পদ্মা সেতুর সুরক্ষায় শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে ফেরি চলাচল আপাতত বন্ধ রাখা হলেও স্রোত কমে এলে এই রুটে আবার ফেরি চালু হবে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
সচিবালয়ে বুধবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ পরিকল্পনার কথা জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘জনভোগান্তির কথা মাথায় রেখে পদ্মার স্রোত কমে এলে এবং অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত না হলে আগামী ১০ দিনের মধ্যে এই রুটে ফেরি চলাচল আবারও শুরু হবে।
‘মাওয়ায় এখনও ফোর নট কারেন্ট (স্রোতের বিপজ্জনক মাত্রা) চলছে, এর নিচে এলে তখন এটা আমরা চালু করব। এখন পানির প্রবাহ বাড়ছে। আজকেও খবর নিয়েছি অতিরিক্ত পানির প্রবাহ আছে। এ অবস্থা সেখানে হয়ত মাওয়া থেকে বাংলাবাজার যাওয়ায় অসুবিধা নেই, কিন্তু ফেরাটা খুব সমস্যা।’
কারণ ব্যাখ্যা করে খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘জাজিরা চ্যানেলে কিন্তু ইতোমধ্যে ৫০ শতাংশ ভাঙন হয়ে গেছে। এটা এখন থাকবে কি না তাও বলা যাচ্ছে না। এই ঝুঁকিটা আমরা নিতে চাচ্ছি না স্রোতের মধ্যে। গতবছর যখন ফেরিগুলো চলেছে তখন স্প্যানগুলো বসানো ছিল না। এখন একটা সুনির্দিষ্ট পকেটের মধ্য দিয়ে ফেরিগুলো চালাতে হয়। কারণ সব স্প্যান বসে গেছে, পদ্মা সেতু অলমোস্ট রেডি আছে বলা হয়। এমন অবস্থায় ঘুর্ণনগুলো যখন শুরু হয় তখন কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করাটা কঠিন হয়ে যায়।’
অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত না হলে আগামী ১০ দিনের মধ্যে স্রোত নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা নৌপরিবন প্রতিমন্ত্রীর। তিনি বলেন, ‘যেহেতু কয়েকটা ঘটনা ঘটে গেছে। এই ঘটনাগুলোর কারণে যতটুকু তাদের উদাসীনতা ও কর্তব্যে অবহেলা ছিল সেজন্য আমরা ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছি।’
ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথাও স্বীকার করেছেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছে, কষ্ট হচ্ছে পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়া দিয়ে। তারপরেও আমরা বলেছি, পানির এই স্রোতটা কমে না যাওয়া পর্যন্ত আমরা ফেরি চলাচলটা বন্ধ রাখছি।’
মাঝিরকান্দিতে বিকল্প ফেরি ঘাট তৈরি করা হলেও সংকট কাটবে না বলে জানান খালিদ মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘বিকল্প ফেরি ঘাট আমরা মাঝিরকান্দিতে তৈরি করেছি। কিন্তু ওখানে ১৩ নম্বর পিলারেও পলি জমে গেছে, বালু জমে গেছে, সেখানে ফেরি চলাচল সম্ভব না। আমরা দুইবার ট্রায়াল দিতে গিয়েও সেটি সম্ভব হয়নি, সেটা ড্রেজিং করতে হবে।’
ড্রেজিং করে সেটা ঠিক করার চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। বলেন, ‘ড্রেজার নিয়ে গিয়েছিলাম, পানির স্রোতের কারণে ড্রেজার টিকতে পারেনি। ড্রেজার নিতে গিয়ে আরেকটা ঝামেলা যদি হয়ে যায়। তাই এই মুহূর্তে আমরা ঝুঁকি নিতে চাচ্ছি না। হরিণা ও আলুবাজারে আমরা ফেরি বাড়িয়ে দিয়েছি। আমরা পাটুরিয়া, দৌলতদিয়া ও কাজিরহাট, আরিচা রুটে ফেরি বাড়িয়ে দিয়েছি।’
খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘পদ্মা তো আনপ্রেডিকটেবল। আজ এ জায়গায় আছে, কাল আরেক রূপ নিতে পারে। যখন এটা আমাদের আয়ত্ত্বের মধ্যে, নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আসবে তখনই আমরা ফেরি চলাচল শুরু করে দেবো। কয়েকটা ঘটনা ঘটার কারণে মাস্টার আর সুকানিরাও একটা মানসিক ধাক্কার মধ্যে আছে। তাদের মধ্যেও কিছুটা ভীতির সঞ্চার হয়েছে।’
পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, এ ঘটনাগুলো ঘটার মধ্য দিয়ে দেশবাসীকে আর আতঙ্কের মধ্যে রাখতে চাই না। পদ্মা সেতু এমন একটি সেনসেটিভ জায়গায় চলে গেছে যে, বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ সব থেকে আপন স্থাপনা মনে করে পদ্মা সেতুকে। নিজের বাড়িঘরের থেকেও পদ্মা সেতুকে মনে করে, এটি আমার আপন। এটিই বাংলাদেশ। কাজেই এই জায়গাটায় আমরা সতর্ক আছি।’