বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইউনিব্লকে দৃষ্টিনন্দন গ্রামীণ সড়ক

  •    
  • ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ২১:০৭

এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জানান, ইউনিব্লক তৈরি করা হয় বালি, পাথরকুচি ও সিমেন্টের মিশ্রণে। সেগুলো রোদে শুকিয়ে ব্যবহারের উপযোগী করা হয়। এই পুরো প্রক্রিয়ায় পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কোনো বিষয় নেই।

রাস্তা তৈরিতে ইটের পরিবর্তে ইউনিব্লক ব্যবহার করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে নাটোরের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)।

পরিবেশবান্ধব এই প্রযুক্তিতে তৈরি হয়েছে জেলা সদরের সুলতানপুর ও আওরাইল গ্রামের মধ্যকার রাস্তা। একদিকে যেমন দৃষ্টিনন্দন, অন্যদিকে চলাচলেও ভোগান্তি কমেছে গ্রামবাসীর।

এলজিইডি কার্যালয়ের তথ্যমতে, ইউনিব্লকে তৈরি দেশের প্রথম সড়ক এটি। প্রায় দুই কিলোমিটার এই রাস্তা তৈরিতে লেগেছে এক কোটি আট লাখ টাকা।

এই প্রযুক্তিতে আরও সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা আছে বলেও জানিয়েছেন জেলার এলজিইডির কর্মকর্তারা।

কী এই ইউনিব্লক

এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলামের সঙ্গে ইউনিব্লকের রাস্তার বিষয়ে কথা হয় নিউজবাংলার প্রতিবেদকের।

তিনি জানান, ইউনিব্লক তৈরি করা হয় বালি, পাথরকুচি ও সিমেন্টের মিশ্রণে। সেগুলো রোদে শুকিয়ে ব্যবহারের উপযোগী করা হয়। এই পুরো প্রক্রিয়ায় পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কোনো বিষয় নেই।

তিনি বলেন, সাধারণত রাস্তা তৈরির জন্য ব্যবহার করা nq ইট-বিটুমিন। এর জন্য ভাটায় পুড়িয়ে বানানো হয় ইট। এসব ভাটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। সরকারের নানা নিয়ম-নিষেধাজ্ঞার পরও ইটভাটা গড়ে উঠছে কৃষিজমির পাশে। ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ফসল উৎপাদনের ক্ষতি হচ্ছে।

অন্যদিক ইউনিব্লক তৈরি করা হয় রোদে শুকিয়ে। তাতে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয় না। বালু, পাথর, সিমেন্ট দেশেই পাওয়া যায়। খরচ কিছুটা বেশি হলেও দেশীয় উপাদান দিয়েই এগুলো বানানো যায়। বিদেশি উপাদানের ওপর নির্ভর করতে হয় না।

এলজিইডির এই কর্মকর্তা জানান, সাধারণ ইট-বিটুমিনের চেয়ে ইউনিব্লকের সড়ক বেশি টেকসই। নির্মাণ খরচ বেশি লাগলেও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ একেবারেই কম।

তিনি বলেন, বর্ষাকালে ইট-বিটুমিনাসের রাস্তার খুবই ক্ষতি হয়, প্রতি বর্ষা মৌসুমে গ্রামের এসব সড়ক মেরামত করা লাগে। ট্রাক-বাসের চাপ এসব সড়ক বেশি নিতে পারে না। চার বছর পরপর বড় ধরনের সংস্কারের প্রয়োজন হয়।

ইউনিব্লকগুলোর সাইডে খাজকাটা থাকে। যখন পাশাপাশি ব্লকগুলো বসানো হয়, তখন খুব সহজেই ভাঁজে ভাঁজে পড়ে যায়। তাতে ইন্টারলকিং ভালো হয়। এর ফলে বাস-ট্রাকের ভার প্রতিটা ব্লকে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে। একটি ব্লক আরেকটি ব্লকের সঙ্গে ভার ভাগাভাগি করে নেয়, যা ইটের ক্ষেত্রে হয় না। এ ছাড়া বৃষ্টিতে এটি ক্ষয় হয় না।

ইউনিব্লকে খরচ কেমন

প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জানান, ইউনিব্লকের সড়ক নির্মাণে খরচ তুলনামূলক বেশি। কারণ এতে পাথর, বালু, সিমেন্ট লাগে প্রচুর পরিমাণে।

তিনি বলেন, ইউনিব্লকে একটি নতুন রাস্তা বানাতে গেলে ১০ ফুট চওড়া রাস্তায় প্রতি কিলোমিটারে খরচ পড়বে এক কোটি চার লাখ টাকা। সেখানে প্রচলিত কার্পেটিংয়ের রাস্তা বানাতে লাগে ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টাকা।

তবে ইউনিব্লকের রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণে খরচ কম। চার বছর পরপর এই রাস্তা মেরামতে কিলোমিটারপ্রতি ১০ লাখ টাকা খরচ হয় বলে জানিয়েছেন এলজিইডির কর্মকর্তারা। অন্যদিকে সাধারণ রাস্তা চার বছর পর সংস্কারে খরচ হয় ৩৫ লাখ টাকার মতো।

নতুন সড়ক পেয়ে গ্রামবাসীর উচ্ছ্বাস

সরেজমিনে দেখা যায়, সুলতানপুর-আওরাইল গ্রামের সড়কের পাশে বসে গল্প করছে নানা বয়সী মানুষ। নতুন সড়ক পেয়ে উচ্ছ্বসিত সবাই।

স্থানীয় নজরুল ইসলাম বলেন, ‘পিচঢালা রাস্তাটা দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছিল। তাই আমাদের কাঙ্ক্ষিত এই রাস্তা নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে ইউনিব্লকে তৈরি করায় আমরা খুব খুশি হয়েছি। এই সড়কে এখন মোটরসাইকেল, গাড়ি স্লিপ করার ভয় নেই। আমার ৫০ বছর বয়সে এত সুন্দর গ্রামের সড়ক দেখিনি।’

গৃহবধূ বিলকিস বানু বলেন, ‘আগে একটু বৃষ্টির হলেই রাস্তায় পানি জমে যেত। কাদার জন্য এই রাস্তা দিয়ে হাঁটা যেত না। এখন সুন্দর একটা রাস্তা পেয়েছি। সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।’

আজিজুল ইসলাম নামের এক যুবক জানান, সুলতানপুর-আওরাইল গ্রামের চেহারাই পাল্টে গেছে এই সড়কের কারণে। আশপাশের এলাকা থেকে মানুষ এই রাস্তা দেখতে আসে।

নতুন এই সড়ক পেয়ে সবচেয়ে খুশি কৃষকরা। তারা বলছেন, আগে বৃষ্টি হওয়ার পর পিচ্ছিল হয়ে থাকত। তখন ফসল নিয়ে হেটে যাওয়া যেত না। আবার খানাখন্দ হয়ে থাকত বলে কোনো যানবাহনও নির্বিঘ্নে চলতে পারত না। এখন সেই ঝামেলা নেই|

কৃষক হাসান আলী বলেন, ফসল নিয়ে হাটে যেতে এখন আর কোনো চিন্তা নেই। শহর-বন্দরে যাওয়াও সহজ হয়ে গেল।

এই সড়কের কাজ করেছেন ঠিকাদার সোয়াইব হাসান মাসুদ।

তিনি জানান, নাটোরে ইউনিব্লক তৈরি হয় না। চট্টগ্রাম, সিলেট থেকে ব্লকগুলো আনতে হয়েছে। সরবরাহ খরচ যুক্ত হওয়ায় নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে। এখন জেলায় যেহেতু ইউনিব্লকে আরও সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে, সে কারণে স্থানীয়ভাবে ব্লক নির্মাণের ব্যবস্থা করলে খরচ কমে যেত।

এলজিইডির প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জানান, এই গ্রামের সড়ক জেলায় বেশ সাড়া ফেলেছে। অন্যান্য জেলার জন্যও এটি অনুকরণীয়।

তিনি জানান, জেলায় এ বছর ইউনিব্লক দিয়ে পর্যায়ক্রমে সাড়ে ৯ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। তাতে খরচ ধরা হয়েছে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা।

এ বিভাগের আরো খবর