বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অনাগ্রহে বেক্সিমকো সুকুকের আইপিও বাতিলের আশঙ্কা

  •    
  • ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৮:২১

বন্ড ছেড়ে বেক্সিমকোর শেয়ারধারীদের কাছ থেকে ৭৫০ কোটি টাকা ‍তুলতে চেয়েছিল কোম্পানিটি। কিন্তু বিনিয়োগাকারীরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এ অবস্থায় দ্বিতীয় দফায় আবেদনের মেয়াদ বাড়িয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। জানানো হয়েছে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোটা পূরণ না হলে আইপিও বাতিল হবে।

বেক্সিমকো লিমিটেডের ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক সুকুক বন্ড কেনায় কোম্পানিটির শেয়ারধারীরা আগ্রহ দেখাননি বর্ধিত মেয়াদেও। এবার দ্বিতীয়বারের মতো আবেদনের সময় বাড়ানো হয়েছে।

কোম্পানিটি বিদ্যমান শেয়ারধারীদের কাছ থেকে ৭৫০ কোটি টাকা তোলার পরিকল্পনা করে আইপিও আবেদন চেয়েছিল।

প্রথম দফার মেয়াদ শেষ হয় গত ২৩ আগস্ট। কিন্তু ৫৫ কোটি ৬১ লাখ ৫৫ হাজার টাকার জন্য আবেদন জমা পড়ে।

এরপর ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আবেদনের সময় বাড়ানো হয়। এই বর্ধিত সময়ে কেবল একজন নতুন করে আবেদন করেছেন।

এ অবস্থায় তৃতীয় দফায় সময় দিয়ে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বলছে, এই সময়ের মধ্যে সুকুকে আইপিও কোটা পূরণ না হলে তা বাতিল হবে।

সোমবার এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেডের কাছে। যেখানে বলা হয়েছে, ‘শর্ত পূরণ না হলে ২সিসি ক্ষমতাবলে বিএসইসি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে এবং ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সুকুকে পাবলিক অফারের কোটা পূরণ না হলে সেটি বাতিল করা হবে।’

সুকুক আবেদনের সময় বাড়িয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চিঠি

বেক্সিমকো লিমিটেডের কোম্পানি সচিব আসাদ উল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ-সংক্রান্ত কোনো চিঠি এখনও আমাদের কাছে আসেনি। আর আমি বর্তমানে অসুস্থ। ফলে না দেখে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারছি না।’

বেক্সিমকো লিমিটেড দেশে প্রথমবারের মতো ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক বন্ড সুকুক ছেড়ে তিন হাজার কোটি টাকা তুলতে চায়। এতে আকর্ষণীয় যে শর্ত রাখা হয়েছে, তাতে বিনিয়োগকারীদের বেশ লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে।

প্রতিবছর নিশ্চিতভাবে শতকরা ৯ শতাংশ মুনাফা পাবেন বন্ডধারীরা। আর বেক্সিমকো লিমিটেডের লভ্যাংশ ১০ শতাংশের বেশি হলে যতটুকু বেশি হবে ততটুকুর ১০ শতাংশ যোগ হবে সুকুকের লভাংশে।

বিনিয়োগকারীদের জন্য আরও একটি সুবিধা রাখা হয়েছে। এক বছর পর তারা ২০ শতাংশ টাকা তুলে ফেলতে পারবেন অথবা বেক্সিমকোর শেয়ার কিনতে পারবেন।

এই শেয়ার নেয়ার বিষয়টিই বাড়তি মুনাফার সুযোগ তৈরি করেছে বিনিয়োগকারীদের জন্য। এর কারণ, এই শেয়ার পাওয়া যাবে বাজারদরের ২৫ শতাংশ কমে। রেকর্ড ডেটের দুই মাস আগের ভরিত গড়ের ২৫ শতাংশ কমে শেয়ার পাওয়া যাবে। এতে করে শেয়ারের দর যা-ই হোক না কেন, ৩৩ শতাংশ মুনাফার সুযোগ আছে এই প্রক্রিয়ায়।

এই সুবিধার কারণে কেউ যদি প্রতিবছর তার অবশিষ্ট অর্থের ২০ শতাংশ টাকায় শেয়ার নিয়ে কেবল বিক্রি করে দেন, তাহলে তিনি মোট ৬৮ হাজার টাকা পেতে পারেন। আবার কেউ যদি পাঁচ বছর কেবল মুনাফা নিয়ে শেষে একবারে পুরো টাকার শেয়ার নেন, তাহলে তিনি বাড়তি আরও ৩৩ হাজার টাকার মতো লাভ করতে পারবেন। তখন তার এক লাখ টাকায় প্রকৃত ‍মুনাফা থাকতে পারে ৭৮ হাজার টাকা।

মুনাফার এই হার যে কোনো সঞ্চয়ী স্কিম তো বটেই, এমনকি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের চেয়ে বেশি।

এর পরেও বেক্সিমকোর সুকুক বন্ডে কেন শেয়ারধারীরা আগ্রহ দেখাননি, তা নিয়ে আলোচনা আছে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী আইপিও ছাড়ার পর ২ হাজার ২৫০ কোটি টাকার প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে সংগ্রহ করবে।

এই টাকায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ২০০ মেগাওয়াটের আর পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৩০ মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুৎ করবে বেক্সিমকো লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বেক্সি পাওয়ার। এই কোম্পানিটির ৩৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক বেক্সিমকো লিমিটেড।

সামনে এসেছে পুরোনো ইস্যু

বেক্সিমকোর সুকুক বন্ড নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের মধ্যে উচ্ছ্বাস থাকলেও বিনিয়োগকারীরা সামনে আনছেন পুরোনো একটি প্রসঙ্গ।

বেক্সিমকো গ্রুপের বন্ধ হয়ে যাওয়া কোম্পানি জিএমজি এয়ারলাইনসের প্লেসমেন্ট শেয়ার কিনে বহু মানুষ টাকা ফেরত পাননি। ফলে একই গ্রুপের বন্ডে অনিশ্চয়তা আছে বলে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গ্রুপে প্রচার চলছে। এটিও বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত হওয়ার একটি কারণ বলে ধরা হচ্ছে।

আবার বন্ডটি পুঁজিবাজারে লেনদেন হবে বলে যেকোনো সময় কেনা যাবে। ফলে তাড়াহুড়ো নেই। আর এখন বাজার চাঙা। যেকোনো এক দিনে একটি কোম্পানির শেয়ার দরই ১০ শতাংশ বাড়ছে। ফলে বছর শেষে ৯ শতাংশ মুনাফা আর শেয়ার নিয়ে বাড়তি কিছু মুনাফায় আগ্রহ কম থাকবে, এটাও স্বাভাবিক। বাজারে মন্দাভাব থাকলে পরিস্থিতি অন্য রকম হতে পারত বলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের ধারণা।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক দেবব্রত কুমার সরকার মনে করেন, বিষয়টি নতুন বলে এখনও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিভ্রান্তি আছে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সুকুক নিয়ে হতাশার কিছু নেই। বিশেষ করে বাংলাদেশ এটি একেবারেই নতুন একটি প্রোডাক্ট হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা সেটি খুব ভালো ভাবে আয়ত্তে নিতে পারেনি।‘

তিনি বলেন, ‘এছাড়া যখন বলা হয় এটি কোনো কোম্পানির আইপিও বা প্রাথমিক গণপ্রস্তাব, তখন কিন্তু বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কোনো সন্দেহ থাকে না। কিন্তু যখন বলা হচ্ছে এটি একটি বন্ড, তখন কিন্তু কেউ আগ্রহী হচ্ছে না। ফলে এই ধরনের প্রোডাক্ট বাজারে নতুন হওয়ায় এমনটি হয়েছে।’

সুকুককে এ সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ভালো একটি প্রোডাক্ট উল্লেখ করে দেবব্রত বলেন, ‘এটি পুঁজিবাজারে লেনদেন হবে। ফলে দাম যখন বাড়বে এবং এটি থেকে যখন বিনিয়োগকারীরা মুনাফা পেতে শুরু করবে, তখনই সুকুক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের তালিকায় চলে আসবে।’

শেয়ারধারী ছাড়া বাকিরা কীভাবে আবেদন করবেন

সুকুকটির প্রতিটি ইউনিটের অভিহিত মূল্য বা ফেসভ্যালু নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা। বন্ডটির ন্যূনতম লট হবে ৫০টি ইউনিটে। একজন বিনিয়োগকারী ন্যূনতম ৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে পারবেন এই বন্ডে।

সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল ওয়েবসাইটে এ-সংক্রান্ত আবেদন ফরম দেয়া আছে। ফরম পূরণ করে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের জন্য আবেদন করা যাবে। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীরা নিজ নিজ ব্রোকারেজ হাউসের মাধ্যমে ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে সুকুক বন্ডের আবেদন করতে পারবে।

বেক্সিমকোর এই সুকুকের ইস্যু ম্যানেজার, অ্যারেঞ্জার ও অ্যাডভাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্সেস লিমিটেড এবং অগ্রণী ইক্যুইটি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। আর ট্রাস্টি হিসেবে আছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)।

কেউ যদি এই সময়ের মধ্যে বন্ড কিনতে না পারেন, তার জন্য সুযোগ একেবারে শেষ হয়ে যাচ্ছে না। এই বন্ড শেয়ারের মতোই পুঁজিবাজারে লেনদেন হবে। ফলে যে কেউ এটি যে কোনো সময়, যে কোনো পরিমাণে কিনতে পারবেন।

এ বিভাগের আরো খবর