চট্টগ্রামের সাগরিকা স্টেডিয়ামের বাঁ পাশ ধরে এগিয়ে ৫ মিনিট হাঁটার পর রেললাইন। রেললাইন ধরে পশ্চিমে এগুতেই হাতের ডান পাশে শহুরে কৃষক সিরাজুল ইসলামের বাড়ি। তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় প্রায় ১২ শতক আয়তনের একটি পুকুরজুড়ে হাসছে শাপলা ফুল।গ্রামের পুকুরে ও ডোবায় প্রচুর শাপলা দেখা যায়। কিন্তু সেই শাপলার সঙ্গে কৃষক সিরাজুল ইসলামের পুকুরের শাপলার অনেক ফারাক। ফুল ও ডাটা গ্রামের পুকুরের শাপলার চেয়ে আকারে বেশ বড়।
এর কারণ জানতে কথা বলি সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, এই পুকুরের শাপলা আর অন্যান্য পুকুরের শাপলা আসলেই এক নয়। এই পুকুরে মূলত শাপলা চাষ করেন তিনি।
শহরে বসে গত চার বছর ধরে শাপলা চাষ করছেন কৃষক সিরাজুল ইসলাম। এই শাপলা প্রতি মাসে ৮ থেকে ১০ বার বিক্রি করেন তিনি। এতে প্রতি মাসে তার আয় হয় ১০ হাজার টাকা। এভাবে প্রতি বছর পুকুরে পানি থাকা সাপেক্ষে ৬ মাস শাপলা চাষের আয় দিয়ে চলে সিরাজের সংসার।
শহরে বসে এই শাপলা চাষের পরিকল্পনা কীভাবে পেলেন জানতে চাইলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চার বছর আগে কোনো এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলাম লক্ষ্মীপুরে। এ সময় সেখানকার এক পুকুরে এমন চাষ করা শাপলা দেখে আমার মনে হলো আমার বাসার পাশেও তো একটা পুকুর আছে। আমিও তো চাইলে এটা চাষ করতে পারি। তাই সেবছর বীজ সংগ্রহ করে পুকুরে ফেলি, দেখি পানি হওয়ার পর ভালো ফলন হয়েছে।’
‘পরে দেখি পাশের হিন্দু গ্রামে শাপলা ফুলের বেশ কদর। তাদের কিছু পূজায় নাকি এই ফুল কাজে লাগে। তারা এসে আমার শাপলা কয়েকদিন পর পর পাইকারি দরে কিনে নিয়ে যায়। সাধারণত একটা শাপলা ৪ থেকে ৬ টাকা। তবে পাইকারি দরে তা ২ থেকে ৩ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। তবে চাষ করার সময় কম হলেও কিছু খরচও আছে। প্রতিবার শাপলা চাষ করতে বীজ, সার ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকার মতো খরচ হয় আমার।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন তো মাত্র ৬ গণ্ডা (প্রায় ১২ শতক) জায়গায় চাষ করি, সামনে আরও ১৩ গন্ডায় চাষ করব। এখানে পানি হলে অন্যান্য সবজি ও ধানের ক্ষতি হলেও শাপলার কোনো ক্ষতি হয় না।’
কৃষক সিরাজুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা সরকারি কোনো সহযোগিতা পাই না। স্থানীয় নই বলে ঋণও পাইনা। সরকার যদি একটু ঋণ-টিন দিত আমি আরেকটু বড় করে চাষাবাদ করতে পারতাম। কিন্তু ঋণ তো পাই না।’
অবশ্য শুধু শাপলা নয়, ধানসহ অন্যান্য সবজিও চাষ করেন সিরাজল। প্রতিবছর সব মিলিয়ে সবজি চাষে ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করেন তিনি। এতে তার উপার্জন হয় দুই লাখ টাকার মতো। তবে এ বছর করোনা এবং বন্যা মিলিয়ে সবজি বিক্রি করে মূলধন তুলতে পারলেও লাভের মুখ দেখেন নি।
তিনি জানান, ‘আমার বাড়ি মূলত ভোলায়, নদী ভাঙনে চলে যায় বাড়ি। তারপর ২০০৩ সালের দিকে আসি চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামে আসার পর একজনের কাছ থেকে দুই একর জায়গা নিয়ে চাষাবাদ শুরু করি। তাকে প্রতিবছর ৬০ হাজার টাকা খাজনা দিতে হয়।
‘তখন থেকে আমি ঝিঙ্গে, চিচিঙ্গা, বরবটি, ঢেঁড়স, ধুন্দল, মিষ্টি কুমড়া, ধান এসব চাষাবাদ শুরু করি। পাশাপাশি কিছু গরু-ছাগলও লালন পালন শুরু করি। এতে দেখা যায় আমার খরচ বাদ দিয়ে প্রতিবছর দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা থাকে। আবার যখন নিজের কাজ থাকে না, তখন অন্যের জমিতেও কাজও করি।’
কাট্টলী এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব ঘোষ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মেট্রোপলিটন এলাকার কৃষকদের জন্য আপাতত তেমন কোনো আর্থিক সহায়তা বা কৃষিঋণের ব্যবস্থা নেই। তবে সামনে ছাদকৃষির একটা প্রজেক্ট আসতে পারে। তখন মেট্রোপলিটন এলাকার কেউ ছাদ কৃষি করতে চাইলে এই প্রজেক্টের আওতায় সহযোগিতা পেতে পারেন।
‘আর ধান চাষের ক্ষেত্রেও কিছু সহযোগিতা পেতে পারেন। তবে মেট্রোপলিটন এলাকায় কোনো কৃষক চাইলে আমাদের পরামর্শ নিতে পারবেন। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেই আমরা প্রযোজনীয় সব পরামর্শ দিতে প্রস্তুত।’