কখনও ৫০ ফুট উচ্চতায়, কখনওবা এর থেকে বেশি উঁচু গাছে অনায়াসেই উঠে যাচ্ছেন মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার আবুল বাশার।
নির্ভুলভাবে কাটছেন ডাবের ডগা কিংবা নারিকেল। ধারালো দা দিয়ে তার এ কাজ চলছে চোখের দৃষ্টি ছাড়া। তবু একটুও ভুল করছেন না তিনি। তার প্রতিভা দেখে অবাক হচ্ছেন যে কেউ।
জন্মের দুই বছরের মাথায় ছোট্ট একটি দুর্ঘটনায় বাশার মাথায় আঘাত পান। সামান্য আঘাত ভেবে তার পরিবার তেমন গুরুত্ব দেয়নি।
তার বাবা আবু তালেব বিশ্বাস ও মা খাদিজা বেগম।
বাশারের মা জানান, হঠাৎ একদিন বাশার আর কিছুই চোখে দেখতে পারেন না। স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে তাকে নিয়ে গেলে জানা যায়, সে আর চোখে দেখবে না। এ নিয়ে বিপাকে পড়ে যায় পরিবার।
নিউজবাংলার প্রতিবেদক কথা বলেন বাশারের সঙ্গে। তিনি জানান, দুই চোখে কোনো কিছু দেখতে না পারলেও সুস্থ মানুষের মতো সহজেই সব কাজ করতে পারেন তিনি।
বাশার বলেন, ‘হাতের অনুভূতি দিয়েই আমি টের পাই কত বড় গাছে উঠব। গাছের গোড়ায় হাত রেখে কোনো কিছু না দেখতে পেয়েও বলতে পারব গাছের কত উঁচুতে নারিকেল আছে।’
তাছাড়া শুধু নারিকেলগাছে ওঠা নয়, বড়শি দিয়ে মাছও ধরতে পারেন বাশার। তিনি বলেন, ‘সুতার টান টের পেয়ে বুঝতে পারি মাছ বড়শিতে আটকাইছে কি না। বিলে অনেক সময় মাছ ধরতে গেলে আমার বড় ছেলেটাকে নিয়ে যাই।’
যন্ত্রপাতি চালাতে পারার কারণে নিজ এলাকা ছাড়াও আশপাশের এলাকা থেকে চাপকল ঠিক করার কাজেও খোঁজা হয় বাশারকে।
তিনি জানান, এ দক্ষতা অর্জন করতে তাকে অনেক পরিশ্রম করা হয়েছে। তার বড় ছেলে ভারী জিনিসপত্র তোলার ক্ষেত্রে তাকে সাহায্য করে।
বাশারের বাবা আবু তালেব বিশ্বাস জানান, আল্লাহ সব শক্তি বাশারকে দিয়েছেন। দৃষ্টিহীন হলেও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে সংসারের হাল ধরেছেন তিনি।
স্থানীয় প্রতিবেশী আমজাদ মিয়া জানান, আবুল বাশার ছোট থেকে চোখে দেখতে না পারলেও তার অনেক প্রতিভা। এই যেমন দা ধার দিচ্ছেন আবার ধার হয়েছে কি না তা হাতের স্পর্শে পরীক্ষা করছেন। অনেক উঁচুতে থাকা গাছে উঠে নারিকেল পারছেন। চোখে না দেখলে এসব বিশ্বাস হবে না।
বাশার তিন সন্তানের জনক। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বাকিরা এখনও পড়াশোনা করছে।
বালিদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পান্নু শিকদার নিউজবাংলাকে জানান, দৃষ্টিহীন হয়েও তিনি অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে সংসার চালান। এটা সমাজের জন্য অনুকরণীয়। কিছুই দেখতে না পেয়েও পরিশ্রমী হয়ে আয় করেন; এটা প্রশংসনীয়।
মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রামানন্দ পাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘‘আবুল বাশারের কথা আমি জেনেছি বিটিভির ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।’’
তিনি বলেন, ‘মূলত ঐ ইউনিয়নে সরকারি খাসজমি পাওয়া যায়নি। অন্যখানে হলে ব্যবস্থা করা সহজ হবে। নিয়ম অনুসারে প্রধানমন্ত্রীর ঘর উপহার পাওয়ার কথা থাকলে তা খতিয়ে দেখব।’
এ ছাড়াও বাশারের সব প্রয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা করবেন তিনি।
যেভাবে বাশার উপার্জন করছেন তা সত্যিই সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে জানান ইউএনও রামানন্দ পাল।