বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

১০ দ্রুতগতির মেগা প্রকল্পের ৭টিরই গতি ধীর

  •    
  • ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ২১:৩০

অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে অনেক মন্ত্রণালয় ও সংস্থা জড়িত। অনেক ক্ষেত্রে এসব সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব থাকে। অর্থায়ন একটি বড় সমস্যা। এসব কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখা যায়।

সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ১০টি মেগা প্রকল্পের তিনটির অগ্রগতি সন্তোষজনক হলেও বাকি সাতটি প্রত্যাশার চেয়ে অনেক পিছিয়ে। যে তিন প্রকল্পের অগ্রগতি ভালো, সেগুলো হচ্ছে পদ্মা সেতু, পায়রা বন্দর ও ঢাকা মেট্রোরেল-৬।

বিপুল ব্যয়ের এসব অবকাঠামো প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সরকারের বিশেষ মনোযোগ থাকায় এগুলোকে ‘ফাস্ট ট্র্যাক’ প্রকল্প বলা হয়।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে পদ্মা সেতু। এটি প্রায় ৯০ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। অন্য দুটির অগ্রগতি ৮৩ শতাংশ এবং ৭২ শতাংশ।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সবশেষ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।

টেকসই প্রবৃদ্ধি ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ২০০৯-১০ অর্থবছরে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘোষণা দেয়া হয়।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বাস্তবায়ন করলেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রকল্পগুলো নিয়মিত তদারকি করে থাকে।

অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে অনেক মন্ত্রণালয় ও সংস্থা জড়িত। অনেক ক্ষেত্রে এসব সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব থাকে। অর্থায়ন একটি বড় সমস্যা। এসব কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখা যায়।

যোগাযোগ করা হলে সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের সাবেক ঊর্ধ্বতন গবেষণা পরিচালক বর্তমানে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখ্‌ত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনার কারণে বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যাহত হয়েছে। একটি প্রকল্পের কাজ যখন থেমে যায়, তখন পুনরায় চালু হতে সময় লাগে।’

ড. জায়েদ বখ্‌ত জানান, বেশির ভাগ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে বিদেশি অর্থায়নে। তাদের অর্থছাড়ে নানা শর্ত ও জটিলতা থাকে। এতে করে প্রকল্পের বাস্তবায়ন পিছিয়ে পড়ে।

প্রতিবেদনে আইএমইডি জানিয়েছে, চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশের বৃহত্তম সেতু অবকাঠামো পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি প্রায় ৯০ শতাংশ।

গত ডিসেম্বরে ৪১তম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এর পর জুলাই মাসের শেষে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সড়কপথের মাধ্যমে নদীর উভয় পাশ সংযোগকারী সব রোড স্ল্যাব স্থাপনের কাজ শেষ করে। এর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ আরেক ধাপ এগিয়ে গেল। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা।

আগামী বছরের জুনে এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। মূল সেতু নির্মাণ ও নদীশাসনের জন্য বাকি কাজ শেষ করার সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে।

নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ হাজার ১৯০ কোটি টাকায় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর কাজ ২০১৪ সালের নভেম্বরে শুরু হয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বাংলাদেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রার কাজের অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮২ দশমিক ৮৬ শতাংশ। বন্দরটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২২ সালের জুনের মধ্যে।

এই বন্দরের কাজ শেষ হলে পাল্টে যাবে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল। দেশ সমৃদ্ধ হবে অর্থনৈতিকভাবে।

ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প বা মেট্রোরেল-৬-এর বাস্তবায়নের হার ৭১ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এই প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। এর ৭৬ শতাংশ অর্থায়ন করছে জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা। অবশিষ্ট টাকা বাংলাদেশ সরকারের।

মেট্রোরেল-৬-এর বাস্তবায়নের হার ৭১ দশমিক ৭৩ শতাংশ। ছবি: নিউজবাংলা

মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক যাত্রা এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। গত ২৯ আগস্ট উত্তরা থেকে পল্লবী পর্যন্ত পরীক্ষামূলক যাত্রার মধ্য দিয়ে মেট্রোরেল যুগে প্রবেশের পথে অনেকটাই এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মেট্রোরেল উদ্বোধনের কথা চলতি বছরের ডিসেম্বরে।

এ ছাড়া আরেকটি মেগা প্রকল্প মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট, যা রামপাল পাওয়ার প্লান্ট নামে পরিচিত। কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য ভারতের ন্যাশনাল থারমাল পাওয়ার কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চুক্তি সই করে ২০১০ সালে।

প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি ৬৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৬৯ দশমিক ২০ শতাংশ। পুরো প্রকল্পের ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের মধ্যে এ পর্যন্ত প্রায় ১১ হাজার ৭১ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে।

প্রকল্পটির আওতায় বাগেরহাটের রামপালে একটি ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। প্রকল্পের অবকাঠামো কার্যক্রম শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। বয়লার, চিমনি, পাওয়ার হাউস, জেটি ইত্যাদির নির্মাণকাজ চলছে।

কক্সবাজার জেলার মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের আরেকটি কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। জাইকার অর্থায়নে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশের অন্যতম মেগা প্রকল্প।

প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির অগ্রগতি ৪৯ শতাংশ। এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় পাকশি ইউনিয়নের রূপপুর গ্রামে নির্মিত হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এখন পর্যন্ত অবকাঠামো খাতের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প এটি। এ প্রকল্পের আওতায় দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। প্রতি ইউনিটে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।

রাশিয়ার রোসাটাম করপোরেশনের অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন এ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজের অগ্রগতি ৩৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ।

সরকার চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে প্রকল্পটির জন্য ১৮ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি টাকার প্রকল্পটি ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা।

চলতি বছরের মার্চে প্রকল্পটি পরিদর্শন করার পর আইএমইডি সরকারের অংশের ব্যয় ত্বরান্বিত করার সুপারিশ করেছে এবং এর বাস্তবায়নের গতি বাড়ানোর লক্ষ্যে বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা এবং ক্রয় পরিকল্পনা প্রণয়নে আরও কৌশলী ও তৎপর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

দোহাজারী-রামু-ঘুমধুম রেললাইনের কাজে জুলাই পর্যন্ত ৩২ দশমিক ২২ শতাংশ আর্থিক অগ্রগতি এবং ৬১ শতাংশ ভৌত অগ্রগতি হয়েছে। আইএমইডি ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি সম্পন্ন করার জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

পদ্মা সেতু দ্বিতলবিশিষ্ট। এর ভেতর দিয়ে রেলও চলবে। এ জন্য ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৩৪ হাজার কোটি টাকা।

পদ্মা সেতু চালুর সঙ্গে একই দিনে এর ওপর ট্রেন চলার কথা মাওয়া থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত। কিন্তু এটির আর্থিক অগ্রগতি ৪৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি ৪৩ শতাংশ।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৩৪ হাজার কোটি টাকা। ছবি: নিউজবাংলা

এ ছাড়া শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এমআরটি লাইন-১-এর ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকার প্রকল্প ১ দশমিক ৫ শতাংশ অগ্রগতি অর্জন করেছে। এর মেয়াদ ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

হেমায়েতপুর থেকে রাজধানীর ভাটারা পর্যন্ত চলা ৪১ হাজার ২৩৮ কোটি টাকার এমআরটি-৫ প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৩ দশমিক ১১ শতাংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড জুলাই পর্যন্ত ১ হাজার ২৮১ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৮ সাল পর্যন্ত।

উত্তরা তৃতীয় পর্যায় থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এমআরটি-৪ প্রকল্প জুলাই পর্যন্ত ৭১ দশমিক ৩৩ শতাংশ আর্থিক অগ্রগতি করেছে। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এ পর্যন্ত সেখানে ১৫ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে মেগা প্রকল্পগুলোর জন্য ৫১ হাজার ৩২১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়নের গতি ত্বরান্বিত করার জন্য টাকা ছাড়ে কোনো সমস্যা হবে না বলে বাজেটে বক্তৃতায় উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা মহামারি সত্ত্বেও চীনা ও স্থানীয় শ্রমিকরা এ প্রকল্পে পুরোদমে কাজ করছেন। প্রতিবেদনে বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ রেলওয়েকে মাসভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর