জাতিসংঘ ও পশ্চিমা দেশগুলো অনুমোদন না দিলে আফগানিস্তানে তালেবানের অন্তর্বর্তী সরকারকে বাংলাদেশও স্বীকৃতি দেবে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
মন্ত্রণালয়ে বুধবার বিকেলে তালেবান ইস্যুতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আফগানিস্তানের উন্নয়নে জাতিসংঘ ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) উদ্যোগ নিলে সে বিষয়ে সমর্থন দেবে বাংলাদেশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘আফগানিস্তানে তালেবানদের অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারকে স্বীকৃতি দেয়া না দেয়ার সিদ্ধান্ত এখনই নেবে না বাংলাদেশ। এমনকি দেশটিতে একটি স্থায়ী সরকার গঠনের আগে স্বীকৃতি প্রশ্নে কোনো সিদ্ধান্তই নেবে না বাংলাদেশ। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে।
আফগানিস্তানের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে। এর আগে তালেবানরা বলেছিল, অন্তবর্তীকালীন সরকারটি হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক। যেমন সরকারে নারীর অংশগ্রহণ থাকবে। কিন্তু সেটা এখনও দেখা যায়নি।
‘এর আগে বিশ্বের অধিকাংশ দেশই তালেবানদের নিষিদ্ধ করেছিল। এবার তালেবানরা পরিবর্তিত চেহারায় আসছে, এমন একটা বার্তা দিয়েছিল। সেই বার্তার প্রতিফলন কতটা হয়, সেটা এখনও দেখার বাকি আছে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের একটা আদর্শিক অবস্থান আছে। সেই অবস্থানের বিষয়ে বাংলাদেশ আপস করবে না। এ কারণে আফগানিস্তানে নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়ে তাড়াহুড়া করবে না বাংলাদেশ। পরিস্থিতি গভীরভাবে নজর রাখা হবে।
‘এরপর একটা স্থায়ী সরকার গঠিত হলে, সেটা কীভাবে গঠিত হয়, তাও পর্যবেক্ষণ করা হবে। এরপর পুরো পরিস্থিতি বিচার-বিশ্লেষণ করে একটা সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ। এর আগপর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্বীকৃতি প্রশ্নে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না।’
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে কোনো আলোচনা হলে তাতে বাংলাদেশ অংশ নেবে বলে জানিয়েছেন শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ আফগানিস্তানে শান্তির জন্য তালেবানদের সঙ্গে যদি কোনো সংলাপে যায় কিংবা ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদি সেখানে অর্থনৈতিক সহায়তার জন্য কোনো সংলাপের আয়োজন করে, তাহলে সেসব সংলাপে অংশ নেবে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল, আফগানিস্তানে অর্থনৈতিক সহায়তা বিষয়ে একটি সংলাপের আয়োজন করা হলে সেখানে বাংলাদেশ পার্টি হবে কি-না, বাংলাদেশ সেই সংলাপে অংশ নেবে কি-না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
কাবুলে থাকা বাংলাদেশিদের বিষয়েও কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কাবুলে আরও ১০ বাংলাদেশি অবস্থান করছেন। এর মধ্যে তিনজন উন্নয়নকর্মী। বাকি সাতজন কাবুলে থেকে যেতে চেয়েছেন। কেন তারা সেখানে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন, সে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।’
পরে এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ নীতিগতভাবে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠা হোক এবং কোনো ধরনের যুদ্ধ পরিস্থিতি না থাকুক, সেটা চায়। আফগানিস্তানে যেসব বিদেশি নাগরিক আছেন, তাদের নিরাপত্তা এবং নিরাপদে কাবুল ত্যাগ করার ব্যবস্থা হোক, সেটা চায়।
মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দকে প্রধান করে মঙ্গলবার আফগানিস্তানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা করে তালেবান। এ সরকারে হাসান আখুন্দের ডেপুটি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তালেবানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা আবদুল গনি বারাদার।
ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মোস্ট ওয়ান্টেড হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান সিরাজুদ্দিন হাক্কানি।
সংগঠনের রাজনৈতিক প্রধান শের মোহাম্মদ আব্বাস স্ট্যানেকজাইকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়েছে। আর তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে মোল্লা ইয়াকুবকে করা হয়েছে ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তালেবান নেতা হেদায়াতুল্লাহ বদরিকে করা হয়েছে ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রী।
তালেবান মুখপাত্র জাবিহউল্লাহ মুজাহিদ জানান, আফগানিস্তানে নতুন ইসলামিক সরকারে এখন পর্যন্ত ৩৩ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
গত এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষণা দেন, আফগানিস্তানে দুই দশকের যুদ্ধের ইতি টেনে সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব সেনা ফেরত নেবেন। মে থেকে উজ্জীবিত তালেবান আফগানিস্তানের একের পর এক প্রদেশ দখল নিতে শুরু করে।
সবশেষ গত ১৫ আগস্ট রাজধানী কাবুল ও প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ দখলে নিয়ে সবকিছুতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে কট্টর ইসলামপন্থি দলটি। তবে সরকার গঠনে সময় নিচ্ছিল তালেবান। সেই অপেক্ষার অবসান হলো।
কাবুল ও প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ দখলের পরই সম্ভাব্য সরকার নিয়ে তালেবান বলেছিল, তারা ২০ বছর আগের অবস্থানে নেই। এবার অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠন করা হবে, যেখানে থাকবে সবার অংশগ্রহণ। রাখা হবে নারী প্রতিনিধি।
সময়ের সঙ্গে সুর পাল্টায় তালেবান। জানায়, এককভাবেই সরকার গঠন করবে তারা। রাখা হবে না কোনো নারী নেতৃত্বও। অন্তর্বর্তী সরকারেও তা-ই দেখা গেল।
তালেবান সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে দীর্ঘ সময়ের যুদ্ধে দেশের ভগ্নদশা অর্থনীতি চাঙা করা, দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সম্পর্ক স্থাপন করা।