করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতে প্রণোদনার ঋণ বিতরণে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রাম বিভাগ থেকে বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে সার্কুলার জারি করে সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, সিএমএসএমই খাতে সরকারঘোষিত ২০ হাজার কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ বাস্তবায়নে বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ের বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলমান। এ পর্যায়ে বাস্তবায়ন আরও সহজতর করার জন্য আগের জারি করা নির্দেশনাগুলো সমন্বিত এবং নতুন কিছু নির্দেশনা যোগ করে একীভূত আকারে নতুন নির্দেশনা জারি করা হলো।
ব্যাংক ও খাতওয়ারি ঋণে বণ্টন ও মেয়াদ
সিএমএসএমই প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় তফসিলি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা আগের বছরের নিট সিএমএসএমই ঋণের স্থিতি (শ্রেণীকৃত ঋণ বাদ দিয়ে) এবং পূর্ববর্তী বছরের প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের হার বিবেচনায় নির্ধারিত হবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনে লক্ষ্যমাত্রা বাড়াতে বা কমাতে পারবে।
বরাদ্দ করা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৭০ শতাংশ মাইক্রো, কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্প খাতে (সিএমএস) এবং সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ মাঝারি শিল্প খাতে দিতে হবে।
সিএমএস খাতে ৭০ শতাংশ ঋণের আনুপাতিক হারে উৎপাদন ও সেবা উপখাতে সম্মিলিতভাবে ন্যূনতম ৬৫ শতাংশ এবং ট্রেডিং (ব্যবসা) উপখাতে সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ দেয়া যাবে।
মাঝারি শিল্প খাতে দেয়া ঋণ উৎপাদন ও সেবা উপখাত থেকে সম্মিলিতভাবে অর্জন করতে হবে। বার্ষিক মোট ঋণের ন্যূনতম ৮ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাদের দিতে হবে। প্যাকেজের মেয়াদ ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।
প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় কুটির, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র খাতের উদ্যোক্তাদের চলতি মূলধন এবং মেয়াদি উভয় ধরনের ‘ঋণ/বিনিয়োগ’ সুবিধা দেয়া যাবে। মাঝারি খাতের উদ্যোক্তা শুধু চলতি মূলধন সুবিধা পাবেন। কোনো উদ্যোক্তা ঋণ গ্রহণের পর সর্বোচ্চ এক বছর এ প্যাকেজের আওতায় সরকার থেকে ভর্তুকি পাবেন।
যারা ঋণ নিতে পারবেন
শুধু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোগ এ সুবিধার আওতাভুক্ত হবে। ঋণখেলাপিরা এ সুবিধা পাবেন না। এ ছাড়া কোনো ঋণ গ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের কোনো ঋণ ‘মন্দ বা ক্ষতিজনক’ মানে শ্রেণীকৃত হওয়ার পর তিনবারের অধিক পুনঃতফসিলকৃত হলে সেই প্রতিষ্ঠান এ সুবিধা পাবে না।
যাদের নামে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে কোনো ঋণ নেই, তবে যারা এযাবৎ নিজস্ব পুঁজি দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছিলেন, কিন্তু বর্তমানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ সুবিধা নিতে আগ্রহী তারা ঋণ নিতে পারবেন।
ঋণের সীমা, মেয়াদ ও ব্যবহার
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্বীয় বিবেচনায় ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। তবে ঋণ সীমা পূর্ববর্তী বছরে দেয়া ঋণের বেশি হবে না।
প্যাকেজের আওতায় প্রথম বছরে যেসব উদ্যোক্তা তাদের প্রাপ্য সীমার সম্পূর্ণ অংশ গ্রহণ করতে পারেননি, তারা চলতি বছরে প্রাপ্যতার অবশিষ্ট অংশ গ্রহণ করতে পারবেন।
ব্যবসায়িক লেনদেন সন্তোষজনক হলে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণ নীতিমালার আওতায় তা নবায়ন করতে পারবে। সে ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ের জন্য সরকারের কাছ থেকে সুদ বা মুনাফা বাবদ কোনো ভর্তুকি দেয়া হবে না।
এ ঋণ নিয়ে অন্য কোনো ঋণ সমন্বয়, পরিশোধ, ব্যবসা সম্প্রসারণ, নতুন কোনো ব্যবসা চালুর জন্য ব্যবহার করা যাবে না।
সুদহার ও শিডিউল অব চার্জেস
সুদের হার ৯ শতাংশ। এর মধ্যে ৪ শতাংশ গ্রহীতা এবং ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে পরিশোধ করবে।
নির্ধারিত শিডিউল অব চার্জেস ব্যতীত অন্য কোনো চার্জ/ফি আরোপ করা যাবে না। কোনো প্রকার অদৃশ্য ফি আরোপ হলে বাংলাদেশ ব্যাংক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
ঋণের বিষয়ে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকে কোনো ভুল তথ্য দিলে সেই প্রতিষ্ঠান প্যাকেজের সুদ ভর্তুকি সুবিধা পাবে না। উল্টো বিতরণ করা ঋণের ওপর ২ শতাংশ হারে দণ্ড সুদ দিতে হবে।
ঋণ যথাযথভাবে হচ্ছে কি না, তা তদারকি করার জন্য প্রতিটি ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের প্রধান কার্যালয়ের আওতায় একটি ‘বিশেষ মনিটরিং সেল’ গঠন করে বিষয়টি নিয়মিত তদারকি করবে।
মনিটরিং টিমের সদস্যদের হালনাগাদ তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস্ ডিপার্টমেন্ট’-এ দিতে হবে।