চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে তার মরদেহ নেই বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী মিথ্যা বলছেন। জিয়ার লাশ জড়িয়ে তার স্ত্রী-সন্তানের কান্নার ছবিও রয়েছে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে মঙ্গলবার বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) আয়োজিত ‘ইতিহাস বিকৃতি, ঘৃণার চাষ ও গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক আলোচনায় এসব কথা বলেন মোশাররফ হোসেন।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘তার লাশের পাশে আত্মীয়-স্বজন স্ত্রী-সন্তান কান্না করছেন এমন ছবিও আছে। তার জানাজায় লাখো মানুষ দাঁড়িয়েছিল। সবাইকে কী আপনি (প্রধানমন্ত্রী) মিথ্যা বলতে চান। আপনি তো সেখানে ছিলেনই না, অথচ বলছেন লাশ নেই।’
গত ২৬ আগস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়া বা তারেক জিয়া কি বলতে পারবে তারা তাদের (স্বামী ও) বাবার লাশ দেখেছে? গুলি খাওয়া লাশ তো দেখাই যায়। তারা কি দেখেছে কখনো বা কেউ কি কোনো ছবি দেখেছে কখনো? দেখেনি।
‘কারণ ওখানে কোনো লাশ ছিল না। ওখানে একটা বাক্স আনা হয়েছিল। সেখানে ওই বাক্সের ফাঁক দিয়ে যারা দেখেছে, সেই এরশাদের মুখ থেকেই শোনা, কমব্যাট ড্রেস পরা ছিল। জিয়াউর রহমান তখন প্রেসিডেন্ট। সে তখন কমব্যাট ড্রেস পরে না। এটা কি বিএনপির লোকরা জানে না?’
মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘৪০ বছর পরে প্রধানমন্ত্রীর মুখে শুনলাম জিয়াউর রহমানের লাশ নাকি সেখানে নাই। হত্যার পর জিয়াউর রহমানকে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পাশে একটি পাহাড়ে পুঁতে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকে খুঁজে বের করে চট্টগ্রামের সিএমএইচে নিয়ে জিয়াউর রহমানের লাশ ময়নাতদন্ত করা হয়।
‘ময়নাতদন্ত করেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল তোফায়েল, সেখানে সাক্ষী আছে। এরপর তার মরদেহ সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঢাকায় নিয়ে আসেন। তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি এবং তিন বাহিনীর প্রধান সেই লাশ গ্রহণ করেন।’
মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘প্রকৃত ইতিহাসকে জানতে হবে আমাদের। কীভাবে এগুলো অস্বীকার করবেন। জিয়াউর রহমানকে নিয়ে এ পর্যন্ত যত কুরুচিপূর্ণ মিথ্যা কথা বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী দায়িত্বশীল ব্যক্তি হয়ে এ ধরনের বক্তব্য রাখতে পারেন না। রাজনীতিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য এ ধরনের বক্তব্য তিনি রাখছেন। জাতিকে আপনি বিভ্রান্ত করতে পারেন না। এটা ঠিক নয়, জাতি এই বিষয়গুলো জানে।
জিয়াউর রহমান পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কখনও গুলি চালিয়েছে এমন কোনো নজির নেই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন মন্তব্যেরও সমালোচনা করেন মোশাররফ।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান যদি যুদ্ধ না করতেন তাহলে শেখ হাসিনার পিতার শাসনামলে বীর উত্তম উপাধি পেলেন কীভাবে? জীবিত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তখন তাকে বীর উত্তম উপাধি দেয়া হয়েছিল। তারা সম্মুখ যুদ্ধ করে এটা অর্জন করেছেন। এটাও কেড়ে নেয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করেছে।’
মোশররফ হোসেন বলেন, ‘মানুষের মনে প্রশ্নটা আসবে, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানী, উনি কী কখনো বন্দুক দিয়ে নিজে যুদ্ধ করেছেন? বিশ্বযুদ্ধ যে হয়েছে, তার যে সেনাপ্রধান ছিলেন তিনি কী নিজে গিয়ে যুদ্ধ করেছেন?’
আলোচনায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘কোনো সত্য চাপা রাখা যায় না। জিয়াউর রহমানকে নিয়ে যারা এখন বিতর্ক তৈরির চেষ্টা করছেন, তারা ইতিহাস তৈরি নয় তারা আমার আপনার দৃষ্টি সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। কারণ, দেশে একটা সরকার আছে, যার কোনো ভিত্তি নেই। গণতন্ত্রের কথা বলে তারা ভোট করেনি। এটা একটা দখলদার সরকার।
আলোচনা সভায় কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরও অংশ নেন।