বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের জন্য করোনার টিকার খরচ মেটাতে বড় অঙ্কের অর্থ দিয়েছে বিশ্বখ্যাত পোশাক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান জার্মানির কিক (কেআইকে)।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে শ্রমিকদের নিরাপদ রাখতে অনুদান হিসেবে কিক এই অর্থ দিয়েছে বলে পোশাকশিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, কিক যে অর্থ দিয়েছে, সেটা বিজিএমইএর তহবিলে জমা হয়েছে। সেই অর্থ সরকারের কোভিড-১৯ মোকবিলা সংক্রান্ত টিকার তহবিলে জমা দেয়া হবে। সেখান থেকে সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শ্রমিকদের টিকা প্রদানের ব্যবস্থা করবে।
কিক মোট কত টাকা দিয়েছে জানতে চাইলে রুবেল বলেন, ‘আসলে সেটা বলা যাবে না। কিকই অনুদানের অর্থ প্রকাশ না করতে বলেছে। তারা এ ধরনের অনুদানের বিষয়টি কখনোই প্রকাশ করে না। তবে, যে অর্থ তারা দিয়েছে, তার অঙ্ক বেশ বড়। আমাদের ৪১ লাখ শ্রমিকের একটা উল্লেখযোগ্য অংশের টিকা দেয়ার খরচ এই অর্থ দিয়ে হয়ে যাবে।’
মঙ্গলবার বিজিএমইএর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশের পোশাকশ্রমিকদের জন্য কোভিড-১৯ টিকা ক্রয়ে অনুদান দিয়েছে বিখ্যাত জার্মান ব্র্যান্ড কিক। যেহেতু সরকারিভাবেই টিকা কেনা ও প্রদান করা হচ্ছে, সে কারণে অনুদানের এই অর্থ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের দীর্ঘদিনের অংশীদার হিসেবে কিক তার সামাজিক দায়িত্ববোধের অংশ হিসেবে এই অনুদান দিয়েছে। কিক বাংলাদেশ থেকে পোশাক ক্রয় করা ছাড়াও বহু বছর ধরে বাংলাদেশের সামাজিক প্রকল্পগুলোর সঙ্গে যুক্ত আছে এবং তারা বিদ্যালয় ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মতো বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছে।’
কিক-এর সিইও প্যাট্রিক জাহন বলেন, ‘আমাদের বহু বছরের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার ফল হিসেবে আমরা দেশটিতে, বিশেষ করে দেশটির পোশাকশিল্পে করোনা মহামারির প্রভাব নিয়ে অত্যন্ত সচেতন রয়েছি। এই শিল্পের কর্মীরা আবদ্ধ স্থানে (ইনডোর) কাজ করেন, যেখানে সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। আমি মনে করি, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় টিকা সবচেয়ে বেশি সুরক্ষা দিতে পারে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এই অনুদান দিয়ে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের কর্মীদের করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সবচেয়ে ভালো পন্থায় সুরক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে আমরা ভূমিকা রাখতে চাই।’
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান জার্মান ব্র্যান্ডের এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাকশিল্প সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে অবদান রাখছে। করোনা মহামারির প্রভাবে এই খাতটি ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এই ক্ষতি এখনও আমরা সামলে উঠতে পারিনি। দেশের অর্থনীতিকে সুরক্ষিত রাখার জন্য সকল শ্রমিক ও কর্মচারীদের টিকা পাওয়া অত্যন্ত জরুরি। জার্মান কোম্পানি কিককে এই মহৎ অনুদানের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। তাদের এই অনুদান বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের টিকাদানে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।’
করোনাভাইরাস থেকে শ্রমিকদের সুরক্ষিত রাখতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কাছে টিকা চেয়ে চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।
গত ২৮ জুলাই ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ রাষ্ট্রদূতের কাছে লেখা চিঠিতে এই অনুরোধ করেছিলেন ফারুক। একই সঙ্গে বিশ্বের বড় বড় পোশাক ব্র্যান্ডের বাংলাদেশ প্রধানদের চিঠি দিয়ে একই অনুরোধ করেছিলেন তিনি।