বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সব দোকানে ভ্যাট মেশিন বসবে কবে

  •    
  • ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১০:১২

করোনা মহামারিসহ নানা কারণে গত জুন মাস পর্যন্ত মাত্র ৩ হাজার ৩৯৩টি দোকানে ভ্যাটের মেশিন বসেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে আরও ১০ হাজার ইএফডি মেশিন বসানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ফাঁকি বন্ধে যোগ্য সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আধুনিক প্রযুক্তির মেশিন ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) বসানোর পরিকল্পনা নেয়া হয় দুই বছর আগে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, কাঙ্ক্ষিত হারে এই মেশিন বসাতে পারেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড–এনবিআর।

রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেছেন, করোনাভাইরাসের কারণে এ-সংক্রান্ত কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় এখন কাজ পুরোদমে চলছে। আশা করা যাচ্ছে, চলতি বছরের ডিসেম্বরে একটা ভালো ফল পাওয়া যাবে।

ইএফডি হচ্ছে এক ধরনের হিসাব যন্ত্র। এটি ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার বা ইসিআরের উন্নত সংস্করণ।

ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন ব্যবহার করা হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভ্যাটের টাকার হিসাব এনবিআরের মূল সার্ভারে চলে যাবে। এ ব্যবস্থায় তথ্য গোপন বন্ধ হবে এবং প্রতিদিনের লেনদেনের প্রকৃত তথ্য জানা যাবে। ফলে কমবে ফাঁকি। বাড়বে রাজস্ব আয়।

রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১০ হাজার দোকানে ইএফডি মেশিন বসানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু ওই বছর মেশিন আমদানি করা যায়নি বলে একটাও বসাতে পারেননি ভ্যাট কর্মকর্তারা।

পরবর্তীকালে গেল ২০২০-২১ অর্থবছরেও ১০ হাজার মেশিন বসানোর লক্ষ্য ঠিক করা হয়। কিন্তু করোনা সংক্রমণসহ নানা কারণে জুন মাস পর্যন্ত মাত্র ৩ হাজার ৩৯৩টি দোকানে ভ্যাটের মেশিন বসেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩০ শতাংশ।

এমন বাস্তবতায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ১০ হাজার ইএফডি মেশিন বসানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

২০১৯ সালে ভ্যাট আইন চালুর সময় ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিনা মূল্যে এক লাখ ইএফডি মেশিন বিতরণের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল।

দেশে বর্তমানে আড়াই লাখের বেশি প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নিবন্ধন আছে। অথচ দুই বছরে মাত্র সাড়ে ৩ হাজারের মতো প্রতিষ্ঠানে ভ্যাট মেশিন বসানো সম্ভব হয়েছে।

প্রশ্ন উঠেছে, অবশিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান ইএফডির আওতায় আনতে আর কত বছর সময় লাগবে?

বর্তমানে ২৫ ধরনের ব্যবসায় স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে হিসাব রাখা বাধ্যতামূলক, যাদের বার্ষিক টার্নওভার বা মোট লেনদেনের পরিমাণ ৫ কোটি টাকার বেশি। ফলে ভ্যাট নিবন্ধিত অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানকে ইএফডির আওতায় আনতে হবে।

ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প অফিসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনার কারণে চলমান কার্যক্রম ব্যাহত হয়। তা ছাড়া দরপত্র প্রক্রিয়ায় কিছু জটিলতাও তৈরি হয়। এসব জটিলতা নিরসন হচ্ছে। এ বছরের ডিসেম্বরে একটা ভালো ফল পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।’

এদিকে ভ্যাট মেশিন বসানো নিয়ে ব্যবসায়ীদের কিছু আপত্তি আছে। বর্তমানে একটি মার্কেটে ১০ শতাংশ মেশিন বসানো হয়। অর্থাৎ একটি মার্কেটে ১০০ দোকান থাকলে মাত্র ১০টি দোকানে ভ্যাট কর্মকর্তারা ইএফডি মেশিন বসান।

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, এতে করে পণ্যের দামের ক্ষেত্রে অসমতা তৈরি হয়। কারণ, যেসব দোকানে ইএফডি মেশিন বসানো হয়, সেসব দোকানে ভ্যাটসহ পণ্যের দাম বেশি পড়ে, যে কারণে ক্রেতারা ওই সব দোকান এড়িয়ে চলেন। সে জন্য ব্যবসায়ীদের দাবি হচ্ছে: একটি মাকের্টে যত দোকান আছে, সবগুলোতে একসঙ্গে ইএফডি মেশিন বসানো হোক।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বলেছি যদি ইএফডি মেশিনের সংকট থাকে, তা হলে খাতভিত্তিক যেমন স্বর্ণের দোকান কিংবা চশমার দোকানে একসঙ্গে বসানো হোক। তা হলে জটিলতা নিরসন হবে এবং ব্যবসায় সমতা আসবে।’

এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, ‘এটি কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। ভ্যাটের মেশিন না থাকলে ভ্যাটের চালান কাটা যাবে না, আইন তা বলে না।

আইন হচ্ছে, যেকোনো পণ্য বিক্রিতে চালান ইস্যু করা বাধ্যতামূলক। আসল কথা হলো, এক শ্রেণির ব্যবসায়ী ভ্যাটের আইন পরিপালন করছেন না।’

ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প অফিসের কর্মকর্তারা বলেন, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার গত এক বছরে বিভিন্ন সময়ে বিধিনিষেধ দিয়েছে। তখন দোকানপাট বন্ধ ছিল।

তাই লক্ষ্য অনুয়ায়ী ইএফডি মেশিন বসানো সম্ভব হয়নি। চলতি অর্থবছরে আরও ১০ হাজার মেশিন বসানো সম্ভব হবে। যারা মেশিন সরবরাহ করবে, তাদের দিক থেকে মেশিন আমদানিতে কোনো সমস্যা নেই।

দেশে ভ্যাট আইন চালুর পর একটি চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট মেশিন আমদানির কার্যাদেশ দেয়া হয়। কিন্তু ২০১৯ সালের শেষের দিকে করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ায় মেশিন আমদানির বিষয়টি আটকে যায়।

ঢাকা ও চট্টগ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে চালুর জন্য ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে চীন থেকে ১০০টি মেশিন আনা হয়। কিন্তু তখন দেশে করোনার কারণে বিধিনিষেধ জারি করা হয়। ফলে চীনা প্রকৌশলীরা আসতে পারেননি।

এর চার মাস পর আগস্টে পরীক্ষামূলকভাবে ইএফডি মেশিন বসানো হয়। পরে তা নিয়মিত করা হয়। আমদানি করা ইএফডি মেশিনের সিংহভাগ দেয়া হয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহর এবং আশপাশের এলাকায়।

এ বিভাগের আরো খবর