ষরণে এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে চেষ্টা করেও অভিযুক্ত চিকিৎসকের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ক্লিনিক মালিকের দাবি, রোগীর অবস্থার অবনতির বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি।
পুলিশ বলছে, অভিযোগ পেলে তারা বিষয়ে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবে।
শহরের নূরুল আমিন খান মাল্টিপারপাস মেডিক্যাল সেন্টার থেকে কুমুদিনী হাসপাতালে নেয়ার পথে শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে মারা যান ওই প্রসূতি।
ওই নারীর নাম রিনা বেগম। তিনি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাকুয়া ইউনিয়নের রাঙাচিরা গ্রামের ইসরাইল মিয়ার স্ত্রী।
ইসরাইল জানান, প্রসববেদনা শুরু হলে বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে রিনাকে নূরুল আমিন খান মাল্টিপারপাস মেডিক্যাল সেন্টারে ভর্তি করা হয়। পরে গাইনি চিকিৎসক সাজিয়া আফরিনের নেতৃত্বে রাত সাড়ে ১২টার দিকে সিজাররের মাধ্যমে রিনার মেয়ে সন্তান হয়। রাতে রিনাকে কেবিনে আনার পর সেলাইয়ের জায়গা থেকে রক্ত পড়তে থাকে।
তিনি আরও জানান, বিষয়টি রাতেই দায়িত্বে থাকা নার্সকে জানানো হয়। তিনি ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ও ডাক্তারকে জানান। তাদের একাধিকবার ফোন করলেও তারা কেউ আসেননি। শুক্রবার সকালে রিনার অবস্থার অবনতি হলে ক্লিনিকের পক্ষ থেকে তাকে কুমুদিনী হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
ক্লিনিকের নার্স অনামিকা সরকার বলেন, ‘আমি আজ (শুক্রবার) সকাল থেকে দায়িত্ব পালন করছি। গতকাল এখানে কী হয়েছে, আমি তা জানি না।’
রিনার মা চায়না বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ের সিজার ভালোভাবে করা হয়নি। সিজারের পর থেকেই ওর পেট ফুলতে থাকে। সেলাইয়ের দুই পাশ দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হলেও ক্লিনিকের কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমার মেয়ে বারবার ডাক্তারের কথা বলেছে। কিন্তু ডাক্তার আসেনি। ডাক্তারের অবহেলায় আমার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে।’
ক্লিনিকের রিসিপশনিস্ট সাদিয়া আফরিন বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। ক্লিনিকের ম্যানেজার সেলিম জাবেদ ও মালিক সরোয়ার হোসেন খান বাইরে আছেন। তারা কখন ফিরবেন তাও জানি না।’
এ বিষয়ে নূরুল আমিন খান মাল্টিপারপাস মেডিক্যাল সেন্টারের মালিক সরোয়ার হোসেন খান বলেন, ‘গত রাত সাড়ে ১২টার দিকে প্রসূতির সিজার করা হয়। তারপর তাকে ব্লাডও দেয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ব্লিডিং বন্ধ না হলে সকালে ডাক্তার রাউন্ডে এসে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমুদিনী হাসপাতালে রেফার করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো ধরনের অভিযোগ নিয়ে রোগীরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চিকিৎসক সাজিয়া আফরিনের সঙ্গে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন।
টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে এখনও কিছু জানি না। কেউ থানায় কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’