বন্যায় রংপুর অঞ্চলে ১৯১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেড় বছর পর আগামী রোববার পাঠদানের জন্য বিদ্যালয় খোলার প্রস্তুতি চলছে। কিন্তু চলাঞ্চলের কিছু বিদ্যালয়ের মাঠ ও মাঠের বাইরে এখনও পানি জমে আছে। ফলে বিদ্যালয় খুললেও শিক্ষার্থী উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
যদিও কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, পাঠদান নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা নেই। শনিবারের মধ্যে স্কুলগুলো শতভাগ উপযুক্ত করে তোলা হবে। সে অনুযায়ী কাজও চলছে।
রংপুর বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিস জানিয়েছে, বিভাগের পাঁচ জেলায় এসব প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে রংপুরে একটি, কুড়িগ্রামে ৭৩টি, গাইবান্ধায় ১০২টি, লালমনিরহাটে পাঁচটি, নীলফামারীতে ১০টি। এ ছাড়া গদীগর্ভে বিলীন হয়েছে আরও চার বিদ্যালয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে চরাঞ্চলের কিছু বিদ্যালয়ের মাঠে এখনও পানি জমে আছে। কোনো কোনো স্কুলের মাঠ থেকে পানি নেমে গেলেও রয়েছে কাদা। বিদ্যালয়ের মেঝেতে গর্ত, চরাঞ্চলের শিটশেড বিদ্যালয়গুলোর বেড়া নষ্ট, চলাচলের রাস্তা ভেঙে গেছে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বসার চেয়ার ও টেবিল নষ্ট হয়েছে। সেগুলো মেরামতের কাজ চলছে।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত স্কুল মেরামত করছেন কর্তৃপক্ষ। ছবি: নিউজবাংলা
নদীগর্ভে চলে যাওয়া ৪ স্কুলের শিক্ষার্থীদের পাশের ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে (বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র) ক্লাসের ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
স্কুল মাঠে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার, স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয়দের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক চলছে।
বিভাগীয় শিক্ষা কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা এসব স্কুল পরিদর্শনে গেছেন।
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা গ্রামের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মোগল মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, 'স্কুল তো খুলবে। বন্যার পানিতে স্কুলে আসা-যাওয়ার রাস্তায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সন্তানদের স্কুলে পাঠানো ঝুঁকি আছে, তবুও পাঠাতে হবে। কারণ, অনেকদিন থেকে ছেলে মেয়েরা বাড়িতে বসে আছে।'
কুড়িগ্রামের উলিপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উম্মে হাবিবা নিউজবাংলাকে বলেন, 'স্যারদের নির্দেশনা অনুযায়ী সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রস্তুতিতে কোনো ত্রুটি নেই। শিক্ষার্থীদের তাপমাত্রা মাপার জন্য থার্মোমিটার কেনা, ব্লিচিং পাউডার দিয়ে কক্ষ, টয়লেট, বাথরুম পরিষ্কার করা হয়েছে। বিশুদ্ধ পানির জন্য টিউবওয়েল ঠিকঠাক করা হয়েছে।'
কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শহীদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে জানান, 'বিদ্যালয় খুলতে সব প্রস্তুতি আছে। আমাকে অফিসাররা জানিয়েছেন কোনো স্কুলে পানি জমে নেই। যদি স্কুলে পানি থাকে তাহলে আমরা ওই স্কুলে ক্লাস সাসপেন্ড করব। সেক্ষত্রে ভিন্নভাবে ক্লাস চালুর ব্যবস্থা করা হবে।'
গাইবান্ধা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হোসেন আলী জানান, 'যেসব বিদ্যালয়ে পানি উঠেছিল তা নেমে গেছে। আমরা সব পরিষ্কার করে প্রস্তুতি নিচ্ছি। আর একটি স্কুল ভেঙে গেছে নদীতে, সেটি আপাতত অন্য জায়গায় সরিয়ে নেয়া হয়েছে।'
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগীয় উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মুজাহিদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে জানান, 'বন্যায় যেসব বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এরইমধ্যে সেগুলো মেরামত করা করে পাঠদানের উপযোগী করা হয়েছে। যে কয়টি বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে, সেগুলো পাশের বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে আপাতত চালু হবে। দ্রুত ভবন নির্মাণ করে স্কুল শিফট করা হবে।'
এবার বিদ্যালয় খুলতে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্থানীয় অভিভাবকরাও বেশ আগ্রহী এবং তারাও অনেক সহযোগিতা করছেন বলে জানান ওই কর্মকর্তা।