পোশাক রপ্তানিতে ফের ভিয়েতনামকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। বিশ্ববাজারে পোশাক রপ্তানিতে মাস খানেক আগে দেশটির কাছে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থান হারিয়েছিল।
চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে বিশ্ববাজারে ভিয়েতনামের চেয়ে প্রায় ২০০ কোটি (২ বিলিয়ন) ডলারের বেশি পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এ হিসাবে বলাই যায়, পোশাক রপ্তানিতে ভিয়েতনামকে টপকে আবার দ্বিতীয়স্থান বাংলাদেশ দখল করে নিয়েছে।
ভিয়েতনামের অবস্থান এখন তৃতীয়। আর বরাবরের মতো চীন সবার ওপরেই আছে।
কিন্তু এই দ্বিতীয় অবস্থানের দাবি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে করতে পারছে না বাংলাদেশ। কারণ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) সদস্য সব দেশের বাণিজ্য পর্যালোচনার রিপোর্ট এখনও প্রকাশ করেনি।
গত ৩১ জুলাই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিসটিকস রিভিউ ২০২১ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। তাতেই বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় অবস্থান দখল করেছিল ভিয়েতনাম।
প্রতিবছর প্রথম ভাগে এই রিপোর্ট প্রকাশ করে থাকে ডব্লিউটিও। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে এবার ৩১ জুলাই প্রকাশ করেছিল। সেক্ষেত্রে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্থান পুনরুদ্ধারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা পেতে আরও ৬ মাসের মতো অপেক্ষা করতে হবে।
কয়েক বছর ধরেই পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয়স্থান হারানোর শঙ্কা ছিল বাংলাদেশের সামনে। চীনের পোশাক খাতের অনেক বিনিয়োগ ভিয়েতনামে চলে যাওয়ায় এই শঙ্কা দিন দিন জোরাল হচ্ছিল।
গত দু-তিন বছরে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছিল ভিয়েতনাম। শেষ পর্যন্ত টপকেই যায়।
তবে, এ নিয়ে মোটেই উদ্বিগ্ন ছিলেন না বাংলাদেশের পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান।
বৃহস্পতিবার দেশের বাইরে থেকে মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি আগেই বলেছিলাম এটা নিয়ে আমি মোটেও বিচলিত নই। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আমরা আবার দ্বিতীয় স্থানে চলে আসব। তাই হলো, এক মাসের মধ্যেই আমরা আবার সেই দ্বিতীয় স্থানে ফিরে এসেছি। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বাকি মাত্র।’
তিনি বলেন, মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যেও গত অর্থবছরে আমাদের পোশাক রপ্তানি ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরেও সেই ধারা অব্যাহত আছে।
‘আমরা প্রচুর অর্ডার পাচ্ছি; যতটা প্রত্যাশা করেছিলাম, তার চেয়েও বেশি। আমাদের প্রধান বাজার ইউরোপ-আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। আমাদের পরিস্থিতিও উন্নতি হচ্ছে। এখন আমাদের আর কোনো চিন্তা নেই। যদি অন্য কোনো বড় সমস্যা দেখা না দেয়, তাহলে এবারও আমরা বড় প্রবৃদ্ধি নিয়ে অর্থবছর শেষ করব। সেক্ষেত্রে ২০২১ সাল শেষে আমরা ভিয়েতনামের চেয়ে কমপক্ষে ৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি পোশাক বিশ্ববাজারে রপ্তানি করতে সক্ষম হব-এটা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি।’
তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে বরাবরই শীর্ষে রয়েছে চীন। এক দশক আগে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে উঠে এলেও করোনাভাইরাস মহামারির ধাক্কায় গত বছর বাংলাদেশকে টপকে দ্বিতীয় স্থানে উঠে যায় ভিয়েতনাম।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিসটিকস রিভিউ’তে দেখা যায়, ২০২০ সালে ১৪২ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করে প্রথম অবস্থানে ছিল চীন। বিশ্ববাজারে তাদের অংশীদারত্ব ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসা ভিয়েতনামের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৯ বিলিয়ন ডলার; বিশ্ববাজারে অংশীদারত্ব ৬ দশমিক ৪ শতাংশ, যা আগের বছর ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ।
আর গতবছর বাংলাদেশ ২৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করে; মোট বিশ্ব রপ্তানিতে অংশ ছিল ৬ দশমিক ৩ শতাংশ, যা আগের বছর ছিল ৬ দশমিক ৮ শতাংশ।
২০১০ সালে তৈরি পোশাকের বিশ্ব রপ্তানি বাজারে ৪ দশমিক ২ শতাংশ অংশীদারত্ব অর্জন করে তুরস্ককে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় অবস্থানে এসেছিল বাংলাদেশ। এরপর থেকে এই অবস্থানেই ছিল।
তখন তুরস্কের অবস্থান ছিল ৩, ভারতের অবস্থান ছিল ৪। ওই সময় বিশ্ববাজারে ভিয়েতনামের অবস্থান ছিল তাদের পেছনে।
কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির শুরুতে বিশ্বের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ায় গত বছরের এপ্রিলে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় তলানিতে গিয়ে ঠেকে। তাতে ভিয়েতনাম পেছন থেকে উঠে এসে বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে যায়।
তবে এরপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং ভিয়েতনামের ট্রেড প্রমোশন কাউন্সিলের (ভিয়েট্রেড) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১ হাজার ৮৮০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। আর এই একই সময়ে ভিয়েতনামের রপ্তানির মোট পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৬৮৬ কোটি ডলার।
এই পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন আপাতত ২ বিলিয়ন ডলার এগিয়ে থাকতে দেখা গেলেও প্রকৃত অর্থে এটা আরও বেশি হবে। কারণ ভিয়েতনাম তাদের পোশাক ও টেক্সটাইল সেক্টর মিলিয়ে তথ্য প্রকাশ করে। আমরা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শুধু পোশাক রপ্তানির কথা বলছি। আমাদের টেক্সটাইল সেক্টরের অন্যান্য পণ্যের রপ্তানি তথ্য যোগ করে বললে অংকটা অনেক বড় হবে।’
চলতি পঞ্জিকা বছর শেষে ডব্লিউটিওর প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় স্থানে থাকবে নিশ্চিত আশাবাদ ব্যক্ত করে রুবেল বলেন, ‘এখন বছরের মাঝামাঝি সময়ে ২ বিলিয়ন ডলার এগিয়ে আছি। বছর শেষে সেটা ৪ বিলিয়নেরও বেশি ছাড়িয়ে যাবে। কারণ, পোশাক খাতে এখন প্রচুর অর্ডার রয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এর প্রতিফলন দেখা যাবে।’