পিরোজপুর সদরে এহ্সান গ্রুপ পিরোজপুর নামের একটি এমএলএম কোম্পানির বিরুদ্ধে গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এর প্রমাণ মিলেছে প্রশাসনের তদন্তেও।
জমা দেয়া টাকা ফেরতে বিভিন্ন সময় বিক্ষোভ করেছেন গ্রাহকরা, কিন্তু কার্যালয় বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে গেছেন এহ্সান গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মুফতি রাগীব আহসান। তার অন্য কর্মীদেরও হদিস মিলছে না।
এমন বাস্তবতায় গচ্ছিত টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত গ্রাহকরা। এ নিয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চাইছে তারা।
পিরোজপুর সদর উপজেলার খলিশাখালী এলাকায় ২০১০ সালে শুরু হয় এহ্সান রিয়েল এস্টেট নামের একটি প্রতিষ্ঠান। পরবর্তী সময়ে সে কোম্পানির নাম পরিবর্তন হয়।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৩ থেকে ১৪ বছর আগে একটি মসজিদে নামমাত্র বেতনে ইমামতি করতেন মুফতি রাগীব আহসান। পরে ইমামতি ছেড়ে কাজ নেন একটি এমএলএম কোম্পানিতে। সেখানকার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তোলেন এহ্সান রিয়েল এস্টেট। এখন এর নাম এহ্সান গ্রুপ পিরোজপুর। এ গ্রুপের অধীনে রাগীব গড়ে তোলেন ১৪টি প্রতিষ্ঠান।
ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্মভীরু লোকজনের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটির মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা।
গ্রাহকদের বলা হয়, এক লাখ টাকার বিপরীতে মাসে দুই হাজার টাকা মুনাফা দেয়া হবে।
এভাবে ১০ হাজার জনের কাছ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা নেয়া হয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী দাবি করা গ্রাহকদের।
এহ্সান গ্রুপে টাকা জমা রাখা আবুল কালাম, রফিক মোল্লাসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার প্রতিবেদকের।
তারা জানান, শুরুর পর কয়েক বছর ঠিকমতো গ্রাহকদের সঙ্গে লেনদেন স্বাভাবিক ছিল। গত প্রায় ২ বছর ধরে গ্রাহকদের টাকা পরিশোধে টালবাহানা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। ধীরে ধীরে গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগও বন্ধ করে দেয়। এখন পিরোজপুর অফিসের কার্যক্রম বন্ধ করে লাপাত্তা প্রতিষ্ঠানটির মালিক ও কর্মচারীরা।
গ্রাহকদের দাবি, রাগীব আহসান আত্মগোপনে দেশেই আছেন। পুলিশ-প্রশাসন চাইলেই অভিযান চালিয়ে তাকে ধরতে পারে। গচ্ছিত টাকা উদ্ধারে তারা প্রশাসনের সহযোগিতা চাইছেন।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মুজিবুল হক বলেন, এহসান গ্রুপের অধীনে একটি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স সমবায় অধিদপ্তর থেকে নেয়া। সেখানে গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহে অনিয়ম ধরা পড়েছে।
এহসান গ্রুপের জালিয়াতির বিষয়টি তদন্তে জেলা প্রশাসন একটি কমিটিও গঠন করে। সে তদন্তে জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানান কমিটির সদস্য পিরোজপুর প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মুনিরুজ্জামান নাসিম আলী।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, সমবায় দপ্তর থেকে নেয়া লাইসেন্সের শর্ত ভেঙে সংগ্রহ করা আমানত গ্রাহকদের ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে।
তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেন থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
এহ্সান গ্রুপের কর্মীরা আত্মগোপনে থাকায় এসব অভিযোগের বিষয়ে তাদের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।