এয়ারপোর্ট-গাজীপুর রোডে যানজট কমাতে ঢাকা বাস র্যাপিড ট্রানজিট (ঢাকা বিআরটি) প্রকল্পের কাজ ৬০ শতাংশের কিছু বেশি শেষ হয়েছে। বাকি কাজ শেষে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে লেগে যাবে ২০২৩ সালের শুরু পর্যন্ত। যার অর্থ এই পথে যাত্রীদের অসহনীয় যানজট সহ্য করতে হবে আরও প্রায় দেড় বছর।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিআরটি প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি, সমস্যাবলী ও সম্ভাবনাগুলো তুলে ধরেন ঢাকা বিআরটি কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক শফিকুল ইসলাম।
তিনি জানান, প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে ৬৩ দশমিক ২৭ শতাংশ শেষ হয়েছে। যেভাবে কাজ এগুচ্ছে তাতে ২০২২ সালের শেষ নাগাদ সব কাজ সম্পন্ন করা যাবে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৩ সালের শুরুতেই চালু হবে বিআরটি সেবা।
২০১২ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটির ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দফায় দফায় তা বাড়ানো হয়েছে। ২ হাজার ৪০ কোটি টাকার প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৬৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
এই প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রিতায় দুর্ভোগের শেষ নেই ঢাকা থেকে গাজীপুর রোডে। কখনও কখনও এমনও যানজট বাঁধে এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুরের চৌরাস্তা পার হতে লেগে যায় ২ থেকে ৩ ঘণ্টা। এই যানজটের প্রভাব পড়ে উত্তরা, বনানী এলাকায়ও।
সংবাদ সম্মেলনে শফিকুল ইসলাম জানান, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে অবকাঠামোর সমস্ত কাজ শেষ হবে। আর ২০২৩ সালের শুরুতে বিআরটির সিস্টেম পুরোপুরি চালু হবে। কয়েকটা জায়গায় অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শতভাগ শেষ হওয়ায় এখন থেকেই জনদুর্ভোগ কমতে শুরু করবে।
প্রাথমিকভাবে এই প্রকল্প চালু হবে এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুরের শিববাড়ি পর্যন্ত। পর্যায়ক্রমে তা গুলিস্তান হয়ে কেরাণীগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বিআরটির অধীনে তিন ধরনের বাস থাকবে; নন এসি, এসি, প্রিমিয়াম। বিআরটির টিকিট দিয়ে চড়া যাবে মেট্রোরেলেও।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিআরটি সরকার শুরু করলেও এক সময় এটা প্রাইভেট সেক্টরে ছেড়ে দেয়া হবে। সরকার আর একটা বিআরটিসি তৈরি করতে চায়না।
শফিকুল ইসলাম জানান, এই প্রকল্পের আওতায় বাসগুলো হবে সিএনজি চালিত। ১২৯টি বাস কেনার প্রয়োজন হলেও আপাতত ১০০ বাস কেনার প্রস্তুতি চলছে। ১২ মিটার লম্বা বাসগুলোর প্রতিটির মূল্য পড়তে পারে ২ কোটি টাকা। ডিসেম্বর ২০২২ এর মধ্যে বাস ডিপোতে সার্ভিসের জন্য পৌঁছে যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রকল্পের আওতায় ৪.৫ কিলোমিটার এলিভেটেড সড়ক, ছয়টি ফ্লাইওভার ও ২৫টি বিআরটি স্টেশনসহ মোট ২০.৫০ কিলোমিটার করিডোর নির্মাণ করা হবে। এ করিডোরে দুটি সংরক্ষিত বিআরটি লেন, চারটি মিক্সড ট্রাফিক লেন, দুটি যান্ত্রিক লেন ও পথচারী চলাচলের জন্য ফুটপাথের ব্যবস্থা থাকবে।
বিআরটি করিডোরের উভয়পাশে যাত্রীদের যাতায়াতের জন্য ৬৫টি সংযোগ সড়ক ইতোমধ্যেই নির্মাণ করা হয়েছে, যা যাত্রীদের সড়কের এপাশ থেকে ওপাশে যেতে সহায়তা করবে।
মূল করিডোর ও সংযোগ সড়কগুলোর উভয়পাশে পানি নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। সংরক্ষিত লেনে নির্দিষ্ট সময় পরপর অধিক যাত্রীধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ১২ মিটার দীর্ঘ স্ট্যান্ডার্ড এসি বাস চলাচল করবে। প্রতিবন্ধীদের জন্য স্টেশনে লিফটের ব্যবস্থা থাকবে।
যাত্রীদের সুবিধার্থে ই-টিকেটিং ব্যবস্থাসহ বাস স্টেশনে স্বয়ংক্রিয় টিকেট কাউন্টার এবং বাস আগমনের আগাম বার্তা প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এটাই হবে ঢাকা ও গাজীপুর মহানগরীর মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রথম বাসভিত্তিক আরামদায়ক গণপরিবহন সেবা।
বিআরটি কোনোরকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়া নিশ্চিতভাবে ৩৫-৪০ মিনিটের মধ্যে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে পৌঁছাবে এবং প্রতি ঘণ্টায় উভয় দিকে ২০ হাজার যাত্রী পরিবহন করতে সক্ষম হবে।
ডিসেম্বর ২০১২ সালে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদিত হয়। এরপর প্রকল্পের বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন, দরপত্র আহ্বান ও ঠিকাদার নিয়োগের পর ২০১৭ সালের এপ্রিলে পূর্ত কাজ শুরু হয়।
ঢাকা বিআরটি প্রকল্প চালু হলে যানজট কমবে ঢাকা-গাজীপুর রোডে
প্রকল্পের কাজ বিলম্ব হওয়ার কারণও তুলে ধরেন শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তিন বছর সময় লেগেছে বিআরটি প্রকল্পের ডিজাইন প্ল্যানিংয়ে। দুই বছর লেগেছে টিকাদার নিয়োগে। এক বছর লেগেছে কাজ শুরুর জন্য সাইট অফিস ও লেবার থাকার স্থান করার জন্য। ২০১৮ সালে মূলত কাজ শুরু হয়েছে। এরপর দুই বছর কোভিড পরিস্থিতি কাজের গতি কমে যায়।
শফিকুল জানান, অত্যন্ত ব্যস্ততম করিডোরে যান চলাচল সচল রেখে নির্মাণ কাজ চালিয়ে নেয়া ছিল দুরূহ কাজ। ভূমি অধিগ্রহণ, ভূগর্ভস্থ ও ওভারহেড ইউটিলিটি স্থানান্তর এবং বিদ্যমান সড়কের অপ্রতুল ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে নির্মাণ কাজ বিলম্বিত হয়েছে। এ ছাড়া, নির্মাণ কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের অপর্যাপ্ত অর্থ প্রবাহের কারণে নির্মাণ কাজের কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন হয়নি।
বিআরটি সিস্টেম পরিচালনা, বাস্তবায়ন এবং ব্যবস্থাপনার জন্য ১০০ ভাগ সরকারি মালিকানাধীন ঢাকা বিআরটি ১ জুলাই ২০১৩ তারিখে প্রতিষ্ঠা করা হয়।
এ কোম্পানির আওতায় বাস ও আইটিএস ক্রয়, বিজনেস মডেল প্রণয়ন, বিআরটি সার্ভিস পরিচালনা ও অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিভিন্ন অপারেটর নিয়োগ এবং প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ কার্যক্রম চলমান আছে।